সারা বাংলা

‘জমি আছে ঘর নাই’ প্রকল্পে হাসি ফুটেছে রূপসার ১৪৬ পরিবারে

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা: খুলনার রূপসায় ঘর পেয়ে হাসি ফুটেছে ১৪৬ দরিদ্র পরিবারে। ‘জমি আছে ঘর নাই’ প্রকল্পের আওতায় সরকারের পক্ষ থেকে তৈরি করে দেওয়া হয়েছে এই ১৪৬টি পাকা ঘর । লাখ টাকার বাজেটে সেমি পাকা ঘরের সাথে দেওয়া হয়েছে একটি টয়লেটও। মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়ে দরিদ্র পরিবারগুলো এখন আনন্দে আত্মহারা। পাঁচ বছর বয়সী ছেলেকে নিয়ে কোন রকমে তিন সদস্যের সংসার চলে রূপসা উপজেলার তালতলা গ্রামের ইলেকট্রিক মিস্ত্রি বরুণ হালদারের। সংসারের ব্যয় নির্বাহে তার স্ত্রীও অন্যের বাড়িতে কাজ করেন।  অর্থাভাবে থাকার জন্য ভালো ঘর তৈরি সম্ভব হয়নি তাদের। বৃষ্টি হলেই পানিতে ভেসে যেত ঘরের মেঝে। ঝড়-বৃষ্টির দিনে ঘুমানোই দায় হতো। এখন তার ঘর হয়েছে, সঙ্গে যার পাকা টয়লেট। আজ স্ত্রী-সন্তান নিয়ে পাকা ঘরে থাকার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে তার। খুলনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আবু সায়েদ মো. মনজুর আলম বলেন,  ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশে কেউ গৃহহীন থাকবে না। এজন্য আশ্রয়ন প্রকল্প ও গুচ্ছগ্রাম তৈরি করে ভূমিহীনদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কিন্তু যাদের কিছু জমি আছে অথচ ভাল ঘর নেই,  দরিদ্রতার কারণেই ঘর তৈরি করতে পারছে না তাদের জন্য ‘জমি আছে ঘর নেই’ নামে এক লাখ টাকায় একটি ঘর তৈরি করে দেওয়ার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। তারই আলোকে রূপসা উপজেলায় এই ১৪৬টি ঘর।’ খুলনা জেলার নয়টি উপজেলায় ‘জমি আছে ঘর নেই’ প্রকল্পের আওতায় ৩ হাজার ৭১৮টি এবং ভূমিহীনদের জন্য আশ্রয়ন প্রকল্পে এক হাজার পরিবারের জন্য ঘর তৈরি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানালেন আবু সায়েদ মো. মনজুর আলম। রূপসা উপজেলার তালতলা গ্রামের ৫ সন্তানের জননী ছবেদা বেগম বলেন, ‘কখনো ভাবিনি দালান ঘরে ঘুমাবো। সারাদিন বাড়ি বাড়ি কাপড় বিক্রি করে রাতে ঘরে ফিরে মাটির তৈরি ঘরে থাকতে হতো, পানি পড়লে কাদা হয়ে যায়। স্বপ্ন ছিল পাকা ঘরে ঘুমানোর। সেই স্বপ্ন পূরণ করলেন প্রধানমন্ত্রী।’ দৈনিক মজুরিভিত্তিক কাজ করেন এই গ্রামেরই মলয় দাস। একযুগের বেশি সময় ধরে পৈত্রিক সম্পত্তির উপর ভাঙ্গা ঘরে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস করে আসছেন। আশা ছিল দালান ঘরে পরিবার নিয়ে থাকার। আশা করলেও আয়ের সাথে পেরে উঠতেন না।  কিন্তু বর্তমান সরকারের জনবান্ধব পদক্ষেপে আশা পূরণ হয়েছে তার। রূপসার তালতলা গ্রাম ও কাজদিয়া গ্রাম পরিদর্শনকালে কথা হয় সেখানকার এমন ঘর পাওয়া আরও কয়েকজনের সাথে। উপজেলার ১৪৬টির মধ্যে ওই গ্রামেই রয়েছে ১২টি ঘর। কাজদিয়া গ্রামের তিন সন্তানের জনক নবকুমার সেন এতোদিন ভাঙ্গা ঘরে বসবাস করলেও আজ তার বাড়িতে ইটের দেয়াল সমৃদ্ধ সেমিপাকা টিনসেড ঘর। সাথে টয়লেটও। এটি তার জন্য একটি বড় পাওয়া। তিনি বললেন, ‘এখন একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই হলো।’ এজন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কৃতজ্ঞতা জানান। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইলিয়াছুর রহমান জানান, প্রকল্পের আওতায় রূপসায় ৫টি ইউনিয়ন থেকে ১৪৬টি পরিবারের তালিকা  প্রেরণ করা হয়েছিল। তাতে ১৪৬টি ঘর অনুমোদন হয়ে নির্মাণের জন্য ১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এক লাখ টাকা করে যে বাজেট সরকার থেকে দেওয়া হয়েছে তা দিয়েই নির্দিষ্ট ডিজাইনের বাইরে গিয়ে একটু ভিন্ন কায়দায় তৈরি করা হয়েছে রূপসা উপজেলার ঘরগুলো। গ্রামের  হতদরিদ্র মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানোর এটিই ভাল সুযোগ। তাই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে টিনের বেড়ার পরিবর্তে ইটের দেয়াল এবং সংযুক্ত টয়লেট করার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। রূপসা উপজেলা চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন বাদশা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চিন্তা থেকেই তৃণমূল পর্যায়ের অসহায় পরিবারগুলোকে স্বাবলম্বী করে তোলার জন্য ঘর তৈরির এ কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। মাত্র এক লাখ টাকায় একটি রুম হলেও ইটের দেয়াল সংযুক্ত টয়লেট  ঘর তৈরি করে দেওয়ায় দৃষ্টান্ত স্থাপন হয়েছে।’ রাইজিংবিডি/খুলনা/১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮/মুহাম্মদ নূরুজ্জামান/টিপু