সারা বাংলা

পরিবহন ধর্মঘট: খুলনায় সবজির দাম বেড়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা : দুই দিনের পরিবহন ধর্মঘটের প্রভাব পড়েছে খুলনা নগরীর বাজারে। প্রায় সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে কাঁচা সবজির দাম বেড়েছে। পরিবহন সংক্রান্ত আইন সংশোধনের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো সোমবার সারা দেশে পরিবহন ধর্মঘট অব্যাহত থাকায় জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক সড়কে যানবাহন চলাচল করছে না। অ্যাম্বুলেন্স ও ইজিবাইকসহ ব্যক্তিগত যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে পরিবহন শ্রমিকরা। যেসব চালক যানবাহন নিয়ে পথে নামছেন তাদের ধরে মুখে পোড়া মবিল মাখিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সড়ক-মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে বেরিকেড দিয়ে রাখা হয়েছে। নগরীর বিভিন্ন বাজারে ফুলকপি প্রতিকেজি ৫৫-৬০ টাকা, শিম ৮০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ২৮-৩০ টাকা, পটল ২৫-৩০ টাকা, পেঁপে মানভেদে ১৫-২০ টাকা, বেগুন মানভেদে ৪০-৫০ টাকা, ঢ়েঁড়স ৪০ টাকা, আলু ২৫ টাকা, কাঁচা মরিচ ৬০ টাকা, দেশী পেঁয়াজ মানভেদে ৪০-৫০ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ মানভেদে ২৫-৩০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। অথচ একদিন আগেও প্রতি কেজি ফুলকপি ৫৫-৫৬ টাকা, শীতকালীন শিম ৭৫-৭৬ টাকা, বরবটি শিম ৭৫-৭৮ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ২৮ টাকা, পটল ২৫-২৬ টাকা, পেঁপে মানভেদে ১৫-১৬ টাকা, বেগুন মানভেদে ৪০-৪৫ টাকা, ঢ়েঁড়স ৩৫-৩৬ টাকা, আলু ২৫ টাকা, কাঁচা মরিচ ৬০ টাকা, দেশী পেঁয়াজ মানভেদে ৪০-৫০ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজ মানভেদে ২৫-৩০ টাকা দরে বিক্রি হয়। নগরীর সন্ধ্যা বাজারের ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম বলেন, বাজারে পর্যাপ্ত সবজির সরবরাহ আছে। তবে পরিবহন ধর্মঘটের কারণে দাম সামান্য বেড়েছে। ধর্মঘট শেষ হয়ে গেলে সবজির দাম আগের মতো নেমে যাবে। আরেক সবজি ব্যবসায়ী ইমাম হোসেন মোল্লা বলেন, সোনাডাঙ্গা ট্রাক টার্মিনাল পাইকারি কাঁচা বাজারে সবজির দাম একটু বেশি। পরিবহন ধর্মঘটের কারণে হয়ত সবজির দাম বেড়েছে। ধর্মঘট শেষ হলে সবজির দাম আগের অবস্থায় ফিরে আসবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। ধর্মঘটের কারণে চাল, ডাল, তেলসহ সব নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যবাহী পরিবহন, বিশেষ করে ট্রাক খুলনায় ঢুকতে পারছে না। যে কারণে ধর্মঘট শেষ হওয়ার পরও সংকটের কারণে দাম বৃদ্ধির আশংকা রয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। খুলনার রাষ্ট্রায়ত্ত তেল ডিপো পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা থেকে সব ধরনের জ্বালানি তেল সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ট্যাংকলরি শ্রমিকরাও ধর্মঘটে যোগ দেওয়ায় তেল লোড-আনলোড বন্ধ হয়ে গেছে। যে কারণে পাম্পে ইতিমধ্যে জ্বালানি তেলের সংকট তৈরি হয়েছে। ট্রাক চলাচল বন্ধ থাকায় মোংলা বন্দর থেকে সার সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। পিকআপ ভ্যানসহ পরিবহন বন্ধ থাকায় খুলনাঞ্চল থেকে হিমায়িত চিংড়ি সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। সঠিক সময়ে পণ্য গন্তব্যে পৌঁছাতে না পেরে ব্যবসা বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে এসেছে। বিশেষ করে পঁচনশীল পণ্য নষ্ট হওয়ার আশংকা রয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সরেজমিন দেখা গেছে, খুলনার আন্তঃজেলা সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল থেকে অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার বাস ছেড়ে যায়নি। সারি সারিভাবে দাঁড়িয়ে আছে বাসগুলো। শিববাড়ি ও রয়্যালের মোড়ের কাউন্টারে সামনে বাস নেই। কাউন্টার বন্ধ রয়েছে। স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থীদের বহনকারী মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচলে বাধা দিচ্ছে শ্রমিকরা। হরতালের মতো সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল এলাকা ও জিরো পয়েন্ট এলাকায় রাস্তায় লাঠিসোঁটা হাতে নিয়ে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করছে শ্রমিকরা। অবরোধকারীরা অ্যাম্বুলেন্স আটকে রাখছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পরিবহন শ্রমিকদের আকস্মিক ধর্মঘটে ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ। অন্যদিকে পণ্য পরিবহন করতে পারছে না ব্যবসায়ীরা। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সাধারণ মানুষ। তারা বলছেন, আইন বাতিলের জন্য যাত্রী ও ব্যবসায়ীদের জিম্মি করতে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে শ্রমিক নামধারীরা। এর আগেও বিভিন্ন দাবিতে এভাবে গাড়ি চলাচল বন্ধ করেছে শ্রমিকরা। অযৌক্তিক এ পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে তারা। রয়্যালের মোড়ের দিদার পরিবহনের কাউন্টারের বুকিং সহকারী ইলিয়াস হোসেন বলেন, পরিবহন শ্রমিকদের ৪৮ ঘণ্টার কর্মবিরতি শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের  গাড়ি ছাড়তে নিষেধ আছে। সৌদিয়া, হানিফ পরিবহনের বুকিং সহকারীরা একই কথা বলেন। তৈয়ব আলী নামের একজন ইজিবাইকের যাত্রী বলেন, হরতালে ইজিবাইক, অটোরিকশায় যাতায়াত করা গেছে। এখন তাও চলতে দিচ্ছে না শ্রমিকরা। তারা চালককে পোড়া মবিল মাখিয়ে দিচ্ছে। যাত্রীদের মারধর করছে। তিনি বলেন, পরিবহন শ্রমিকদের ডাকে ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘটে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ মানুষ। গন্তব্যে পৌঁছতে বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে তাদের। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পরিবহন শ্রমিকরা মানুষের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিচ্ছে। এটা কেমন আন্দোলন। রাইজিংবিডি/খুলনা/২৯ অক্টোবর ২০১৮/মুহাম্মদ নূরুজ্জামান/বকুল