সারা বাংলা

নাগরপুরে নিষিদ্ধ তামাক চাষ ও বেচাকেনার হাট জমজমাট

নিজস্ব প্রতিবেদক, টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলের নাগরপুরে কোনভাবেই থামছে না ক্ষতিকর নিষিদ্ধ তামাকের চাষ। শুধু তাই নয়, উপজেলার বিভিন্নস্থানে রীতিমত বসছে তামাক বেচাকেনার হাট। ক্ষতির কথা জেনেও শুধুমাত্র বেশি লাভের আশায় তামাক চাষের দিকে ঝুঁকছে স্থানীয় কৃষকরা। এতে করে একদিকে যেমন পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। পাশাপাশি কৃষকরাও ভূগছে নানা ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যায়। জানা যায়, একসময় উপজেলার চরাঞ্চলখ্যাত মোকনা ও পাকুটিয়া ইউনিয়নের জমিতে চাষ করা হতো ধান, পাট, গমসহ নানা ধরনের শাক-সবজি। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন সিগারেট, বিড়ি ও জর্দা কোম্পানির প্রলোভনে পড়ে নাগরপুর উপজেলার মোকনা ও পাকুটিয়া ইউনিয়নের ধলেশ্বরী নদী তীরবর্তী এলাকার কৃষকরা শুরু করেছে বিষাক্ত তামাক চাষ। তাদের যুক্তি- তামাক চাষে খরচ কম, লাভ বেশি। তাই অতিরিক্ত মুনাফার আশায় ক্ষতির কথা চিন্তা করছেন না তারা। তা ছাড়া তামাক চাষে কারগিল নামক সার প্রয়োগের ফলে চাষি ও তার পরিবারের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে। পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি তো হচ্ছেই, তেমনি ফসলি জমি উর্বর শক্তি হারাচ্ছে। সরেজমিনে উপজেলার মোকনা ইউনিয়নের কেদারপুরে অস্থায়ী ভাবে বসা দুটি তামাক বিক্রির হাটে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কৃষকরা দূরদূরান্ত থেকে তাদের উৎপাদিত তামাক নিয়ে আসছে। আর সেখানে অপেক্ষারত বিভিন্ন কোম্পানির প্রতিনিধিগণ (যাদের সাথে আগে থেকেই কৃষকদের চুক্তি করা) তামাক দেখে দাম নির্ধারণ করে নিচ্ছে।  

হাটে ইউনাইটেড ঢাকা টোব্যাকোর মাধ্যমে এবার তামাক সংগ্রহ করছে জাপান টোব্যাকো লিমিটেড। জাপান টোব্যাকোর প্রতিনিধি জাহিদুর রহমান জানান, আমরা এখান থেকে তামাকের গুণাগুণ দেখে ৮৪ থেকে ১০৮ টাকা কেজি দরে কিনে নিচ্ছি। এ বছর এখান থেকে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ১৫০ মেট্রিকটন। হাটে গিয়ে কথা হয় কৃষক রিপন মিয়ার সাথে। তিনি জানান, তামাক চাষে খরচ কম এবং লাভ বেশি হওয়ায় আমি দীর্ঘ আট বছর যাবৎ তামাক চাষ করছি। সেই সাথে চাষ করার আগে কোম্পানির প্রতিনিধিরা তামাক চাষ করতে অর্থনৈতিক সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকে। তাছাড়া বালুমাটিতে তামাক চাষ করে অন্য ফসলের চেয়ে ভালো ফলন পাওয়া যায়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্রিটিশ আমিরিকান টোব্যাকো, জাপান টোব্যাকো কোম্পানিসহ বিভিন্ন বিড়ি ও জর্দা কোম্পানি তাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে স্থানীয় কৃষকদের তামাক চাষে উদ্বুদ্ধ করছে। অবশ্য নাগরপুর উপজেলা কৃষি অফিস বলছে, বাংলাদেশে তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ ও উৎপাদন বন্ধ করে সরকার বিকল্প কৃষিপণ্য উৎপাদনে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করায় এবং কৃষি অফিসের কর্মকর্তাদের তৎপরতায় নাগরপুর উপজেলায় প্রতিবছর তামাক চাষ কমছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ ইমরান হোসাইন শাকিল বলেন, ‘এ বছর নাগরপুর উপজেলায় ৩০ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ করা হলেও তা গত বছরের তুলনায় অনেক কম। কৃষকদের তামাক চাষ থেকে নিরুৎসাহিত করার জন্য উঠান বৈঠকের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকার পরার্মশ দেওয়া হচ্ছে।’  

 

রাইজিংবিডি/ টাঙ্গাইল/৯ মে ২০১৯/ শাহরিয়ার সিফাত/টিপু