সারা বাংলা

ঐতিহ্যবাহী তাড়াশের দই মেলায় উৎসবের আমেজ

সিরাজগঞ্জ সংবাদদাতা: দই সহ মুড়ি-মুড়কি, চিড়া-গুড় ও রসনা বিলাসী নানা খাবার বিকিকিনির মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হলো চলনবিলের ঐতিহ্যবাহী তাড়াশের দই মেলা। সিরাজগঞ্জের তাড়াশে সরস্বতী পূজা উপলক্ষে এমন আয়োজন প্রতি বছরের। রোববার দিনব্যাপী এই মেলাকে ঘিরে এলাকায় উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে। শনিবার সন্ধ্যায় নামিদামি ঘোষদের দই আসার মধ্য দিয়ে তাড়াশের প্রায় আড়াই শ’ বছরের ঐতিহ্যবাহী দইয়ের মেলা শুরু হয়ে পরিণত হয় মিলন মেলায়। তাড়াশ উপজেলার প্রবীণ ব্যক্তি সৌরেন্দ্র নাথ ঘোষ জানান, তাড়াশের তৎকালীন জমিদার পরম বৈষ্ণব বনোয়ারী লাল রায় বাহাদুর প্রথম এই দই মেলার প্রচলন শুরু করেছিলেন। জনশ্রুতি আছে লাল রায় বাহাদুর দই ও মিষ্টান্ন খুবই পছন্দ করতেন। এ ছাড়া জমিদার বাড়িতে আসা অতিথিদের আপ্যায়নে এ অঞ্চলের ঘোষদের তৈরি দই পরিবেশন করা হতো। আর সে থেকেই জমিদার বাড়ির সম্মুখে রশিক রায় মন্দিরের মাঠে সরস্বতী পূজা উপলক্ষে ৩ দিন ব্যাপী দই মেলা বসত। প্রতি বছর শীত মৌসুমের মাঘ মাসে শ্রী পঞ্চমী তিথিতে দই মেলায় সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, পাবনা, নাটোর থেকে ঘোষেরা দই এনে মেলায় পসরা বসিয়ে বিকিকিনি করতেন। সে সময় সবচেয়ে সুস্বাদু মজাদার দই প্রস্তুতকারীকে জমিদারের পক্ষ থেকে উপঢৌকন প্রদান করার রেওয়াজ ছিল। তবে জমিদার আমল থেকে শুরু হওয়া তাড়াশের দইয়ের মেলা মাঘ মাসের পঞ্চমী তিথিতে উৎসব আমেজে বসার বাৎসরিক রেওয়াজ এখনও বিরাজমান রয়েছে। দইয়ের মেলায় আসা এ অঞ্চলের দইয়ের স্বাদের কারণে নামেরও ভিন্নতা রয়েছে। যেমন-ক্ষীরসা দই, শাহী দই, সিরাজগঞ্জের রাজাপুরের দই, শেরপুরের দই, বগুড়ার দই, টক দই, শ্রীপুরী দই এ রকম হরেক নামে দামের হেরফেরে বিক্রি হয় দই। বিশেষ করে বগুড়ার শেরপুর, শ্রীপুর, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, চান্দাইকোনার দই প্রচুর বেচাকেনা হয়ে থাকে। একাধিক ঘোষের সাথে কথা বলে জানা যায়, দুধের দাম, জ্বালানী, শ্রমিক খরচ, দই পাত্রের মূল্য বৃদ্ধির কারণে দইয়ের দামও বেড়েছে। তবে মেলা ১ দিনব্যাপী হলেও চাহিদা থাকার কারণে কোন ঘোষের দই অবিক্রিত থাকে না। যার কারণে মেলার আগেই ঘোষেরা দই তৈরিতে মহাব্যস্ত হয়ে পড়েন। রাইজিংবিডি/ সিরাজগঞ্জ/১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯/অদিত্য রাসেল/টিপু