সারা বাংলা

কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে সক্রিয় চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ

ঘটনা ১ :  অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া স্কুলছাত্র বাবার কাছে পাঁচ হাজার টাকা চাইলো। বাবা টাকা দিতে অস্বীকার করেন। সন্তানের কান্নাকাটি এবং মায়ের অনুরোধে অবশেষে সন্তানকে পাঁচ হাজার টাকা দেন বাবা। সেই স্কুলছাত্রটিকে আরো তিন বন্ধুসহ আটক করে চট্টগ্রাম কোতোয়ালী থানা পুলিশ। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ধারালো ছুরি এবং হকিস্টিক। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ওই স্কুলছাত্র জানিয়েছে বাবার কাছ থেকে কান্নাকাটি করে নেয়া পাঁচ হাজার টাকা দিয়েই এই ছোরা ও হকিস্টিক কেনে তারা।

ঘটনা ২ : দুপুর দুইটা, গায়ে স্কুল ইউনিফর্ম। কাঁধে ব্যাগ। স্কুল কিংবা কলেজেই থাকার কথা তাদের। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নয়, তাদের সবাইকেই পাওয়া গেল চট্টগ্রামের নিউ মার্কেটে! কেউ দল বেঁধে সিগারেট ফুঁকছে। আর কেউ মার্কেটে আসা মেয়েদের উত্ত্যক্ত করছে। মার্কেট সমিতির অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে।

অভিভাবকদের ডেকে এনে প্রথমবারের মতো সতর্ক করা হয়। পরে অভিভাবকের জিম্মায় তাদেরকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। তবে দ্বিতীয়বার এভাবে পাওয়া গেলে সরাসরি কারাগারে পাঠানোর কথাও জানিয়ে দেয় পুলিশ।

কিশোর গ্যাং-এর তৎপরতা বন্ধ এবং কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণে এভাবেই কাজ করছে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ। সমগ্র চট্টগ্রাম মহানগরীতে সার্বক্ষণিক কঠোর অবস্থান এবং নজরদারিতে থেকে কিশোর গ্যাং যাতে কোনোভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে এ ব্যাপারে সতর্কতামূলক অবস্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম মহানগরীর প্রতিটি থানা। নগর পুলিশ কমিশনার মাহবুবর রহমানের সার্বিক নির্দেশনায় কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে থেকে কাজ কারছেন নগর পুলিশের প্রতিটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।

কোনো কিশোর দলকে সময়ে অসময়ে আড্ডা, অযাচিত ঘোরাঘুরি, সিগারেট খাওয়া, সন্দেহজনক গতিবিধি, বখাটেপনা বা কাউকে উত্যক্ত করতে দেখলেই পুলিশ তাদেরকে আটক করছে। গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে মামলা দিয়ে কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানো হচ্ছে। লঘু অপরাধের ক্ষেত্রে প্রথমবার সতর্ক করে অভিভাবকের জিম্মায় দেয়া হচ্ছে।

নগরীর কোতোয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মহসিন রাইজিংবিডিকে জানান, চট্টগ্রাম মহানগরীতে কিশোর গ্যাং বা কিশোর অপরাধ বন্ধে কঠোর অবস্থানে থেকে কাজ করছে পুলিশ। গত দুই মাসে নগরীতে প্রায় অর্ধশতাধিক কিশোর অপরাধীকে আটক করা হয়। এদের অনেককে সতর্ক করে অভিভাবকের জিম্মায় দেয়া হয়।

কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণে অভিভাবকদের সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন রাইজিংবিডিকে বলেন, সন্তানের অযৌক্তিক দাবির কাছে হারবেন না। তাহলে হয়ত একদিন সন্তানটাকেই হারিয়ে ফেলবেন।

বাবার কাছ থেকে কান্নাকাটি করে পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে সেই টাকায় ধারালো ছোরা ও হকিস্টিক কেনার উদাহারণ টেনে ওসি মহসিন রাইজিংবিডিকে বলেন, অভিভাবকরা সচেতন না হওয়ায় এই সন্তানকে পুলিশের হাতে আটক হতে হয়েছে। সন্তান স্কুল কলেজ বা কোচিং-যাওয়ার নাম করে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত বাসার বাইরে থাকলে অনেক অভিভাবক খোঁজই রাখেন না। আবার সেই সন্তানকে পুলিশ আটক করার পর অভিভাবককে ফোন করা হলেও অভিভাবক বিশ্বাসই করতে চাননা। এই অধরণের অসচেতন অভিভাবকের কারণে কিশোররা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে বলে এই পুলিশ কর্মকর্তা অভিমত ব্যক্ত করেন।

চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (পিআর এন্ড আইসিটি) আবু বকর সিদ্দিক রাইজিংবিডিকে জানান, পুলিশ কমিশনার মাহবুবর রহমানের নির্দেশনা নগরীর প্রতিটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। একই সাথে কাজ করছে নগর গোয়েন্দা পুলিশসহ পুলিশের অন্যান্য ইউনিটও।

 

চট্টগ্রাম/রেজাউল/বুলাকী