সারা বাংলা

পাকিস্তানি বুলেট বুকে নিয়ে ৪৭ বছর

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর: ৪৭ বছর ধরে বুকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বুলেট বয়ে বেড়াচ্ছেন রংপুরের বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম বাদশা। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে এই মুক্তিযোদ্ধা এখন রোগে কাতর হয়ে পড়েছেন। ডায়াবেটিক, শ্বাসকষ্ট, কিডনি জটিলতাসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি। তার শেষ ইচ্ছা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত,  মুক্তিযোদ্ধা থেকে য়ুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি অথবা খেতাব। রমেক হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডের ৩৫ নং বেডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার তিনি তার শেষ ইচ্ছার কথা জানালেন। মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম জানান, ১৯৬৭ সালে তিনি পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৭১ সালে তিনি খুলনার খালিশপুর ক্যাম্পে কর্মরত ছিলেন। ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের পর বাঙালী পুলিশ সদস্যদের মাঝে স্বাধীনতার স্পৃহা জেগে উঠে। ২৫ মার্চ কাল রাত্রির পর সিরাজুল ইসলাম বাদশাসহ ওই ক্যাম্পের ১১ জন অস্ত্র নিয়ে বের হয়ে আসেন। তিনি খুলনা থেকে কখনো পায়ে হেঁটে কখনো ট্রেনে নিজ বাড়ি গাইবান্ধা সদর উপজেলার সাহাপুর ইউনিয়নের বিষ্ণপুর গ্রামে চলে আসেন। সেখানে থাকা নিরাপদ নয় ভেবে পাড়ি জমান ভারতে। যোগ দেন মুক্তিবাহিনীতে। সিরাজুল ইসলাম ১১ নং সেক্টরের অধীনে যুদ্ধ করেন। তার ভারতীয় যোদ্ধা নং ৪১৭৬০, মুক্তিবার্তা নং ০৩১৭০১০১৬০। গেজেট নং ৪৮। জাতীয় তালিকা ৪১ নং, ১৯৭১। মুক্তিযুদ্ধকালে বুকে গুলি লাগার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে পলাশবাড়ির বেতকাপা ইউনিয়নে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী, রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর সাথে সন্মুখযুদ্ধ শুরু হয়। ওই যুদ্ধে ফরহাদ আলীর পুত্র গোলাম রব্বানীসহ ৫ জন শহীদ হন। এসময় হানাদার বাহিনীর বেশ  ক’জন মারা যায়। ওই যুদ্ধে তার বুকের বাম পাশে এলএমজির একটি গুলি ঢুকে যায়। তাকে ভারতে শিলিগুড়ির একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে প্রায় ৩ মাস চিকিৎসার পর দেশে ফিরে আসেন। কিন্তু বুকের বুলেট বুকেই রয়ে যায়। ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হয়।  স্বাধীনতার পর কিছু সুস্থ হয়ে পুনরায় পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৯৬ সালে তিনি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ঘাতকের ছোড়া বুলেট নিয়ে তিনি এতদিন বেঁচে থাকলেও শেষ বয়সে দেহে নানা রোগ বাসা বেঁধেছে। তিনি আবেগতাড়িত হয়ে বলেন, ‘জীবনবাজী রেখে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযোদ্ধাদের মূল্যায়ণ করছেন। তিনি  প্রতিমাসে ১০ হাজার টাকা করে ভাতা পাচ্ছেন। কিন্তু এই টাকা চিকিৎসার পিছনেই খরচ হয়ে যায়। তাই সংসার চালাতে খুব কষ্ট হয়। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেলে ভাতা বাড়ত। এতে কিছুটা স্বচ্ছলতাও আসত।’ তাই তিনি নিজের চিকিৎসার জন্য হলেও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ভাতা দাবি করেন। তিনি আরো বলেন, ‘রণাঙ্গনে আমার সাহসিকতার কথা অনেক মুক্তিযোদ্ধাই জানেন। তাই শেষ জীবনে যদি আমার ভাগ্যে খেতাব জোটে তাহলে মৃত্যুর আগে একটা সান্ত্বনা পেতাম।’ তিনি আরো একটি আবদার করেন তা হলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাতকার। প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাত পেলে জীবনটা ধন্য হতো বলে তিনি মনে করেন। সিরাজুল ইসলামের একমাত্র পুত্র রফিকুল ইসলামও তার বাবার মত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দাবি করে বলেন, ‘এ সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের মূল্যায়ণ করছেন। বাবা যেহেতু একজন যুদ্ধাহত। তাই তার বিষয়টি সরকারের বিবেচনায় আসা উচিত।’ রমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. অজয় রায় এই মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে বলেন, ‘সিরাজুল ইসলামের বুকে একটি বুলেট রয়েছে। দেহে বুলেট নিয়ে বেঁচে থাকার অনেক নজির রয়েছে। রাইজিংবিডি/রংপুর/৮ জানুয়ারি ২০১৯/নজরুল মৃধা/টিপু