সারা বাংলা

বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য আশার আলো

‘সুইড বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়’ নরসিংদীর বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য আশার আলো। মো.জসিম উদ্দিন সরকার নিজ অর্থায়ন ও স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন।

তিনি নিজেই বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষককের দায়িত্ব পালন করছেন। জসিম উদ্দিন সরকার মনে করেন, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য প্রয়োজন বিশেষ শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ। উপযুক্ত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ পেলে তারাও হয়ে উঠতে পারে সমাজের অন্য সাধারণ শিশুদের মতোই কর্মক্ষম।

২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে নরসিংদীর রেলস্টেশন সংলগ্ন বটতলায় বিদ্যালয়টির যাত্রা শুরু। পরের বছর স্থানান্তরিত হয়ে শহরের ভেলানগর ব্যাংক কলোনিতে চার কক্ষের একটি ভাড়া বাসায় বিদ্যালয়টি পরিচালিত হয়ে আসছে।

২০১৫ সালে বিদ্যালয়টি সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বীকৃতি লাভ করে। ২০১৭ সালে তৎকালীন নরসিংদীর জেলা প্রশাসক ড. সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস বিদ্যালয়টির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসেন। এরপর এগিয়ে আসেন স্থানীয় বিভিন্নস্তরের স্বনামধন্য ব্যাক্তিরাও।

বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে ১৩০ জন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী রয়েছে। এদের জন্য নিয়োজিত রয়েছেন অবৈতনিক ১৪ জন শিক্ষক ও ৬ জন কর্মচারী। সুশীল সমাজের বিশিষ্ট কয়েকজনের মাসিক অনুদান ও কিছু সামর্থ্যবান শিক্ষার্থী অভিভাবক প্রদত্ত মাসিক বেতনে বিদ্যালয়টির কার্যক্রম চলছে।

শিক্ষক ও কর্মচারীদের প্রচেষ্টায় পাল্টে যাচ্ছে এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জীবনযাত্রার মান। তারা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন প্রতিবন্ধী কোনো রোগ নয়, এটা এক ধরনের অক্ষমতা, যা চিকিৎসা দিয়ে ভালো করা যায় না। তবে শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও খেলাধুলার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে নিয়ে যেতে ভূমিকা রাখা যায়।

বিদ্যালয়টির শিক্ষা কার্যক্রমের অন্যতম বিষয় হলো- বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের হাতের কাজ শিখানো, বিনোদনের মাধ্যমে শিক্ষাদান, খেলাধুলা, চিত্রাঙ্কন, শরীরচর্চা, দৈনন্দিন কাজ, কম্পিউটার, সেলাই, বুদ্ধি অনুযায়ী কাজ শিখানো, গান বাজনা, নাচ ইত্যাদি।

বিদ্যালয়টিতে মন্ত্রী, এমপি, সচিব, জেলা প্রশাসকসহ অনেক সরকারি-বেসরকারি উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাগণ বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করেছেন।

তাছাড়াও ইতালির নাগরিক গবেষণা ফেলো ভ্যালেরিয়া টোনিওলিও বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করে গেছেন। তিনি বিদ্যালয়ের কার্যক্রম দেখে সন্তোষ প্রকাশ করে পরিদর্শন বইতে মন্তব্য লিখে যান।

নরসিংদী জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন বিদ্যালটিতে একটি স্কুলভ্যান, কম্পিউটার, সেলাই মেশিন, ওভারলক মেশিন, প্রজেক্টর, টেলিভিশন ও অফিস টেবিলসহ ভোকেশনাল উপকরণ প্রদান করেছেন।

জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন বিদ্যালয়টির প্রতি খুবই মনযোগী। একবার তিনি পরিদর্শনে এলে তার চোখে পড়ে উচ্ছ্বল বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী জুয়েনাকে (১৮)। তারপর থেকে তিনি সবসময় জুয়েনার খোঁজখবর নিতেন। তিনি তার বিয়ের জন্য কর্মঠ ছেলে খোঁজ করতে বলেন। সেই সূত্র ধরে ক্যাবল নেটওয়ার্কের টেকনিশিয়ান মনির হোসেন (২৩) নামে এক যুবকের সন্ধান পাওয়া যায়। জুয়েনা ও মনিরের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দায়িত্ব নিয়ে তদারকি করেন জেলা প্রশাসক। জুয়েনা ও মনিরের বিবাহোত্তর উষ্ণ সংবর্ধনা ও দোয়া অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা ও তার স্বামী পুলিশের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক মো. সায়েদুর রহমান উপস্থিত থেকে নবদম্পতিকে আশির্বাদ করেন।

সরেজমিনে বিদ্যালয়টিতে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয় প্রবেশ করতেই ভেতর থেকে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার কলরব ভেসে আসে। ভেতরে সারি সারি বেঞ্চ-টেবিলে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানো হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের বয়স ৩ থেকে ১৫-এর মধ্যে। কয়েকজন ১৫ বছরেরও উর্ধ্বে। শিক্ষার্থীরা সবাই নরসিংদী সদর উপজেলার বাসিন্দা।

শিক্ষার্থী মুনিয়া আক্তারের মা নুপুর বেগম জানান, তাদের বাড়ি নরসিংদীর শেখেরচর, তারা স্বামী-স্ত্রী উভয়ই চাকরিজীবী। মুনিয়াকে স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করতে গেলে শিক্ষকরা মুনিয়ার আচরণ দেখে অটিজমে আক্রান্ত হওয়ায় ভর্তি না করে ফিরিয়ে দেন।

তিনি বলেন, ‘এই অবস্থায় নরসিংদীর শহরের এই স্কুলের খোঁজ নিয়ে তাতে ভর্তির সুযোগ পেয়ে আমি খুবই আনন্দিত। বর্তমানে মুনিয়া এখান থেকে নাচ এবং চিত্রাঙ্কন বিষয়ে খুবই ভালো করছে।’ নরসিংদী/ গাজী হানিফ মাহমুদ /টিপু