সারা বাংলা

উত্তাল সাগরেই নামছেন পর্যটকরা

ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে কক্সবাজারে উত্তাল সাগর। জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ থেকে ৫ ফুট উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে। তারপরও পর্যটকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্রস্নানে ব্যস্ত।

ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে কক্সবাজারকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অফিস। এর প্রভাবে সাগরে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ থেকে ৫ ফুট উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে। তাই কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সবকটি পয়েন্টে টাঙানো হয়েছে লাল পতাকা।

কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান জানান, ঘূর্ণিঝড় বুলবুল কক্সবাজার থেকে প্রায় ৭০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। এ কারণে কক্সবাজারে হাল্কা ও ঝড়ো বৃষ্টি বয়ে যেতে পারে। আর সাগরে জোয়ারের পানির উচ্চতাও বৃদ্ধি পেয়েছে।

এদিকে, লাল পতাকা ও লাইফ গার্ড কর্মীদের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে উত্তাল সাগরে স্নান করছেন পর্যটকরা।

ঢাকা থেকে আসা রবিন বলেন, ‘যান্ত্রিক জীবন ছেড়ে ছুটি পেয়ে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ছুটে এসেছি। এখানেও দেখি প্রকৃতি বিরূপ আচরণ করছে। কিন্তু করার কিছু নেই। একটু আনন্দ করার জন্য এসেছে তাই নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও সাগরে নেমে গোসল করে জীবনকে উপভোগ করছি।’

ছৈয়দুল আমিন নামে আরেকজন  বলেন, ‘কাল কক্সবাজার ছেড়ে ঢাকা চলে যাব। তাই একটু সাগরে নেমে গোসল করছি।’

সৈকতের লাবনী পয়েন্টে দায়িত্ব থাকা সী-সেইভ লাইফ গার্ডের ইনচার্জ মোহাম্মদ চিরু বলেন, ‘সাপ্তাহিক ছুটি হওয়াতে বিপুল সংখ্যক পর্যটক কক্সবাজার সৈকতে বেড়াতে এসেছেন। এছাড়া সেন্টমার্টিনে জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় অন্যরাও কক্সবাজার সৈকতে ভীড় করছে। ফলে বেড়াতে আসা পর্যটকদের সমুদ্র স্নানে নিরাপত্তায় হিমশিম খেতে হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে সাগর উত্তাল থাকায় পর্যটকদের নিষেধ করা হচ্ছে। তবে কেউ এই নিষেধাজ্ঞা মানছেন না। অসতর্ক অবস্থায় সৈকতে গোসল করছে। তবে আমরাও চেষ্টা করছি তাদের নিরাপত্তা দেয়ার।’

এদিকে হুঁশিয়ারি সংকেতের কারণে সাগর থেকে কক্সবাজার উপকূলে ফিরছে মাছ ধরার ট্রলারগুলো। বিকেলের মধ্যেই সব ট্রলার ফিরে আসবে বলে জানান ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতি।

কক্সবাজার ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন জানান, কক্সবাজার উপকূলে প্রায় চার হাজার ট্রলার ফিরে এসেছে। বাকি যে হাজার খানেক ট্রলার রয়েছে তাও বিকেলের মধ্যে ফিরে আসবে।

অপরদিকে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে বন্ধ রয়েছে পর্যটকবাহী তিনটি জাহাজ চলাচল। ফলে শুক্রবার সকালে সেন্টমার্টিনে যেতে পারেনি প্রায় দেড় হাজার পর্যটক। এছাড়া বুধবার ও বৃহস্পতিবার সেন্টমার্টিনে যাওয়া প্রায় সহস্রাধিক পর্যটক সেন্টমার্টিনে আটকা পড়েছে।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আহমেদ বলেন, দ্বীপে বেড়াতে এসে সহস্রাধিক পর্যটক আটকা পড়েছেন। তাদের কাছ থেকে কেউ যাতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় না করে সেজন্য হোটেল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বৈরী আবহাওয়ায় কোনো পর্যটক যাতে সমুদ্রে স্নান করতে না নামেন, সে বিষয়ে সৈকত কর্মীদের সর্তক করা হয়েছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) টেকনাফ অঞ্চলের সমন্বয় কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন জানান, দুর্ঘটনা এড়াতে এই রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। দ্বীপে বেড়াতে এসে আটকা পড়া পর্যটকেরা নিরাপদে রয়েছে। আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে আটকে পড়া পর্যটকদের ফিরিয়ে আনা হবে।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, টেকনাফ থেকে পর্যটকবাহী কোনো জাহাজ সেন্টমার্টিনে যেতে দেওয়া হয়নি। যেসব পর্যটক টিকিট কেটেছিলেন তাদের টাকা ফেরত দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ভ্রমণে এসে দ্বীপে আটকা পড়া পর্যটকেরা যাতে নিরাপদে রাত্রিযাপন করতে পারে সেজন্য সেখানকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সর্তক থাকতে বলা হয়েছে।

 

কক্সবাজার/ সুজাউদ্দিন রুবেল/শাহেদ