সারা বাংলা

শিশু প্রিয়াংকার ওপর ভয়ঙ্কর নির্যাতনে ৪ জন গ্রেপ্তার

ফেনী সংবাদদাতা : ফেনীর সদর উপজেলায় শিশু প্রিয়াংকার ওপর নির্যাতনের ঘটনায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে মঙ্গলবার রাতে শর্শদী এলাকার জঙ্গল থেকে নির্যাতনকারী শাহেনা বেগম শাহেনীকে গ্রেপ্তার করেছে। এ সময় তার সহযোগী মুন্নি আক্তারকে গ্রেপ্তার করা হয়। আজ বুধবার সকালে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কথিত কবিরাজ অমৃত দাস ও মো. আবদুল্লাহকে। এ ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শিশু নির্যাতনের ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিকেলে ফেনীর পুলিশ সুপারের কনফারেন্স রুমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার এস এম জাহাঙ্গীর আলম সরকার সাংবাদিকদের জানান, এক বছর বয়সে সিলেটের সুফিয়া নামে এক মহিলার থেকে প্রিয়াংকাকে দত্তক নেয় শাহেনী। গত ১৫ দিন আগে ঢাকা থেকে বাড়িতে বেড়াতে আসে শাহেনী। তখন প্রিয়াংকার অদ্ভুত আচরণ দেখে শর্শদী বাজারের লন্ড্রী দোকানদার অমৃত দাস ও আবদুল্লাহ নামে দুই কবিরাজ প্রিয়াংকাকে ঝাঁড়-ফুক ও মোমবাতির ছ্যাকা দিয়ে চিকিৎসা দেন এবং পরবর্তীতে কবিরাজদের কথামতো শাহেনীও তাকে প্রতিদিন মোমের ছ্যাকা দিতেন। গত মঙ্গলবার প্রিংয়াকা বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে পাশের বাড়ির একজন তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। এ ঘটনায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে শাহেনীসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে। আসামি শাহেনী বাংলা চলচ্চিত্রে এক সময়ে অভিনয় করতেন। তার সঙ্গে শিশু প্রিয়াংকা পালিত মেয়ে হিসেবে থাকত। মেয়েটির শরীরে মোমবাতির আগুন দিয়ে ছ্যাকা দিয়ে নির্যাতন চালাতেন শাহেনী। শিশুটির আর্তচিৎকারে হাসতেন অভিনেত্রী শাহেনী। সরেজমিন দেখা যায়, মেয়েটির সারা শরীর প্লাস্টিকের, মোমবাতির আগুনে ছিদ্র হয়ে গেছে। তার গায়ে আগুনের ছ্যাকা দিয়ে জ্বিন তাড়ানোর নামে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করতেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। নির্যাতনের শিকার শিশু প্রিয়াংকা ফেনী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খবর পেয়ে পুলিশ অভিযান চালিয়ে তার ওপর নির্যাতনের আলামত খুঁজে পেয়েছে। গ্রেপ্তারের পর নির্যাতনকারী শাহেনী প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে দোষ স্বীকার করে বলেছেন, তার ওপর জ্বিন ভর করত, সেই সময় প্রিয়াংকার শরীরে আগুনের ছ্যাকা দিলে জ্বিন চলে যেত। আর সেই কারণে তাকে তিনি আগুনের ছ্যাকা দিতেন। তিনি আরো জানান, বাংলা চলচ্চিত্রের ৪৫টি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। বিগত চার বছর অভিনয় থেকে দূরে সরে এসেছেন। এ ঘটনার খবর পেয়ে ফেনীর পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম সরকার ফেনী আধুনিক সদর হাসপাতালে ছুটে যান। এ সময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ। শর্শদী ইউপি চেয়ারম্যান জানে আলম ভূঞা জানান, মেয়েটি ওই এলাকার চলচ্চিত্র অভিনেত্রী শাহেনী বেগমের বাসায় থাকতো। শাহেনী পরিবার নিয়ে ঢাকায় থাকলেও মাঝে মধ্যে বাড়িতে আসতেন। ওই এলাকার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, শাহেনী তার বোন, বাংলা চলচ্চিত্রের পার্শ্বচরিত্রের অভিনেত্রী ছিল। বেপরোয়া জীবনযাপনের কারণে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে তার সঙ্গে যোগাযোগ নেই। পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন শাহেনী। স্বামীর সঙ্গেও তার যোগাযোগ নেই। ফেনী সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ফয়জুল কবির বলেন, শিশুটির শরীরে অসংখ্য পোড়া ক্ষতস্থান রয়েছে। তারা তাকে উন্নত চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। যেহেতু মেয়েটির স্বজন নেই, সেহেতু তারাই মেয়েটির দেখাশোনা করছেন।  ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ শিশু নির্যাতনের ঘটনায় শাহানা আক্তার শাহেনীসহ চারজনকে গ্রেপ্তারের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে সদর উপজেলার শর্শদী ইউনিয়নের পাঠানবাড়ী সংলগ্ন সড়কে ক্ষত-বিক্ষত শরীর নিয়ে শিশু প্রিয়াংকাকে কাঁদতে দেখে তাকে বাড়ি নিয়ে যান জোহরা আক্তার। পরে স্বামী জাহাঙ্গীর আলমের পরামর্শে তাকে ফেনী সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। রাইজিংবিডি/ফেনী/২৪ অক্টোবর ২০১৮/সৌরভ পাটোয়ারী/বকুল