সারা বাংলা

ধর্ষণ-অন্তঃস্বত্ত্বা, বিয়ের পর মিলল সতীন!

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর: প্রায় পাঁচ মাস আগে অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া এক কিশোরীকে ধর্ষণ করে রংপুরের বদরগঞ্জ থানার এক বখাটে যুবক। এতে সেই কিশোরী অন্তঃস্বত্ত্বা হয়ে পড়ে। গ্রাম্য সালিশের রায়ে মেয়েটিকে বিয়ে করতে বাধ্য হন ধর্ষক। বিয়ের ১২ দিন পর যৌতুকলোভী ধর্ষক-স্বামী আরেকটি বিয়ে করেন। সতীনের সংসারে যায়গা হয় না তার। স্বামীর বাড়ি থেকে বিতাড়িত পাঁচ মাসের অন্তঃস্বত্ত্বা সেই কিশোরী এখন বাবার বাড়িতে মানবেতর জীবন যাপন করছে।

ঘটনাটি রংপুরের বদরগঞ্জ থানার উপজেলার মধুপুর ইউনিয়নের রাজারামপুর এলাকার ডাঙ্গা পাড়ার। ২০ আগস্ট মেয়ের বাবা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে ধর্ষক-স্বামী পরিবারসহ গা ঢাকা দিয়েছে।

অভিযোগে জানা যায়, ওই এলাকার দিনমজুর চিতু বর্মণের তিন মেয়ে। বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন তিনি। পড়াশোনায় প্রবল আগ্রহ থাকায় মেঝ মেয়েকে রাজারামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি ও ছোটমেয়েকে স্থানীয় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করেন। বিষয়টি নিয়ে রোষ দেখান প্রতিবেশী নারায়ন চন্দ্র রায়ের ছেলে প্রকাশ চন্দ্র রায়। অকারণেই চিতু বর্মণের পরিবারটিকে ক্ষতি করতে মরিয়া হয়ে ওঠেন তিনি।

পাঁচ মাস আগে বাড়ি ফাঁকা থাকায় বরই দেওয়ার কথা বলে মেয়েটিকে নিজ বাড়িতে ডেকে নেন তিনি। সেখানে তার দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয় মেয়েটি। বিষয়টি জানাজানি হলে মেরে ফেলানোর ভয় দেখান। পরিবারেরও ক্ষতি করা হবে বলে সাশানো হয়। মেয়েটি বিষয়টি চেপে যায়। কিন্তু কয়েক মাস পর তার শরীরে পরিবর্তন আসতে থাকে। পেটের আকার বদলে যেতে থাকলে বিষয়টি জানাজানি হয়। চিকিৎসকরা মেয়েটির মা-বাবাকে জানিয়ে দেন সে পাঁচ মাসের অন্তঃস্বত্ত্বা।

দিনমজুর বাবা উপায় না পেয়ে সমাজপতিদের দ্বারস্থ হন। স্থানীয়ভাবে আয়োজিত এক সালিশ বৈঠকে ধর্ষক প্রকাশ নিজের দোষ স্বীকার করে নেন। সমাজপতিরা মেয়েটিকে তার সাথে বিয়ে দেয়ার মতামত প্রদান করেন। সমাজপতিদের মতামত অনুযায়ী ৪ আগস্ট ঘটা করে প্রকাশ ও মেয়েটির বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়েতে এক লাখ ৩০ হাজার টাকা যৌতুক নির্ধারণ হয়। দিনমজুর চিতু বর্মণ একটি দুধেল গাভী বিক্রি করে বর পক্ষকে ৩০ হাজার টাকা দেন। বাকী ১ লাখ টাকা দিতে প্রকাশের বাবা-মার কাছে সময় চেয়ে নেন।

বিয়ের আসরে প্রকাশ ও তার বাবা-মা কোনো অমত করেননি। তারা নববধূকে বাড়িতে তোলেন। দুয়েকদিন পরেই যৌতুকের বাকী ১ লাখ টাকা দিতে চিতু বর্মণকে চাপ দেওয়া হয়। অসহায় দিন মজুরের পক্ষে চাওয়ামাত্র টাকা দেওয়া সম্ভব নয়। সেজন্য অন্তঃস্বত্ত্বা মেয়েটির ওপর নির্যাতন চালান প্রকাশ ও তার পরিবার।

নির্যাতন সহ্য করে কিশোরী মেয়েটি শ্বশুর বাড়িতেই পড়ে থাকে। এতেও শেষ রক্ষা হয়নি। বিয়ের ১২ দিন পর স্বামী প্রকাশ চন্দ্র রায় আরেকটি বিয়ে করেন। নতুন স্ত্রীকে ঘরে তুলে অমানবিক নির্যাতন করে অন্তঃস্বত্ত্বা স্ত্রীকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। বর্তমানে মেয়েটি বাবার বাড়িতে চরম মানবেতর জীবন যাপন করছে।

এ ঘটনায় চিতু বর্মণ জামাই প্রকাশ ও তার বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে বদরগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। গত ২০ আগস্ট তিনি অভিযোগটি দায়ের করেন। তবে থানায় এখন পর্যন্ত সেটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়নি।

বদরগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) আরিফ আলী জানান, বিষয়টি তদন্তের জন্য এসআই রবিউল ইসলামকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

এসআই রবিউল ইসলাম বলেন, ‘প্রকাশ ও তার পরিবারের লোকজন আত্মগোপনে থাকায় অধিক তদন্ত করতে হচ্ছে। এ কারণে অভিযোগটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়নি।’ রাইজিংবিডি/রংপুর/২৮ আগস্ট ২০১৯/নজরুল মৃধা/সনি