ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : ‘বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সজল আমাকে ধর্ষণ করেছে। আমি তাকে বিয়ে করতে বলেছি। কিন্তু সে তাতে রাজি না। তাই আমি তার বাড়িতে বিয়ের দাবিতে অনশন শুরু করেছি। আমি তাকে বিয়ে করব। অন্যথায় এখানেই আমি মরব।’
বিয়ের দাবিতে ছেলের বাড়িতে বসে ক্ষোভের সাথে কথাগুলো বলছিলেন ২০ বছরের এক তরুণী। তিনি গত ১০ দিন ধরে ছাত্রলীগ নেতা সাজেদুল ইসলাম সজলের (২৫) বাড়িতে বসে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন।
সজল সদর উপজেলার রুহিয়া পশ্চিম ইউনিয়নের কানিকশালগাঁও গ্রামের হামিদুল ইসলামের ছেলে। তিনি রুহিয়া পশ্চিম ইউনিয়নের ছাত্রলীগের সভাপতি। তবে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে তাকে পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সানোয়ার পারভেজ পুলক।
সজলের বাবা হামিদুল ইসলাম জানান, গত ৩১ আগস্ট থেকে ওই তরুণী তাদের বাড়িতে অবস্থান করছেন। এর আগে ওই তরুণী সজলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেছিলেন। সে মামলায় পুলিশ তাকে আটক করে। সজল জামিনে মুক্ত হওয়ার দিন থেকে অনশন শুরু করেন ওই তরুণী।
তিনি বলেন, ‘ধর্ষণ মামলায় আমার ছেলে ৬১ দিন কারাগারে ছিল। উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়ে গত ৩১ আগস্ট সজল বাড়ি ফেরে। সেদিনই তার প্রেমিকা আমাদের বাড়িতে চলে আসে। সে তার পরিবারের লোকজনের সহায়তায় বাড়ির একটি কক্ষে ঢুকে বিয়ের দাবিতে অনশন শুরু করে। বাধা দিলে তারা আমার স্ত্রী, মেয়ে ও শাশুড়িকে মারধর করে। এ ঘটনায় আদালতে একটি মামলাও দায়ের করা হয়েছে। বর্তমানে মেয়েটি আমাদের বাড়িতেই রয়েছে।’
সজলের মা সাহেরা বানু বলেন, ‘আমার ছেলের সাথে মেয়েটির প্রেমের সম্পর্ক ছিল এটা সত্য। গত ২৪ জুন ওই মেয়ের পরিবারের লোকজন আমার ছেলেকে ধরে নিয়ে তাদের বাড়িতে আটকে রাখে। তারা বিয়ের জন্য সজলকে চাপ দেয়। সজল রাজি না হওয়ায় ২৬ জুন সজলের বিরুদ্ধে রুহিয়া থানায় ধর্ষণ মামলা করে ওই মেয়ে।’
বিয়ের দাবিতে অনশনরত ওই তরুণী বলেন, ‘বিয়েতে রাজি না হওয়ায় থানায় মামলা করেছি। জেলে থাকার সময় সজল বলেছিল, সে যেদিন জেল থেকে বের হবে সেদিন যেন আমি তার বাড়িতে যাই। তাই এসেছি। কিন্তু এখন সে বিয়ে করছে না। তা ছাড়া এখানে অনশন করতে এলে সজলের পরিবার আমাকে মারধর করেছে।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে সজলকে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
বিষয়টি নিয়ে ১ নম্বর রুহিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল হক বাবু, ২১ নম্বর রুহিয়া পশ্চিম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অনিল কুমার সেন ও সালন্দর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুব আলম মুকুল মীমাংসার চেষ্টা করলেও তাতে ব্যর্থ হয়েছেন।
মনিরুল হক বাবু বলেন, ‘মেয়েপক্ষ সমাধানে রাজি হয়েছে, তবে ছেলেপক্ষ রাজি নয়। আমরা অনেকবার ছেলেপক্ষকে সমাধানের কথা বলেছি। তবে তাদের দিক থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।’
২১ নম্বর রুহিয়া পশ্চিম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অনিল কুমার সেন জানান, বিষয়টি দ্রুত সমাধানের জন্য চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
এদিকে ওই তরুণীর করা ধর্ষণ মামলার অগ্রগতি জানতে চাইলে রুহিয়া থানার ওসি প্রদীপ কুমার রায় বলেন, ‘আমরা এখনো মেয়েটির মেডিক্যাল রিপোর্ট হাতে পাইনি। সেটা পেলে অগ্রগতি বলা যাবে।’ রাইজিংবিডি/ঠাকুরগাঁও/৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯/তানভীর হাসান/সনি