সারা বাংলা

প্রসূতির মৃত্যুতে ডাক্তারসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা

সিরাজগঞ্জে ‍ভুল চিকিৎসায় প্রসূতি রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় ডা. এসএম সুমনুল হক সজীবকে প্রধান আসামি করে তিনজনের নামে মামলা হয়েছে।

মঙ্গলবার মৃত প্রসূতির স্বামী মনিরুল ইসলাম মোকাম-বিজ্ঞ সিরাজগঞ্জ সদর থানা আমলী আদালতে বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।

ডা. এসএম সুমনুল হক সজীব (৪০) কামারখন্দ উপজেলা ৫০ শয্যা বিশিষ্ঠ হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও)। এ মামলায় অন‌্য দুই আসামি হলেন- ল্যাব এইচ হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক সাইফুল ইসলামের ছেলে মো. ফিরোজ (৩৮) ও ম্যানেজার মো. ফরিদুল ইসলাম (৩৫)।

নিহত প্রসুতি রাশিদা বেগম (৩০) সদর উপজেলার সয়দাবাদ ইউনিয়নের পঞ্চসোনা গ্রামের মনিরুল ইসলামের স্ত্রী।

রাশিদা বেগমকে সদর উপজেলার কড্ডার মোড়ে ল্যাব এইচ হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামে একটি ক্লিনিকে সিজার অপারেশন করেন ডা. সমনুল হক।  অপারেশনের ১৫ দিন পর রাশিদা বেগমের মৃত্যু হয়। ভুল অপারেশনের কারণেই প্রসুতির মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেন মৃতের স্বামী মনিরুল ইসলাম।

মৃত রাশিদা বেগমের ভাই হারিজ আলী শেখ জানান, ৫ অক্টোবর প্রসব ব্যাথা নিয়ে রাশিদাকে এলাকায় ল্যাব এইচ হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি করা হয়। ওইদিন বিকেল ৩টায় ডা. সুমনুল হক তার সিজার করেন। অপারেশনের পর নবজাতক সুস্থ থাকলেও প্রসূতি ধীরে ধীরে অসুস্থ হয়। তাকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ৬ দিন চিকিৎসার পর অবস্থার অবনতি হলে প্রথমে ঢাকার হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল ও পরে লালমাটিয়ায় রয়েল হাসপাতাল এবং সবশেষে মিরপুরের ডেলটা হাসপাতলে নেওয়া হয়। এসব হাসপাতালের চিকিৎসকগণ রোগীকে ফিরিয়ে দিলে শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। মুমূর্ষু অবস্থায় তিনদিন থাকার পর রোববার (২০অক্টোবর) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে রাশিদার মৃত্যু হয়।

মৃত রাশিদা বেগমের ভাই হাফিজুল শেখ জানান, বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসরা আমার বোনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানিয়েছেন, অপারেশনের সময় কিডনির একটি শিরা কেটে ফেলা হয়েছে। এতে রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ার কারণে রোগী মারা গেছে।

মৃতের স্বামী মনিরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, চিকিৎসার সময় হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা ও অপারেশনে চিকিৎসকের ত্রুটির কারণে তার স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া ডা. সুমনুল হক সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক হয়েও তিনি প্রাইভেট ক্লিনিক ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে সময় দেন। নিয়মিত রোগী দেখেন এবং অপারেশন করান।

এছাড়া সিরাজগঞ্জ সদরে ডা. এমএম সমনুল হক সজীব অনুমোদন না নিয়েই তার স্ত্রী ডা. মোমেনা পারভীনকে (পারুল) দিয়ে নিউ এ্যাপোলো হাসপাতাল নামে একটি প্রাইভেট হাসপাতাল পরিচালনা করারও অভিযোগ রয়েছে।

মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘ডা. সুমনুল হকের ভুল চিকিৎসার কারণে আমার স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে। আদালতে এ ঘটনায় মামলা করেছি। এখন ডাক্তারের দ্রুত গ্রেপ্তার কামনা করি ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’

এ বিষয়ে ডা. এমএম সুমনুল হকের সাথে কথা বলতে গেলে তিনি সাংবাদিকদের সাথে খারাপ আচরণ করেন। এসময় তিনি নিজেকে একজন সাংবাদিক দাবি করে অশালীন ভাষায় কথা বলেন। 

এ ব্যাপারে কামারখন্দ স্বাস্থ্য ও উপজেলা পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. ফারুক আহমেদ রাইজিংবিডিকে বলেন, প্রসূতী মৃত্যুর ঘটনা পত্রিকায় দেখেছি। এব্যাপারে সিভিল সার্জন অফিস থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত অনুযায়ী সিভিল সার্জন অফিস প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

সিরাজগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. জাহিদ হোসেন রাইজিংবিডিকে বলেন, ডা. সমনুল হক সজীবের বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসায় রোগী মারা যাওয়ার বিষয়টি শুনেছি। এঘটনায় তিন সদস্য বিশিষ্ঠ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত রিপোর্টের পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সেই সাথে নিউ এ্যাপোলো হাসপাতাল লাইসেন্স বিহীন চললে তার বিরুদ্ধেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সিরাজগঞ্জ/অদিত্য রাসেল/বুলাকী