সারা বাংলা

রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স করতে চান রিকশাচালক মাজেদুল

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: নীলফামারীর মাজেদুল ইসলম এখন চট্টগ্রাম নগরীতে রিকশা চালান। শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি যে, রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স করতে চান এই রিকশাচালক মাজেদুল। এ বছর এইচএসপি পাশ করেছেন নীলফামারী ডিগ্রি কলেজ থেকে। এখন অনার্স ভর্তি হওয়ার অপেক্ষায়। ইচ্ছে তার রাষ্ট্রবিজ্ঞান পড়ার। যদি এই সাবজেক্টে সুযোগ না পান তাহলে বিষয় হিসেবে বাংলা-ই পছন্দ বলে জানালেন মাজেদুল। চট্টগ্রাম মহানগরীর ব্যস্ততম প্রবর্তক মোড় এলাকায় যাত্রীর খোঁজে অপেক্ষমান মাজেদুল ইসলামের দেখা হলো মঙ্গলবার রাতে। আর তখনই জানা গেল তার এই ইচ্ছের কথা। মাজেদুল জানালেন এই রিকশা চালানোর আয়ে পড়ালেখা ও সংসারের চাকা দু’টোই চলছে তার। সংসার বলতে তার বাবা-মা। যারা নীলফামারীতেই আছেন। অন্যের জমিতে কৃষি কাজ করে সংসারের অন্ন যোগান বাবা। এখন সেখানে বাবার কষ্ট লাঘবে যতটুকু সম্ভব অর্থের যোগান দিচ্ছেন একমাত্র সন্তান মাজেদুল। আর এজন্যই রিকশার হ্যান্ডেল ধরেছেন শক্ত হাতে। আর যাত্রী নিয়ে ছুটে চলছেন রাত-বিরাতে। মাজেদুল জানালেন, গ্রামাঞ্চলে নিয়মিত কাজ না পাওয়ায় পড়ালেখায় আগ্রহী মাজেদুলের পড়ার খরচ যোগানো তার বাবার পক্ষে সম্ভব নয়। বাধ্য হয়েই এসএসসি পাশ করার আগেই দিনমজুরের কাজ শুরু করেন মাজেদুল। নিজের পড়ার খরচ নিজে আয় করে বেশ ভালোভাবেই স্থানীয় উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং নীলফামারী ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। এবার মাজেদুল পড়তে চান রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক। এরপর একই বিষয়ে তার মাস্টার্স করতে চান তিনি। রিকশা চালানো প্রসঙ্গে মাজেদুল বলেন, ‘আমাকে যেহেতু কাজ করেই পড়ালেখা করতে হবে তাই আমি কোন কাজকেই ছোট করে দেখিনা।’ জানান, চট্টগ্রামে টানা ৩৬ দিন রিকশা চালিয়ে সব খরচ বাদে সঞ্চয় করেছেন ৩৩ হাজার টাকা। এই টাকা তিনি বাবা মায়ের হাতে তুলে দিয়েছেন। ভাল আয় হওয়ায় চট্টগ্রামে এখন নিয়মিত রিকশা চালাচ্ছেন। মাজেদুল বলেন, ‘চট্টগ্রামে প্রতিদিন রিকশা চালিয়ে আমার আয় ১০০০ থেকে ১২শ টাকা পর্যন্ত। সব খরচ বাদে দৈনিক তার কিছু টাকা সঞ্চয়ও থাকছে।’ রিকশা চালানোয় পড়ালেখাতে ব্যাঘাত ঘটছে কি-না এমন প্রশ্নের উত্তরে মাজেদুল জানান, পছন্দের বিষয়ে অনার্সে ভর্তি হতে পারলেই নিয়মিত ক্লাস করবেন। পড়ালেখার খরচের জন্য ইতিমধ্যেই তার পর্যাপ্ত টাকা সঞ্চয় হয়েছে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে সুযোগ না পেলে বাংলায় অনার্স মাস্টার্স করার স্বপ্ন দেখছেন এই তরুণ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক আইডিও আছে তার। মাজেদুল বলেন, ‘ফেসবুক আইডি থাকলেও নিয়মিত অনলাইনে থাকিনা। এতে একদিকে পড়ালেখার ক্ষতি হয়, অপরদিকে রিকশা চালানোতে ব্যাঘাত ঘটে। তাই মাঝে মধ্যে আইডিতে ঢু মারলেও আবার কর্মব্যস্ত হই।’ চট্টগ্রামে মাজেদুল থাকেন নগরীর মুরাদপুর এলাকার রিকশাচালকদের একটি মেসে। ফেসবুকে চ্যাটিং কিংবা প্রেম করেন কি-না এমন প্রশ্নের উত্তরে মাজেদুল শব্দ করে হাসেন, বলেন- ‘চ্যাটিং করে নষ্ট করার মতো সময় আমার নেই। আগে নিজেকে মানুষ হিসেবে তৈরি করতে চাই।’

 

 

রাইজিংবিডি/চট্টগ্রাম/১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮/রেজাউল/টিপু