সারা বাংলা

‘বেসরকারি হাসপাতালে ট্যাক্স বাড়ানোর উপায় খোঁজা হচ্ছে’

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট : বেসরকারি হাসপাতাল আয়ের তুলনায় কম ট্যাক্স প্রদান করায় তাদের ট্যাক্স বাড়ানো যায় কিনা- এর উপায় খোঁজা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। তিনি বলেছেন, দেশের স্বাস্থ্য সেবায় সরকারি হাসপাতালের সঙ্গে বেসরকারি হাসপাতাল কাজ করে যাচ্ছে। তবে তারা যে হারে রোগীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করে থাকে তার তুলনায় কম ট্যাক্স প্রদান করে। এ জন্য তাদের ট্যাক্স বাড়ানো যায় কিনা সেই বিষয়ে উপায় খোঁজা হচ্ছে। শনিবার দুপুরে সিলেট নগরীর দরগাহ গেইটস্থ হোটেলে বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের উপর প্রাক-বাজেট আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের নীতিগত দিক সম্পর্কে ধারণা নিতে সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের যৌথ উদ্যোগে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। চিকিৎসক ও আইনজীবীদের আয়ের বিষয়টি এখনো সকলের কাছে পরিষ্কার নয়। তাদের ক্ষেত্রেও ট্যাক্স বৃদ্ধির উপায় খোঁজা হচ্ছে বলেও জানান জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান। এ সময় তিনি বলেন, আগামী এক মাসের মধ্যে সিলেটের তামাবিল স্থলবন্দরে ব্যাংকের বুথ চালু এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের কাজ শুরু হবে। এ ছাড়া পর্যটকদের ট্রাভেল ট্যাক্স বাতিলের বিষয়টি বিবেচনা, এডভান্স ইনকাম ট্যাক্স ও রেজিস্ট্রেশন ফি কমিয়ে আনা এবং ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন একদিনের মধ্যেই দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। সিলেট চেম্বারের সভাপতি খন্দকার সিপার আহমদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কাস্টম্স এক্সাইজ এন্ড ভ্যাট কমিনারেট সিলেটের কমিশনার গোলাম মোঃ মুনীর ও কর অঞ্চল-সিলেটের কর কমিশনার রণজীত কুমার সাহা। এ ছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (কাস্টম্স পলিসি) মোঃ ফিরোজ শাহ্ আলম, সদস্য (ভ্যাটনীতি) আব্দুল মান্নান শিকদার, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মৃণাল কান্তি দেব, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার পরিতোষ ঘোষ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) মোঃ আসলাম উদ্দিন। সিলেটে অনুষ্ঠিত এই প্রাক-বাজেট আলোচনায় সিলেট চেম্বারের পক্ষ থেকে অনেকগুলো প্রস্তাবনা এবং বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীরা তাদের দাবি ও প্রস্তাব তুলে ধরেন। জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘আমরা সবার পরামর্শ বিবেচনা করে আগামী বাজেটে তার প্রতিফলন ঘটানোর চেষ্টা করব।’’  প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া আরো বলেন, ‘‘সবার অংশগ্রহণে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। ক্ষুদ্র থেকে বড় শিল্পের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা। সৃষ্টি হচ্ছে কর্মসংস্থান। কিন্তু কর আদায়ের ক্ষেত্রে আমরা এখনো সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারিনি। যে কারণে প্রায় ১৮ কোটি জনসংখ্যার দেশে মাত্র ২০ লাখ লোক ইনকাম ট্যাক্সের রিটার্ন জমা দেন। বিদেশে এই বিষয়টি এত সুসংগঠিত যে ভ্যাটের জালের বাইরে কেউ যেতে পারে না। এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে এবং করদাতার সংখ্যা বাড়ানোর জন্য পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।’’  তিনি বলেন, ‘‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত মধ্যম আয়ের দেশ ও উন্নত দেশের পর্যায়ে পৌঁছাতে হলে আমাদের সবাইকে সততার সঙ্গে ভ্যাট ও ট্যাক্স প্রদান করতে হবে।’’ তিনি জানান, ইএফডি মেশিনের টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। সেন্ট্রাল সার্ভারের সঙ্গে সংযুক্ত করে ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিতরণ করা হবে, যাতে কোথায় কোথায় ভ্যাট আদায় হচ্ছে, তা জানা যাবে। তিনি বলেন, ‘‘১৫ শতাংশ ভ্যাট থেকে বেরিয়ে এসে আমরা কয়েকটি ধাপ করে দেব। এর ফলে ছোট হারেও ভ্যাট আদায় করলে ভ্যাটের হার ও আওতা অনেক বাড়বে।’’   মুক্ত আলোচনায় বিভিন্ন স্তরের ব্যবসায়ীরা তাদের মতামত তুলে ধরেন। এর মধ্যে বিসিক শিল্প নগরীতে প্লট হস্তান্তরের উপর ধার্য্য ফি থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার, ইকোনমিক জোনের মতো সুযোগ-সুবিধা প্রদান, কৃষি যন্ত্রপাতির উপর সকল পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি, কয়লা আমদানির ক্ষেত্রে এলসি কমিশনের উপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার, নিজেদের সম্পত্তি হস্তান্তর সহজীকরণ, প্যাকেজ ভ্যাট চালু রাখা, হাই-টেক পার্কের যন্ত্রাংশ ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের উপর সকল ট্যাক্স প্রত্যাহার, সুনামগঞ্জের ডলুরা ও বাঁশতলা শুল্ক স্টেশন চালু, নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ইকোনমিক জোন ও বিসিক শিল্প এলাকায় প্লট বরাদ্দ, রেলওয়ে খাতে সিলেটের জন্য আলাদা বরাদ্দ প্রদান, ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কার্গো টার্মিনাল ও স্ক্যানিং মেশিন স্থাপন করে পণ্য রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি, শুল্ক স্টেশনগুলোতে আমদানি-রপ্তানিকারকদের জন্য সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরেন।  মতবিনিময় সভায় কাস্টমস ভ্যাট ও আয়কর বিভাগের কর্মকর্তারা, সিলেট বিভাগের বিভিন্ন চেম্বারের প্রতিনিধিরা, ব্যাংকার, সিলেট চেম্বারের সদস্যরা, করদাতারা ও সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। রাইজিংবিডি/সিলেট/২০ এপ্রিল ২০১৯/আব্দুল্লাহ আল নোমান/বকুল