সারা বাংলা

তবিতা রাণীর রুট বদল

লক্ষ্মীপুর শহরের উত্তর তেমুহনী এলাকায় এখন শাকসবজি বিক্রি করছেন তবিতা রাণী।

তার ভাসমান দোকানে মিলছে স্থানীয় বিভিন্ন নামের শাক। যার অনেক নাম অনেকের কাছেই অজানা। যেমন- আলমিস, ঢেঁকি, হেলেনচা, রুপা, কালি কিচ্ছা, কলাকচু, তালমাহদ, সুরমা, শিয়াল মুত্রা, থানকুনির শাক ইত্যাদি। স্থানীয় অদ্ভূত সব নাম। বিক্রি করছেন । এছাড়াও আলু, কচু, ধনিয়া পাতা, কচুর লতি এসবও বিক্রি করছেন। তবিতা রাণী এসব শাকসবজি সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করেন। এরপর সন্ধ্যায় জেলার উত্তর তেমুহনীসহ শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সেগুলো বিক্রি করছেন।

স্বামী পরিত্যক্তা এই নারীকে আগে লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন স্থানে ভিক্ষা করতে দেখা যেতো। সম্প্রতি তিনি ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে শাক-সবজির ব্যবসায়ী হয়ে উঠেছেন। ভিক্ষাবৃত্তি তার কাছে অসম্মানজনক পেশা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তবিতা রাণীর বাড়ি চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলায়। গত ১১ বছর পূর্বে ভারতের বাসিন্দা বেছারামের সাথে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই ভালই ছিলেন। কিন্তু এক বছর আগে আরেকটি বিয়ে করে তার স্বামী ভারতে পাড়ি জমান। এরপর দু’চোখে অন্ধকার দেখেন তবিতা। জীবন বাঁচানোর তাগিদে ভিক্ষাবৃত্তিকে নামতে হয় তাকে। ভিক্ষা করেই জেলা শহরের একটি কিন্ডার গার্ডেনে মেয়ে বিপাশা রাণী বৃষ্টিকে (১০) পড়ালেখার খরচের জোগান দেন। যদিও শেষপর্যন্ত তাও আর হয়ে ওঠে না। বন্ধ হয়ে যায় বৃষ্টির পড়ালেখা।  

তবিতা রাণী জানান, ছেলে জয়ন্তকে গর্ভে দু’মাসের রেখে চলে যান তার স্বামী। তাকে আর্থিকভাবেও নিঃস্ব অবস্থায় রেখে যান । দু’সন্তান নিয়ে ভিক্ষা করেই বেঁচেছিলেন তিনি। এক মাস হয়ে গেছে লজ্জার পেশাটি ছেড়ে ব্যবসা করছেন। এখন তিনি মানসিকভাবে অনেক ভাল আছেন। কারো ওপর নির্ভর করতে হচ্ছেনা। সম্মানজনকভাবে নিজেই নিজের আহার জোগাচ্ছেন। আর এ আয় দিয়েই সন্তানদের উচ্চ শিক্ষিত করতে চান তিনি। যাতে কখনোই বাঁচার জন্য ভিক্ষা করতে না হয় সন্তানদের। মেয়েকেও পুনরায় স্কুলে ভর্তি করাতে চান।

তবিতার ব্যবসা দেখে অনুপ্রাণীত হয়েছেন লক্ষ্মীপুরের খালেদা ও মঞ্জুমা বেগমও। তারাও রুট বদলে ফেলেছেন। ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে দিয়ে শহরের বিভিন্ন স্থানে শাক বিক্রি করছেন। কথা হলে খালেদা বেগম জানান, ভিক্ষা করলে খরচ বাদ দিয়ে দৈনিক ৬ শ থেকে ১ হাজার টাকা আয় হতো। এখন সব খরচ বাদে ৪ শ থেকে ৬ শ টাকা আয় হয়। আয় কম তবুও সুখ আছে।

তবিতার ভাসমান দোকানে আসা শিক্ষক মমিন উল্ল্যাহ জানান, ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে ব্যবসা করা তবিতাদের দোকান থেকে শাক-সবজি কিনছেন এজন্য, যাতে তারা অনুৎসাহিত হয়ে পুনরায় ভিক্ষার ঝুলি হাতে না নেয়। তিনি সকলের প্রতি আহবান জানান এই অসহায় নারীদের দোকান থেকে ক্রয় করার জন্য।

লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক অঞ্জন চন্দ্র পাল জানান, ভিক্ষা ছেড়ে ব্যবসা করা এটি নিঃসন্দেহে ভালো কাজ। খোঁজ নিয়ে তবিতাদের সহযোগিতা করবেন বলেও তিনি জানান।

 

লক্ষ্মীপুর/ফরহাদ হোসেন/টিপু