সারা বাংলা

তিন দিবসে গদখালীতে ৭০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির টার্গেট

যশোর প্রতিনিধি : বসন্ত, ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস- এই তিন দিবসকে সামনে রেখে যশোরের গদখালির ফুলচাষিরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। এখানের ফুল ব্যবসায়ীদের কছে পুরো ফেব্রুয়ারি মাসটি বিশেষ উৎসবের। এ সময়ে তিন দিবসকে ঘিরে দেশের ফুল চাহিদার সিংহভাগই সরবরাহ হয় গদখালি থেকে। অন্যদিকে এখানকার ফুল ব্যবসায়ীদেরও থাকে বিশেষ প্রস্তুতি। বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির তথ্যমতে, এবার যশোরে পাইকারি পর্যায়ে ৭০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যশোরে প্রায় ৬ হাজার ফুলচাষি ১৫ শত হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রকার ফুল চাষের সাথে সম্পৃক্ত। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি চাষ হয় গ্যালোরিয়াস (শতকরা ৪০ভাগ) । তার পরের স্থানই রজনীগন্ধার (২০ ভাগ) । এরপর গোলাপ (১৫ ভাগ) । এছাড়া এখানে জারবেরা, গাঁদা, জিপসি, রডস্টিক, কেলেনডোলা, চন্দ্র মল্লিকাসহ ১১ ধরণের ফুলের চাষ হয়। বলা যায়, পর্যাপ্ত ফুলের উৎপাদন করে সারাদেশের মানুষের মন রাঙাচ্ছে এখানকার ফুলচাষিরা। সরেজমিনে শনিবার যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালি, পানিসারা, নাভারণ, নিরবাসখোলা এলাকার মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, জমিতে সেচ প্রদান, গোলাপের কুঁড়িতে ক্যাপ পড়ানো, সার-কীটনাশক, আগাছা পরিস্কার করাসহ ফুলের আনুসাঙ্গিক পরিচর্যা করছেন চাষিরা। তাদের লক্ষ্য এ মাসের প্রতিটা ফুলের বাজার ধরা। পানিসারা মাঠপাড়া এলাকার ফুলচাষি তবিবর বলেন, ‘আমার বাবা ফুলচাষ করতো। এখন আমিও ফুল চাষের সাথে সম্পৃক্ত। আমি ৪ বিঘা জমিতে ফুল চাষ করেছি। তার মধ্য রজনীগন্ধা ২ বিঘা ও ১ বিঘা গোলাপ ও ১ বিঘা জারবেরা। সামনে ফুলের বড় বাজার তাই বাজার ধরতে সকাল-বিকাল ফুলের পরিচর্যা করছি।’ গদখালিতে কথা হয় তরুণ ফুলচাষি আশরাফুল ইসলাম চান্দুর সাথে। তিনি ৪ বিঘা গোলাপ, ২ বিঘা জারবেরা ও ১ বিঘা গ্যালোরিয়াস ও রডস্টিক চাষ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা গোলাপের কুঁড়িতে ক্যাপ পরিয়ে রাখি, যাতে ফুল একটু দেরি করে ফোটে। বসন্ত দিবস, ভালবাসা দিবস আর ২১ ফেব্রুয়ারিতে যাতে ফুল বাজারে দেওয়া যায়। প্রতিটি গোলাপে ক্যাপ পরানোসহ খরচ প্রায় ৪ টাকার মতো।’ নাভারণের ফুলচাষি ও ব্যবসায়ী নজরুল আলম জানান, তিনি ফুল ব্যবসায়ের সাথে ফুলচাষও করছেন। তার চাষের মধ্য জারবেরা, গাঁদা, জিপসি, রজনীগন্ধাসহ বেশ কয়েকটি ফুলচাষ তার লাভজনক। কিন্তু তার জারবেরা ফুলে মাকড় পোকা বিস্তার করেছে। সেই সাথে সাদা মাছি। কৃষি কর্মকতাদের পরামর্শ মতো কীটনাশক দিচ্ছি। গত দু-তিনমাস ব্যবসাটা কিছুটা খারাপ গেছে। সময়মতো সামনের দিবস গুলোতে হয়তো ৩-৪ লাখ টাকার ফুল বিক্রি করতে পারবেন। বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, ১৯৮৩ সালে গদখালীতে মাত্র ৩০ শতক জমিতে ফুল চাষ শুরু হয়। এখন চাষ হচ্ছে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে। দেশে ফুলের মোট চাহিদার ৭০ ভাগই যশোরের গদখালী থেকে সরবরাহ হয়। দেশের গন্ডি পেরিয়ে এই ফুল এখন যাচ্ছে দুবাই, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়াতেও। রাইজিংবিডি/ যশোর/১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯/বিএম ফারুক/টিপু