রেজাউল করিম, চট্টগ্রাম : রাঙ্গামাটিতে ভ্রমণ পিপাসুদের এখন প্রধান আকর্ষণ ‘হ্যাপি আইল্যান্ড’। নির্মিত হয়েছে কাপ্তাই লেকের মধ্যখানে । এটি উন্মুক্ত করার পর থেকে প্রতিদিনই ভিড় করছেন শত শত পর্যটক। কাপ্তাই লেক ঘেরা রাঙ্গামাটিতে সবুজ প্রকৃতি আর লেকের পাশাপাশি পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রে ছিল একমাত্র ঝুলন্ত ব্রিজ। এখন সেখানে যোগ হয়েছে সেনাবাহিনীর উদ্যোগে নির্মিত এই ‘হ্যাপি আইল্যান্ড’। চারপাশে লেকের স্বচ্ছ জলরাশির মধ্যখানে ৪৫ শতক দ্বীপ এলাকায় এটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় দেড় কোটি টাকা। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩০৫ ইনফ্যানট্রি বিগ্রেডের উদ্যোগে প্রায় দুই বছরের দীর্ঘ প্রচেষ্টায় রাঙ্গামাটি জেলার ভেদভেদি এলাকা সংলগ্ন কাপ্তাই লেকে নির্মিত এই আইল্যান্ডের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় গত ২৫ এপ্রিল। উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল জাহাঙ্গীর কবির তালুকদার। উদ্বোধনের পর থেকেই এখানে পর্যটকদের ঢল নামে। যা আছে হ্যাপি আইল্যান্ডে : এই কৃত্রিম আইল্যান্ডটিতে প্রবেশের জন্য প্রথমে রাঙামাটি ভেদভেদি এলাকায় সেনাবাহিনীর হলিডে রিসোর্টে প্রবেশ করতে হবে। এর জন্য প্রবেশ ফি ৫০ টাকা। দৃষ্টিনন্দন প্রাকৃতিক পরিবেশে সেনা করিডোরের মধ্যে সবুজ ঘাসে মোড়ানো এলাকাটা সবার মন কাড়বে এক পলকেই।
এখানে আছে কফিশপ, ফুলের বাগান, মৎস্য কন্যা ভাস্কর্য, রিসোর্ট এবং লেকের পাড়ে সারি সারি স্পিডবোট, প্যাডেল বোট ও ফ্যামিলি বোট। চাইলেই এসব বোট ভাড়া নিয়ে প্রিয়জনদের নিয়ে কাপ্তাই লেকে বিচরণ করা যাবে। হ্যাপি আইল্যান্ডটি নির্মিত হয়েছে একটি বড় মাছের আদলে। রিসোর্ট থেকে এখানে যেতে জনপ্রতি ১৫০ টাকা ফি দিয়ে টিকেট সংগ্রহ করতে হবে। এরপর সেনাবাহিনীর নিজস্ব বোট লেকের মাঝখানে অবস্থিত মনোরম হ্যাপি আইল্যান্ডের ওয়াটার ওয়ার্ল্ডে পৌছে দেবে। চারপাশে স্বচ্ছ শীতল জলরাশি আর মধ্যখানে সুবিশাল দৃষ্টিনন্দন ওয়াটার পার্ক। এখানে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ওয়াটার রাইড, লেকভিউর সাথে সুইমিং পুলের সুবিধা, বোট রাইড এবং নজর কাড়া নির্মাণ শৈলীর নানা বিনোদন মাধ্যম। শিশু কিশোর থেকে শুরু করে সব বয়সী নারী পুরুষ এখানে নির্বিঘ্নে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সময় কাটাতে পারবেন। হ্যাপি আইল্যান্ড ঘুরে এসে ইয়াসিন আরাফাত চৌধুরী মুন্না নামের একজন পর্যটক জানান, আইল্যান্ডটি কাপ্তাই লেক আর প্রকৃতিপ্রেমি পর্যটকদের তৃষ্ণা মিটাবে নিঃসন্দেহে। এখানে একেক সময় একেক রংয়ে আর ঢংয়ে সাজে পুরো আইল্যান্ড। এখানের রোদ্দুর দিনের চোখ ধাধানো ঝলমলে রূপালী সৌন্দর্য, টিপটিপ বৃষ্টি দিনের বৃষ্টিস্নাত সাদাকালো সৌন্দর্য, পূর্ণিমা রাতের মায়াময় জ্যোৎস্না সৌন্দর্য, মেঘলা দিনের বিরহী সৌন্দর্য আর পড়ন্ত বিকালের শীতল আর ভাবুক সৌন্দর্যে ডুব দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
রাঙ্গামাটি সেনা রিজিয়ন সদর দপ্তর কর্তৃপক্ষ জানায়, সম্পুর্ণ সেনাবাহিনীর অর্থায়নে রাঙ্গামাটির পর্যটনকে আরো সমৃদ্ধ করতে ‘হ্যাপি আইল্যান্ড’ বিনোদন স্পটটি গড়ে তোলা হয়েছে। বিনোদনের ক্ষেত্রে স্পটটি ভ্রমণ পিপাসুদের আরও বেশি আনন্দ জোগাবে। স্পটটি সম্পূর্ণ শৃংখলা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যেই সবার জন্য উন্মুক্ত। যেভাবে যাবেন: চট্টগ্রাম শহর থেকে রাঙ্গামাটির দুরত্ব ৭৫ কিলোমিটার। যাদের ব্যাক্তিগত গাড়ি আছে তারা চট্টগ্রাম মহানগরী থেকে অক্সিজেন হাটহাজারী সড়ক হয়ে রাঙ্গামাটি যেতে পারেন। অথবা যাওয়া যাবে চট্টগ্রাম থেকে কাপ্তাই সড়ক হয়ে কাপ্তাই ভেদভেদি সড়ক পথে। যারা পাবলিক গাড়িতে যেতে চান তারা চট্টগ্রামের অক্সিজেন বাস স্টেশন থেকে সরাসরি সার্ভিস পাহাড়িকা বাস অথবা লোকাল বাসে রাঙ্গামাটি যেতে পারেন। পাহাড়িকা বাসে গেলে চট্টগ্রাম থেকে সময় লাগবে দেড় ঘন্টা। আর লোকাল বাসে সময় লাগতে পারে দুই থেকে আড়াই ঘন্টা। হ্যাপি আইল্যান্ডে যেতে হলে রাঙ্গামাটি শহরের ঢোকার পূর্বে ভেদভেদি এলাকায় নামতে হবে বাস থেকে। আবার ঢাকা থেকে রাঙ্গামাটি এসি, নন এসি দুই ধরনের সরাসরি বাস সার্ভিস রয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে রাঙ্গামাটির বাস ভাড়া বিরতিহীন ১০০ থেকে ১২০ টাকা। লোকাল ৮০ টাকা। ঢাকা থেকে সরাসির রাঙ্গামাটি নন এসি ৬০০ টাকা, এসি ১০০০ টাকা। রাইজিংবিডি/চট্টগ্রাম/২৮ আগস্ট ২০১৮/রেজাউল/শাহ মতিন টিপু