সারা বাংলা

রোহিঙ্গা আশ্রয়: সংঘাতের আশঙ্কা বাড়ছে

কক্সবাজার সংবাদদাতা : মানবিক কারণে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়া হলেও সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সৃষ্টি হয়েছে নানা সংকট, আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে সংঘাতের। এরই মধ্যে বন উজাড়, পাহাড় কাটা, কৃষি জমি দখল ও শ্রমবাজারে অস্থিরতাসহ নানা ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে রোহিঙ্গারা।

দ্রুত প্রত্যাবাসন না হলে এই সংকট সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে বলে আশঙ্কা করছে রোহিঙ্গা প্রতিরোধ ও প্রত্যাবাসন সংগ্রাম পরিষদ। এই সংকট উত্তরণে মিয়ানমারকে পদক্ষেপ নিতে হবে বলে জানিয়েছেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালাম।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সেনাবাহিনীর হত্যাযজ্ঞ ও নিপীড়নের শিকার হয়ে রোহিঙ্গার ঢল শুরুর পর প্রাথমিকভাবে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের বাসিন্দারা পাশে দাঁড়িয়েছিল তাদের। মানবতার খাতিরে যতটুকু সম্বল ছিল তা দিয়ে অসহায় রোহিঙ্গাদের খাদ্য ও আশ্রয় দিয়েছিল তারা।

এরইমধ্যে বন উজাড়, কৃষি জমি দখল ও শ্রমবাজারে অস্থিরতাসহ নানামুখী সংকটের মুখে পড়েছে কক্সবাজার জেলা। অব্যাহতভাবে পাহাড় কাটার কারণে বিপর্যয়ের মুখে পরিবেশের ভারসাম্য।

সাময়িক সময়ের জন্য দেয়া আশ্রয় যে দীর্ঘমেয়াদি সংকটের তৈরি করবে তা ভাবতে পারেনি স্থানীয় বাসিন্দারা। দুই বছর গড়ালেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আশার আলো না দেখায় উদ্বিগ্ন তারা।

কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা দীপু বলেন, রোহিঙ্গাদের কারণে এখান বাসিন্দারা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। সেই সঙ্গে তারা অবাধে বন উজাড় করে দিচ্ছে, যে কারণে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।

কক্সবাজার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসাইন বলেন, ‘‘রোহিঙ্গারা বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে। আমরা সেই বিষয়গুলো মাথা রেখে কাজ করে যাচ্ছি।’’

বর্তমান পরিস্থিতি রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে বলে আশংকা করছেন রোহিঙ্গা প্রতিরোধ ও প্রত্যাবাসন সংগ্রাম পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি পরিষদের মাহামুদুল হক চৌধুরী বলেন, ‘‘এই সংকট থেকে উত্তরণের কোনো উপায় দেখছি না। দিন দিন সংঘাতময় পরিস্থিতির দিকে আমরা চলে যাচ্ছি।’’

আর শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালাম মনে করেন, ‘‘মিয়ানমার এ সমস্যার সৃষ্টি করেছে, তাই সংকট উত্তরণে তাদের ব্যবস্থা নিতে হবে।’’

তিনি বলেন, ‘‘আমরা তাদের (রোহিঙ্গা) জীবন বাঁচানোর জন্য আশ্রয় দিয়েছি। যদি তাদের আশ্রয় দেয়া না হতো, তাহলে আজকে আমাদের এই চিত্র দেখতে হতো না।’’

নতুন ও পুরনো মিলিয়ে মিয়ানমারের ১১ লাখ ১৯ হাজার রোহিঙ্গার বসবাস এখন কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায়। সীমান্তবর্তী এই দুই উপজেলার ২৮টি পাহাড়ের ৩৪টি আশ্রয় শিবিরে তাদের অবস্থান।  রাইজিংবিডি/কক্সবাজার/২৬ আগস্ট ২০১৯/সুজাউদ্দিন রুবেল/বকুল