নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট : শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কমিটিকে দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। সোমবার দুপুরে নগরীর কাজলশাহ এলাকার একটি বাসা থেকে তাইফুর রহমান প্রতীকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি (জিইবি) বিভাগের ২০১১-১২ বর্ষের শিক্ষার্থী। স্নাতকের ফলাফলে বিভাগের প্রথম হওয়া প্রতীকের মৃত্যুর জন্য শাবির জিইবি বিভাগের শিক্ষকদের দায়ী করেছেন তার বড় বোন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগের শিক্ষক শান্তা তাওহিদা। এ দাবির প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার শাবির স্কুল অব এগ্রিকালচার অ্যান্ড মিনারেল সায়েন্সের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বেলাল উদ্দিনকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- গণিত বিভাগের অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম এবং সহকারি প্রক্টর মো. সামিউল ইসলাম। রেজিস্ট্রার ইসফাকুল হোসেন জানান, তদন্ত কমিটিকে দ্রুত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। প্রতীকের মরদেহ মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উপস্থিতিতে তার স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয় বলেও জানান তিনি। প্রতীকের আত্মহত্যার জন্য শাবির জিইবি বিভাগের শিক্ষকদের দায়ী করে তার বড় বোন শান্তা তাওহিদা ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘আমার কলিজার টুকরা আমার আদরের একমাত্র ভাই আমার প্রতীক আর নাই... শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এর জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগকে আমি ছাড়ব না, অনার্স এ প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হওয়া ছেলেটাকে বিভিন্ন ইস্যু বানায়ে মাস্টার্স-এ সুপারভাইজার দেয় নাই, বিভিন্ন কোর্সে নম্বর কম দিয়েছে! আমার ভাইটা টিচার হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিল এটাই তার অপরাধ... গত ছয় মাস ধরে ডিপার্টমেন্ট তিলেতিলে মেরে ফেলছে আমার ভাইকে...আমার কলিজার টুকরা কষ্ট সহ্য না পেরে কাল সুইসাইড করেছে...।’ এ বিষয়ে শাবির জিইবি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জোবেদা কনক খান বলেন, ‘আমি এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাচ্ছিনা। যার কোনো আপনজন চলে যায় সবারই হিতাহিত বোধ কাজ করেনা, এঘটনা আমার সাথে হলে একই হতো। পুলিশ যেহেতু তার তদন্ত করছে সেক্ষেত্রে আসল বিষয় বেরিয়ে আসবে। কারণ যতদূর জানা গেছে সে শুধু ডিপার্টমেন্ট কেন্দ্রিক নয়, আরও অনেক মানসিক সমস্যা তার মধ্যে ছিল।’ এ ঘটনায় অধ্যাপক ড.আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থী মারা যাওয়ার ঘটনায় আমি বাকরুদ্ধ। আমার কাছে আমার সন্তান যেমন সেও তেমন। তার সাথে ক্লাস পরীক্ষায় শিক্ষক হিসেবে কোনো বৈরি সম্পর্ক তৈরী হয়নি কখনো। তবুও কেন আমাদের নামটি বলা হলো তা বোধগম্য নয়।’ জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান শামসুল হক প্রধান বলেন, ‘বিভাগীয় চেয়ারম্যান হিসেবে আমার দায়িত্ব নেওয়ার সময় বেশি দিনের নয়। তবে যে ছেলেটির আত্মহত্যার খবর আমরা পাই, সে দেশের বাইরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল হইতো। কারণ অনেক সময় সে বিভাগে এসেছিল বিভাগের শিক্ষকদের সুপারিশের জন্য। আমাদের অনেক শিক্ষক তার সুপারিশের সাহায্য করেছে।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ঘটনাটি দুঃখজনক এবং আমরা মর্মাহত। ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ রাইজিংবিডি/ সিলেট/ ১৫ জানুয়ারি ২০১৯/ আব্দুল্লাহ আল নোমান/শাহেদ