সারা বাংলা

দেশীয় অস্ত্রে বাধা-নিষেধ নেই, ব্যবহার হয় হত্যায়

রুদ্র রুহান, বরগুনা : ঈদুল আজহা ঘিরে বরগুনার কামারপাড়ায় প্রচুর দেশীয় অস্ত্র তৈরি হয়। এ সব ধারালো অস্ত্র তৈরি বা বিক্রিতে বাধা-নিষেধ থাকে না। এই সুযোগে দুর্বৃত্তরা অস্ত্র তৈরি করিয়ে নেয়।

কামাররা জানান, অস্ত্র বিক্রিতে বাধা-নিষেধ নেই। সচেতন মহলের দাবি, এ ধরনের অস্ত্র তৈরি-বিক্রয় নিয়মের মধ্যে আনতে হবে।

বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা; এর আগে যুবলীগকর্মী বাদশা হত্যা ও শ্রমিক নেতা হায়দার হত্যায় ব্যবহৃত হয়েছে দেশীয় অস্ত্র।

শহরের পৌর মার্কেটের পেছনে কামারের দোকান। দিনের আলোয়ও স্থানটি অন্ধকারাচ্ছন্ন। সেখানে সারা বছর কাজে ব্যস্ত থাকেন কামাররা। তবে কোরবানির ঈদ ঘিরে অস্ত্র তৈরির ব্যস্ততা বাড়ে। দোকানের সামনে বিক্রয়ের জন্য সাজানো থাকে নানান দেশীয় ধারালো অস্ত্র। দা, কুড়ালের পাশাপাশি বিভিন্ন সাইজের ধারালো ছুরি, চাপাতি ও রামদা রয়েছে।

প্রশাসন থেকে এ সব অস্ত্র ক্রয়ে কোনো বাধা-নিষেধ নেই। যে কেউ এই অস্ত্র কিনতে পারে। সাধারণত, পশু জবাইয়ের জন্য মসজিদ বা মাদ্রাসার মাওলানারা, মাংস কাটার কাজে নিয়োজিত কসাই এবং ঘর-গৃহস্থলীর কাজে মানুষ প্রয়োজন অনুযায়ী এই সব অস্ত্র কেনেন। কিন্তু এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে অস্ত্র কিনছেন দুর্বৃত্তরা।

ঈদের দুই দিন আগে কাজের ফাঁকে কথা হয় কয়েকজন কামারের সঙ্গে। তাঁরা জানান, কারা এ সব অস্ত্রের ক্রেতা, সেটা নির্দিষ্টকরণ নেই। যে কেউ রামদা, ছুরি বা চাপাতির অর্ডার করলেই সেটি তৈরি করে দেয়া হয়। তবে পরিচিত কিছু কসাই আছেন, যারা নিয়মিত অস্ত্র শান দিতে আসেন।

তবে যুবকদের কাউকে সন্দেহভাজন মনে হলে তার কাছে অস্ত্র বিক্রি করেন না বলে জানান এখানকার কামারদের অনেকে। তবে বগী দা হিসেবে পরিচিত রাম দা এখানে তৈরি বা বিক্রি হয় না বলে জানান তারা।

তৈরি ও বিক্রয়ে প্রশাসনিক কোনো নির্দেশনা বা বাধা-নিষেধ আছে কিনা- জানতে চাইলে কামারদের এখানকার সংগঠনের সভাপতি হরিদাস কর্মকার বলেন, পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো নির্দেশনা নেই। তবে ‘নিজেরাই বুঝে-শুনে বিক্রি করি’- এমনটা জানান তিনি।

কোরবানির সুযোগে দুর্বৃত্তরা অস্ত্র তৈরি করিয়ে নেয় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কে, কী উদ্দেশ্যে কেনে তারা তা জানেন না।

বরগুনায় হত্যা ও কুপিয়ে জখমে এই সব দেশীয় অস্ত্র ব্যবহৃত হচ্ছে। জেলায় গত কয়েক বছরে কয়েকটি হত্যাকাণ্ডে দেশীয় অস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছে। দেশীয় অস্ত্রের এমন ব্যবহারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মানবাধিকার সংগঠনের নেতারা।

বরগুনা জেলা নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন কামাল বলেন, এই সব অস্ত্র যেভাবে অবাধে তৈরি ও বহন করা যায়, তাতে সহজেই সন্ত্রাসীরা ব্যবহার করে থাকে। এটিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা জরুরি।

বরগুনা পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন বলেন, বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। তারা থানা ও নৌপুলিশ ফাঁড়ি এলাকার কামারদের ডেকে তৈরি ও বিক্রয়ের বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন। কারা বিশেষ ধরনের অস্ত্র তৈরি করান, সেই বিষয়ে পুলিশ খোঁজ নেবে।  রাইজিংবিডি/বরগুনা/১৩ আগস্ট ২০১৯/রুদ্র রুহান/বকুল