সারা বাংলা

মহাসড়কে তিন হাট, ঝুঁকিপূর্ণ তবু বসছে

বাগেরহাট সংবাদদাতা: দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়েই খুলনা-মোংলা মহাসড়কের পাশে বসছে তিন জমজমাট হাট। বছরের পর বছর এই হাট চলতে থাকলেও অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার কথা ভাবেনি কোন প্রশাসন।

এই হাটকে ঘিরে ছোট-খাটো দুর্ঘটনা প্রায় প্রতিদিনের। গত দশ বছরে রাস্তার পাশে বাজারে ট্রাক উঠে গিয়ে দুর্ঘটনায় চারজনের প্রাণহানিসহ ১১জন আহত হওয়ার ঘটনা এখানে অনেকের কাছেই দুঃসহ স্মৃতি ।

খুলনা-মোংলা মহাসড়কের পাশে বসা ‘ভাগা’, ‘গুনাই’ ও ‘দিগরাজ’ নামের তিনটি হাটের নামই স্থানীয়ভাবে বিখ্যাত। স্থানীয়রা জানালেন, এই তিনটি হাটই বসছে প্রায় ৪০ বছর ধরে।

তিনটি হাটই সাপ্তাহিক। সপ্তাহের দুটি দিন জীবনের ঝুঁকি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাকাটা করেন ক্রেতারা। অন্যদিকে হাটের দিন ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে যানবাহন চালকদের। মালামাল ও মানুষের ভিড়ের কারণে মহাসড়কে জট তৈরি হচ্ছে যানবাহনের।

মহাসড়ক থেকে হাটগুলো অন্যত্র নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার দাবি দীর্ঘদিনের। কিন্তু এলাকাবাসীর সে দাবি উপেক্ষিতই থাকছে। অন্যদিকে যানবাহন চালকরা যে কোন মুহূর্তে বড় কোন দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা করছেন।

এলাকাবাসী জানায়, বাগেরহাট জেলার মোংলা উপজেলার বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়নের দিগরাজ বাজার ও রামপাল উপজেলার সদর ইউনিয়নের ভাগা ও গুনাই বাজার ১৯৮০-৮১ সাল থেকে খুলনা-মোংলা মহাসড়কের পাশে বসছে। ভাগা বাজার সপ্তাহের প্রতি শুক্র ও মঙ্গল, গুনাই বাজার সোম ও শুক্র এবং দিগরাজ বাজার রবি ও বৃহস্পতিবার বসে। মহাসড়কের দুই পাশেই প্রায় ৩০ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে অন্য কোন বাজার না থাকায় বাজার সংশ্লিষ্ট চার-পাঁচ গ্রামের প্রায় ১০ হাজার লোক সপ্তাহের হাটে নিত্যপ্রয়োজনীয় মালামাল নিতে আসেন।

 

সরেজমিন বাজারে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার দুই পাশেই বাজার বসেছে। কাঁচা বাজার থেকে শুরু করে মাছ-মাংস সবই বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতারা রাস্তা পার হয়ে দুই পাশ থেকে মাছ তরকারি কিনছেন। এসময় অনেক যানবাহন চলাচলে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। আবার মানুষ ঝুঁকি নিয়ে রাস্তার এপাশ-ওপাশ যাওয়া-আসা করছেন।

সবজি ব্যবসায়ী রাকিবুল, তাহের, লিয়াকতসহ আরো বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী জানালেন, মোংলা বন্দর গতিশীল হওয়ায় খুলনা-মোংলা মহাসড়ক এখন ব্যস্ততম সড়ক। প্রতিদিনই মোংলা বন্দর ও মোংলা ইপিজেডএর পণ্য বোঝাই অসংখ্য ট্রাক, লরি, বাস এ পথে যাতায়াত করে। এখানেই প্রায় ৪০ বছর ধরে বাজার বসে আসছে। মহাসড়কের পাশে বলে সারাক্ষণই আমরা ঝুঁকির মুখে থাকি। না জানি কখন গাড়ি গায়ের উপর উঠে যায়। সড়কের পাশ থেকে নিরাপদ স্থানে বাজার সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানান তারা।

দিগরাজ বাজারে বাজার করতে আসা একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, ‘সপ্তাহের বাজার করতে এলাকাবাসীকে এখানে আসতেই হয়। এরকম ব্যস্ত মহাসড়কের পাশে বাজার মানেই তো দুর্ঘটনার ঝুঁকি। শুধু ঝুঁকিই না ছোট-বড় দুর্ঘটনা তো প্রতিনিয়ত ঘটছেই। ২০০৮ সালে মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পরে বাজার নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার কথা হয়েছিল। তা আর বাস্তবায়ন হয়নি।’

খুলনা-মোংলা বাস চালক সেলিম শেখ বলেন, ‘দুই পাশের বাজারের দোকানগুলো প্রায়ই রাস্তার উপরে উঠে আসে। বাজার করতে আসা লোকজনের ভিড়ে গাড়ী চালানো যায় না। আমাদের খুব আতঙ্কের মধ্যে গাড়ি চালাতে হয়। কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের দাবি, মহাসড়কের পাশ থেকে বাজার নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর করুন।’

রামপাল সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জামিল হাসান জামু ঝুঁকির কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আমরা সরকারি কিছু খাস জায়গা নির্ধারণ করে সরকারের কাছে সেখানে বাজার স্থানান্তরের দাবি জানিয়েছি। তবে মোংলা –খুলনা মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত হওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। সেটি শেষ হলেই বাজার মহাসড়কের পাশ থেকে স্থানান্তর করার প্রক্রিয়া শুরু হবে।’

রামপাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তুষার কুমার পাল জানান, এই বাজারগুলো খুবই ব্যস্ততম। সরকারি কোন জমি পাওয়া গেলে দ্রুত বাজার দুটি স্থানান্তর করা সম্ভব হবে। রাইজিংবিডি/ বাগেরহাট/২৮ জুলাই ২০১৯/আলী আকবর টুটুল/টিপু