সারা বাংলা

ডালের বড়ির গ্রাম

শীত আসছে তাই ডালের বড়ি তৈরির ধুম পড়েছে গাইবান্ধার বোয়ালী গ্রামে।

নানা রকম সব্জির সাথে এই ডালের বড়ি অত্যন্ত সুস্বাদু । দেশে বিদেশে অনেক স্থানে রয়েছে ক্রেতা চাহিদাও। বিক্রিও হয় বেশ চড়া দামে। তাই বোয়ালী গ্রামের মানুষের এখন ঘুম হারাম । রাত জেগে বড়ি তৈরিতে ব্যস্ত সবাই ।

বোয়ালী গ্রামটি গাইবান্ধা শহর থেকে সোজা উত্তরে। এ গ্রামে সংখ্যালঘু পরিবারের বসবাস। তাদের অন্যকোন পেশা নেই। এ গ্রামের বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল-কলেজের মেধাবী ছাত্রছাত্রীরাও পড়ালেখার ফাঁকে ডালের বড়ি তৈরিতে সময় দিচ্ছেন । পিতা মাতাকে সহযোগিতা করছেন। কারণ এটা পরিবারের বাড়তি আয়ের অন্যতম একটি উৎস।

ডালের বড়ির উপকরণও সাদামাটা। প্রথমে মাস কলাইয়ের ডাল গুঁড়ো করতে হয়। তারপর ডালে চাল কুমড়া, কালো জিরা, পানি ও লবণ মিশিয়ে তৈরি হয় বড়ি। এগুলো মিশিয়ে ভালোভাবে ফেটে মিশিয়ে  নিতে হয় । তারপর শৈল্পিক হাতের ছোঁয়াতেই তৈরি হয় ডালের বড়ি ।

শুধু তৈরি হলেই শেষ নয়, চড়া রোদে শুকনো পরিস্কার কাপড় বিছিয়ে দেয়া হয়। তারপর সবকিছু উপকরণ মেশানো ডালের মণ্ড হাতের মুষ্ঠিতে চেপে চেপে বিশেষ কায়দায় কাপড়ের উপরে রাখতে হয়। নির্দিষ্ট আকারের বড়িগুলো তখন দেখতেও চমৎকার লাগে। সবশেষে রোদে শুকিয়ে তৈরি হয় ডালের বড়ি।

বোয়ালী গ্রামের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া সরেন দাস বলেন, ‘ছুটি পেলেই বাড়ি আসি বাবা-মাকে সহযোগিতা করার জন্য। কারণ, এই বড়ি বিক্রির টাকায় আমার পরিবার চলে, আমার পড়ালেখার খরচ চলে। আর ডাল দিয়ে তৈরি সুস্বাদু বড়ি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি হয়। আর এজন্য এখানকার মানুষের মুখে মুখে এই গ্রামটি বড়ির গ্রাম হিসাবে পরিচিত।’

এখানের প্রাক্তন ইউপি চেয়ারম্যান সাবু মিয়া বলেন, ‘শীতের শুরুতেই পুরো গ্রাম জুড়ে কাকডাকা ভোর থেকে ডাল পেষা, যাঁতায় গুঁড়ো করা সহ নানান শব্দে মুখরিত হয় গ্রামটি । কেউ ডালের গা থেকে ছাল ছাড়ায়, কেউ ডাল ধুয়ে পরিস্কার করে, কেউ শিলপাটায় ডাল গুঁড়া করে, আবার কেউ চাল-ডাল একসাথে গুলিয়ে বড়ি তৈরি করে শুকোতে দেয়। শুকিয়ে ঝনঝনে হলে তবেই বাজারে বা পাইকারদের কাছে বিক্রি করা হয়।’

নওশের আলম বলেন, ‘শীতের সব্জির সাথে ডালের বড়ি থাকলে আর কথা নেই। এ অঞ্চলের মানুষের কাছে খাবারের সাথে ডালের বড়ি তরকারীতে থাকবেই।’

প্রবীণ এক গ্রামবাসী বললেন, বড়ি তৈরি তাদের বাপ দাদার পেশা। শরীরের খাটুনী একটু বেশি হয়, তবে প্রচুর চাহিদা এই বড়ির। ডাল-চালসহ অন্যান্য সামগ্রীর দাম কম হলে বড়ির দামও কমে আসতো। সে কারণে আগের মতো আর লাভ আসে না। তারপরও এই পেশায় এই গ্রামের তিন শতাধিক সংখ্যালঘু পরিবার খেয়ে পড়ে ভালোই আছে।

জানা যায়, প্রতি কেজি ডালের বাড়ি তৈরি করতে খরচ পড়ে অন্তত ১৭৫ টাকা । কিন্তু তারা বিক্রি করেন ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। প্রতিটি পরিবার দিনে ১০ কেজি পর্যন্ত এই বড়ি তৈরি করতে পারেন। গাইবান্ধা/সিদ্দিক আলম দয়াল/টিপু