সারা বাংলা

‘৩২ বছরে কেউ কথা রাখেনি’

ঠাকুরগাঁও সংবাদদাতা: ৩২ বছরে তিনজন এমপি ক্ষমতায় আসলো গেলো, কেউ কথা রাখেনি। বলছিলেন, বর্মপুর এলাকার বাসিন্দা ৭০ বছরের সামশুল হক। তিনি ৩২ বছর ধরে রানীশংকৈল উপজেলার রাউতনগর বাজার এলাকায় কুলিক নদীতে মানুষ পারাপারের কাজ করছেন। ল্যাহেম্বা ও হোসেনগাঁও ইউনিয়নের মানুষের এই পথেই চলাচল। সামশুল হক বলেন, ‘ভোটের সময় এমপি, উপজেলা-ইউপি চেয়ারম্যানরা ভোট চাইতে আসে, জয়ী হওয়ার পরে আর আমাদের খবর নেয় না। ভাঙ্গা রাস্তাও এলাকাবাসির কাছে চাঁদা তুলে মেরামত করতে হয়।’ সামশুল হক বলেন, ‘বর্ষাকালে ২০ টিরও বেশি গ্রামের মানুষকে নৌকায় পার করি। খরা কালে বাঁশ-কাঠের সাঁকো দিয়ে পারাপার করি সেই ১৯৮৭ সাল থেকে। বিনিময়ে পায় ২-৫ টাকা করে সারাদিনে জোটে ২-৩শ টাকা। কেউ দেয় আবার কেউ দেয় না। এলাকার শিক্ষার্থীদের কাছে কোন সময় টাকা চাইনি। অনেকের কাছে ভয়ে টাকা চাইতে পারি না। টাকা চাইলে বলে- কার কাছে টাকা চাও চিনো আমি কে?’ সামশুল হক জানালেন, এই নদীতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তৈরি করা ব্রিজ উদ্বোধনের বছরেই ভেঙ্গে গেছে। পরে অনেকবার মাপামাপিই চলেছে কিন্তু কোন কাজ আর হয়নি। আরো বললেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে এলজিইডি করবে আর এলজিইডি বলছে পানি উন্নয়ন বোর্ড করবে- এভাবেই পার হয়ে গেল ৩২ বছর। দুই বছর আগে ঠাকুরগাঁওয়ের ডিসি পরিদর্শনে আসলে অনেক অনুরোধ করে বলেছিলাম স্যার ব্রিজ কবে হবে হোক আমাদের নদীর দু পাশে রাস্তা মেরামত করে দেন। আমরা এলাকাবাসি আপাতত কোন রকমে চলা ফেরা করি। তাও কোন কাজ হয়নি।’ রাউতনগর বাজার এলাকায় কুলিক নদীতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মিত ব্রিজ উদ্বোধনের বছরেই বন্যায় ভেঙ্গে পড়ে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পানি উন্নয়ন র্বোড (পাউবো) ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) একে অপরকে চাপাচাপির ফলে ব্রিজটি নির্মাণ না হওয়ায় ওই উপজেলার হোসেনগাঁও ও ল্যাহেম্বা ইউনিয়নের ২০ টিরও বেশি গ্রামের মানুষের দূর্ভোগ চরমে পৌছেছে। সরেজমিনে জানা যায়, ১৯৮২ সালে ঠাকুরগাঁও পানি উন্নয়ন বোর্ড এখানে ব্রিজ নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। কার্যক্রম শেষ করে ব্রিজটি নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে ১৯৮৬ সালের শেষের দিকে সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। কিন্তু ১৯৮৭ সালের বন্যায় ব্রিজটি ভেঙ্গে যায়। তারপর থেকে আশেপাশের ২টি ইউনিয়নের বর্মপুর, বিরাশি, ল্যাহেম্বা, শ্যামলাডাঙ্গী, রসুলপুর, কার্তিপুর, কোচলসহ ২০টিরও বেশি গ্রামের মানুষকে বর্ষাকালে নৌকা ও খরা মৌসুমে বাঁশের সাঁকো দিয়ে নদী পার হতে হচ্ছে। উপজেলা সদর থেকে কিছুটা দূরে হওয়ায় নদীর এক পাড়ে রাউতনগর বাজার ও শিক্ষার্থীদের শিক্ষার জন্য সরকারি প্রাথমিক, মাধ্যমিক, মাদ্রাসা ও দুইটি কিন্ডার গার্টেন বিদ্যালয় অবস্থিত। বিশেষ করে বিবাহ বা অন্য কোন অনুষ্ঠান হলে বেশি সমস্যা দেখা যায়। কারণ একপারে গাড়ী রেখে ২-৪ কিলোমিটার পথ হেঁটে যেতে হয়। রসুলপুর গ্রামের গৃহবধু সালমা বেগম জানান, বর্ষাকালে তাদের নৌকায় করে নদী পার হতে হয়। শিশুদের জন্য দুশ্চিন্তায় হয়। সলেমান আলী, নজরুল ইসলাম, মখলেসুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন পথচারী জানান, বর্ষাকালে ভোগান্তি হয়। হাট-বাজার মালামাল নিয়ে যেতে পারেন না। গাড়িতে ১০-১২ কিলোমিটার ঘুরে আসতে হয়। ছেলেমেয়েরা সময়মত স্কুল ও কলেজে পৌঁছাতে পারে না। সলেমান আলী বলেন, ‘আশপাশের গ্রামের কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে বা কোন গর্ভবতী নারীকে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া যায় না। ভ্যান গাড়িতে করে নদীরপাড়ে এসে বর্ষাকালে নৌকার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। আর শুকনা মৌসুম হলে সাঁকোর উপর দিয়ে রোগী পার করা কষ্ট হয়ে যায়।’ ঠাকুরগাঁও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, ‘ঠাকুরগাঁওয়ে নতুন তাই ওই এলাকায় তখন কেন পুন:রায় কাজ হয়নি সে বিষয়ে বলতে পারছি না। তবে দ্রুত পরিদর্শন করে কিছু করার থাকলে চেষ্টা করবো।’ ঠাকুরগাঁও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী কান্তেশ্বর বর্মণ বলেন, ‘কুলিক নদীর এই ব্রিজটির জন্য একাধিকবার মাপামাপিও হয়েছে। কিন্তু ব্রিজটির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি। তবে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি ‘ রাইজিংবিডি/ ঠাকুরগাঁও/১০ মার্চ ২০১৯/তানভীর হাসান তানু/টিপু