সারা বাংলা

‘রেলসেতুতে নাটের স্থলে বাঁশ ঝুঁকিপূর্ণ নয়’

নিজস্ব প্রতিবেদক, টাঙ্গাইল: এবার রেললাইনের বাতিল হয়ে যাওয়া নাটের স্থলে দেওয়া হয়েছে বাঁশের গোঁজ ও কাঠ। এমনই রেললাইনের দেখা মিলেছে টাঙ্গাইলে। আর এতে করে ঢাকা-উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের রেল সংযোগের টাঙ্গাইল অংশের বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত রেললাইনের বেশ কিছু সেতু ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। রেলসেতুতে দেখা গেছে লোহার নাটের পরিবর্তে বাঁশের গোঁজ ও কাঠের ব্যবহার করতে। এছাড়া সেতুর কাঠের তৈরি স্লিপার নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ঝুঁকিতে রয়েছে সেতুগুলো। যেকোন সময়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।

টাঙ্গাইল সদরের ঘারিন্দা রেল স্টেশন সূত্রে জানা যায়, বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত রেললাইনে  ছোট-বড়  প্রায় ১৩২টি সেতু রয়েছে, যা ১৯৯৮ সালে রেললাইন স্থাপনের সময় নির্মাণ করা হয়। এরপর আর এই সেতুতে কোন সংস্কার কাজ হয়নি।

দেখা যায়, ঢাকা-বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব রেললাইনের টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার জোকারচর, সল্লা, হাতিয়া, আনালিয়াবাড়ী রেল সেতুগুলোর বেশ কিছু স্থানে সেতুর সাথে রেললাইনের আটকানো ক্লিপ নেই। কিন্তু সেখানে লোহার বোল্টু বা নাট দিয়ে আটকানোর কথা থাকলেও এর পরিবর্তে বাঁশের গোজ বা কাঠ দিয়ে আটকানো হয়েছে। আবার অনেক স্থানে লোহার নাট বা বাঁশের গোজও খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া সেতুর অনেক কাঠের স্লিপার নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে, লোহার নাটগুলো নাড়াচাড়া বা হাত দিয়ে টেনে তোলা যাচ্ছে। সেতুর একপাশে লোহার পাতগুলো খুলে রয়েছে।

অন্যদিকে পুংলী রেল সেতুতে গিয়ে দেখা যায়, যে পিলারের উপর ব্রিজটি দাড়িয়ে আছে তার মূল নাটগুলো নেই। তাছাড়াও রয়েছে বাঁশ-কাঠের ব্যবহার। ফলে যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। ইতোমধ্যে বিগত ২০১৭ সালে ২০ আগস্ট পুংলী রেলসেতুর এপ্রোস ধসে পড়ে। এতে স্থানীয়দের সহযোগিতায় অল্পের জন্য উত্তরবঙ্গ থেকে আসা ঢাকাগামী ট্রেন দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পায়। এরপর ওই সেতুর সংস্কার কাজ শেষ হলে ৩৮ ঘন্টা পর পুনরায় রেল চলাচল শুরু করে।

পুংলী এলাকার স্থানীয় আব্দুস ছামাদ বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে সেতুর উপর রেললাইনের ক্লিপগুলো খুলে রয়েছে। কিছু কিছু লোহার নাটের বদলে বাঁশ ও কাঠ দিয়ে নাটের জায়গায় আটকিয়ে দেয়া হয়েছে। সেতুর কাঠের স্লিপারের দুইপাশে লোহার পাত খুলে পড়ে রয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘এই রেললাইন যখন চালু হয়, তখন শব্দ হতো না। আর এখন এমন শব্দ হয়, যেন রেললাইন ভেঙে পড়ে যাচ্ছে। রেল সেতুগুলো এখন যে পর্যায়ে রয়েছে, যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা মাধ্যমে অনেক লোকের প্রাণহানি ঘটতে পারে।

স্থানীয় মুন্নাফ আলী ও মান্নান মিয়া বলেন, ‘টাঙ্গাইলের অংশে ক্রমেই রেল দুর্ঘটনা বাড়ছে। কয়েক বছরের মধ্যে মির্জাপুর, পুংলী, বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব পাড় ও বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপ্রান্তের উপর ৯টি বগি লাইনচ্যূত হয়। এই ৯টি বগি যদি নদীতে পড়ে যেত, তাহলে হাজারো লোকের প্রাণহানি ঘটতো। আর বর্তমানে ব্রিজগুলোর যে অবস্থা, দুর্ঘটনা হওয়ার আশঙ্কাই বেশি’।

এ ব্যাপারে টাঙ্গাইলের ঘারিন্দা রেল স্টেশন মাস্টার জালাল উদ্দিন বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে রেললাইনগুলোতে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে টাঙ্গাইলের বঙ্গবন্ধু সেতু রেল স্টেশন মাস্টার আব্দুল মান্নান বলেন, বিষয়টি আমার নলেজে নেই। লোহার নাটের পরিবর্তে বাঁশের গোঁজ ও কাঠের ব্যবহার করার কোন নিয়ম নেই। তবে, বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও তিনি জানান।

জয়দেবপুর বাংলাদেশ রেলওয়ের সহকারি প্রকৌশলী নাজিব কায়সার বলেন, আমরা অনেক সময় দেখি বিভিন্ন জায়গায় নাট চুরি হয়ে যায়। আমাদের স্টকেও অনেক সময় নাট থাকে না, যেহেতু সব সময় ট্রেন চলাচল করে। তাই জানমাল রক্ষার্থে জরুরি ভিত্তিতে নাটের জায়গায় বাঁশ দিয়ে আটকানো হয়। পরবর্তীতে নাটগুলো এনে ঠিক করে দেয়া হয়। তবে, তাৎক্ষণিকভাবে বাঁশের ব্যবহার ঝুকিপূর্ণ না বলেও জানান তিনি।

 

রাইজিংবিডি/টাঙ্গাইল/২ জুলাই ২০১৯/শাহরিয়ার সিফাত/হাকিম