সারা বাংলা

যানজটে বিদেশী ক্রেতারা ফিরে যাচ্ছে : চট্টগ্রাম চেম্বার

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রাম বন্দর এলাকায় অসহনীয় যানজট, আমদানি ও রপ্তানি কন্টেইনার পরিবহন সংকটসহ নান সমস্যার কারনে চট্টগ্রামে আসা বিদেশী ক্রেতারা কার্যাদেশ (ওয়ার্কঅর্ডার) না দিয়ে ফেরত যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে চট্টগ্রাম চেম্বার। চট্টগ্রামে চলমান এই অসহনীয় পরিস্থিতির মাঠ পর্যায়ের সমস্যা চিহ্নিত করে দ্রুত পরিস্থিতি উত্তরণ ঘটনানোর জন্য চেম্বারের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়। বুধবার ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলমের সভাপতিত্বে আয়োজিত এক সভায় এই আহ্বান জানানো হয়।

সভায় চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, গত ৭/৮ দিন ধরে চট্টগ্রাম বন্দর এলাকায় ভয়াবহ  যানজট পরিস্থিতিতে বন্দরে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে প্রায়। আর্থিক কর্মকান্ড ও জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বৃষ্টি, যানজট, জলজট ইত্যাদি কারণে যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তাতে ব্যবসায়ীগণ অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। বিমানবন্দর থেকে মূল শহর পর্যন্ত মাত্র ১৬ কি.মি. রাস্তা পার হতে প্রায় ৪ ঘন্টা সময় লাগছে। যার ফলে অনেক বিদেশী ক্রেতা কার্যাদেশ না দিয়ে ফিরে যাচ্ছেন এবং বিদেশী বিনিয়োগকারীদের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুন্ন হচ্ছে। এই ধরণের পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ এবং ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বিবেচনায় নগরীর উপর চাপ কমিয়ে বন্দরের গতিশীলতা বজায় রাখতে দ্রুত বে-টার্মিনাল এলাকায় ডেলিভারী ইয়ার্ড ও ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ ফাস্টট্র্যাক প্রকল্প হিসেবে অনতিবিলম্বে বাস্তবায়নের দাবী জানান চেম্বার সভাপতি। অন্যথায় সরকারের লক্ষ্য অর্জনে চরম চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

সভায় চেম্বার সহ-সভাপতি তরফদার মোঃ রুহুল আমিন, পরিচালক সৈয়দ জামাল আহমেদ ও অঞ্জন শেখর দাশ, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (ট্রাফিক) এনামুল করিম ও পরিচালক (নিরাপত্তা) লেঃ কর্ণেল তানভীর আহাম্মদ জায়গীরদার পিএসসি, বন্দর এলাকার সহকারী কমিশনার (ট্রাফিক) মোঃ মোশাররফ হোসেন, বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি এ.এম. চৌধুরী সেলিম ও পরিচালক খন্দকার বেলায়েত হোসেন, সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশন’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু ও বন্দর বিষয়ক সম্পাদক লিয়াকত আলী হাওলাদার উপস্থিত ছিলেন।

চেম্বার সহ-সভাপতি তরফদার মোঃ রুহুল আমিন বলেন, স্বাভাবিক সময়ে ৩ হাজার টিইইউএস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা হলেও এ সময়ে তা ১৫শ এর নীচে নেমে আসে। তিনি ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজের জন্য যানজট সৃষ্টি হচ্ছে উল্লেখ করে অতি দ্রুত অর্থনীতির লাইফলাইন খ্যাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কের বিকল্প ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানান। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনানুযায়ী বন্দর কর্তৃপক্ষের স্কেনার মেশিন স্থাপন করা হলে হ্যান্ডলিং কার্যক্রম আরও অনেক গতিশীল হবে বলে তিনি জানান।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (নিরাপত্তা) লেঃ কর্ণেল তানভীর আহাম্মদ জায়গীরদার বলেন, দেশের অর্থনীতির স্বার্থে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনামতে বন্দর সর্বদা সার্ভিস দেয়ার জন্য প্রস্তুত। অন্য সকল স্টেকহোল্ডারদেরকেও স্ব-স্ব অবস্থান থেকে একইভাবে এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি। বন্দরের সুনাম ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে আইএসপিএস কোড অনুযায়ী সার্বিক নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। তিনি বন্দরে প্রবেশকারী ড্রাইভারদের স্মার্ট কার্ড বিতরণের জন্য বন্দর গেইটের পরিবর্তে পৃথক ব্যবস্থা করে  নির্দিষ্ট দিন ও স্থান সবাইকে জানানো হবে বলে জানান। বন্দর এলাকার সহকারী কমিশনার (ট্রাফিক) মোঃ মোশাররফ হোসেন এ যানজটের কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে জলাবদ্ধতা, পরিকল্পিত উপায়ে সমস্ত ধরণের প্রকল্প ও সংস্কার কাজ করার প্রতি গুরুত্বারোপ করে বিস্তারিত বর্ণনা দেন। বিশেষ করে বারিক বিল্ডিং থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত একমাত্র রাস্তার উপরে নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের কাজ চলায় বিকল্প সড়ক হিসেবে কাটগড়, র‌্যাব-৭ সংলগ্ন এলাকা, ইপিজেড, হালিশহর-বড়পোল ও জহুর আহমদ স্টেডিয়াম সংলগ্ন সংযোগ সড়কসহ রিং রোডের কাজ দ্রুত শেষ করা, বিদ্যমান সড়কের সম্প্রসারণের মাধ্যমে যানজট নিরসন সম্ভব বলে মনে করেন। রাইজিংবিডি/চট্টগ্রাম/১৭ জুলাই ২০১৯/রেজাউল/সাজেদ