সারা বাংলা

এমন নির্মম পাশবিক হত্যাকাণ্ড!

মাত্র পাঁচ বছর বয়স তুহিনের। অন‌্যান‌্য আর পাঁচটি শিশুর মতোই বাবা-মায়ের আদরের ধন। নিষ্পাপ এই শিশুটিকে নৃশংস-বর্বোরচিত কায়দায় হত‌্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।

ছেলেটির কান ও লিঙ্গ কেটে ফেলা হয়েছে। পেটে দু’টি বড় সাইজের ছুরি ঢোকানো। গলা কেটে তারপর ফাঁস পরিয়ে গাছে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। বর্ণনাতীত এই নৃশংসতা নিয়ে এলাকাবাসীর মধ‌্যে চরম প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে রাজানগর ইউনিয়নের কাজাউড়া গ্রামে রোববার (১৩ অক্টোবর) রাতে ঘটনাটি ঘটেছে। কাজাউড়া গ্রামের আব্দুল বাছিরের ছেলে তুহিন।

শিশুটি কার কী ক্ষতি করেছে যে তাকে এমন নিষ্ঠুর হত‌্যাকাণ্ডের শিকার হতে হলো? এই প্রশ্ন ঘুরে বেড়াচ্ছে এলাকাবাসীর মনে। তারা অমানবিক এ ঘটনার উপযুক্ত বিচার চান।

নিহতের স্বজন সাংবাদিক ইমরান হোসাইন রাইজিংবিডিকে জানান, রোববার দিবাগত রাতে খাবার খেয়ে পরিবারের সবাই ঘুমিয়ে পড়ে। রাত তিনটার দিকে তুহিনের চাচাতো বোনের ঘুম ভেঙ্গে গেলে তিনি ঘরের দরজা খোলা দেখে ডাকাডাকি শুরু করেন।

পরিবারের সদস্যরা ঘুম থেকে উঠে তুহিনকে ঘরে দেখতে পাননি। তখনই খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। এক পর্যায়ে বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে মসজিদের পাশে একটি গাছে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায় তুহিনকে। গলা কাটা, পেটে দু’টি বড় সাইজের ছুরিবিদ্ধ এবং লিঙ্গ ও কান কাটা অবস্থায় পাওয়া যায় তাকে।

শিশুটির বাবা আব্দুল বাছির বলেন, ‘এক সময় গ্রামের কারো কারো সাথে আমার দ্বন্দ্ব থাকলেও এখন কারো সাথেই কোনো মতবিরোধ বা ঝগড়া ছিল না। আমার উপর প্রতিশোধ নিতে কেউ আমার ছেলেকে খুন করবে এমনটাও ভাবতে পারছি না। তা ছাড়া এতটুকু শিশু কার কী ক্ষতি করেছে যে তাকে এমন নৃশংসভাবে মরতে হলো? আমি এর দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।’ এ কথা বলার সময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।

এদিকে, খবর পেয়ে সোমবার সকালে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় দিরাই থানার পুলিশ। লাশটি উদ্ধার করে তারা ময়নাতদন্তের জন্য সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠিয়েছেন। লাশ উদ্ধারের সময় ঘটনাস্থলে এক হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তুহিনের আত্মীয় পরিজনসহ এলাকাবাসী আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তাদের আহাজারিতে সেখানকার পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে।

দিরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কেএম নজরুল ইসলাম রাইজিংবিডিকে জানান, কাজাউড়া গ্রাম থেকে একটি শিশুর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় শিশুটির বাবা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে মামলার আগেই ঘাতকদের গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান শুরু করেছে।

এদিকে সুনামগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এসময় ডিআইওয়ান আনোয়ার হোসেন মৃধা, ডিবির ওসি কাজি মুক্তাদির হোসেন নিহতের বাবা আব্দুল বাছিরসহ চারজনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসেন।

আরো পড়ুন > নির্মমভাবে শিশু হত‌্যায় বাবা-চাচাসহ আটক ৭ সুনামগঞ্জ/আল আমিন/বুলাকী/সনি