সারা বাংলা

হারিয়ে যাচ্ছে নবান্ন উৎসব

‘এই হেমন্তে কাটা হবে ধান, আবার শূন্য গোলায় ডাকবে ফসলের বান’। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য তার ‘এই নবান্নে’ কবিতায় এভাবেই বর্ণনা দিয়েছেন হেমন্ত ঋতুর।

আজ পয়লা অগ্রহায়ণ। ঋতু পরিক্রমায় এখন হেমন্ত। হেমন্ত মানেই নবান্ন উৎসব। নতুন ধানের চালে হবে নানা পদের খাবারের আয়োজন।

পাবনার চলনবিল অঞ্চলের মাঠে মাঠে সোনালী ধানের সমারোহ। বাতাসে দোল খাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন। নতুন আমন ধানের মৌ মৌ গন্ধ বাতাসে। চলছে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের ধুম। ফলন যেমনই হোক, কৃষকের মুখে ধানকাটার গান মনে করিয়ে দেয় নবান্ন উৎসবের কথা। ধান কেটে বাড়ি নেয়ার পর মাড়াই আর শুকানো। তারপর ধান থেকে চাল তৈরিতে ব্যস্ত কৃষাণীরা।

তবে দিনবদলের পালায় গ্রামের মানুষের কাছে অনেকটাই ফিকে হয়ে গেছে নবান্নের আনন্দ। আগে নতুন ধান গোলায় ওঠার সময়ে যেভাবে উৎসবের আমেজ বিরাজ করত, তা যেন ফিকে হয়ে যাচ্ছে। পিঠা-পায়েশের সেই আয়োজন আর তেমন চোখে পড়ে না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দিনবদলের হাওয়ায় সংস্কৃতি পাল্টে যাচ্ছে। ফলে হারিয়ে যাচ্ছে নবান্নের ঐতিহ্য।

পাবনা সদর উপজেলার মালঞ্চি গ্রামের মাঠে ধান কাটছিলেন কৃষক আমজাদ হোসেন, আবুল কাশেমসহ অনেকে। নবান্ন বা হেমন্ত সম্পর্কে তাদের তেমন একটা ধারণা না থাকলেও, এই সময়ে আমন ধানের চালে তৈরি পিঠা-পুলি খান বলে জানান। তারা বলেন, এই সময়টায় নতুন ধান কেটে বাড়িতে নেয়ার পর মাড়াই করতে হয়। সেই ধান শুকিয়ে মিলে ভাঙিয়ে চাল করতে হয়। তারপর সেই চালে তৈরি হয় পিঠা-পায়েশ।

আগে ঢেঁকিতে ধান ভানা ও পিঠা তৈরি করতেন গৃহিণীরা। মেয়ে-জামাতাসহ আত্মীয়-স্বজনদের দাওয়াত করে খাওয়ানো হতো। তবে এখন নাগরিক সংস্কৃতির আগ্রাসনে গ্রামীণ সংস্কৃতি যেন হারিয়ে যেতে বসেছে।

জেলার চাটমোহর উপজেলার মথুরাপুর গ্রামের নাসির উদ্দিনের স্ত্রী শামসুন্নাহার জানান, এখন সব বাড়িতে ঢেঁকি পাওয়া যায় না। পুরো গ্রাম ঘুরে হয়তো একজনের বাড়িতে ঢেঁকি পাওয়া যায়। ভালো পিঠা বানাতে ঢেঁকিতেই চাল কুড়ানো হয়। একজনের ঢেঁকিতে চাল কুড়াতে অনেকের ভিড় জমে। তারপরও এই সময় মেয়ে-জামাই বাড়িতে এনে পিঠা-পায়েশ খাওয়ানো খুব আনন্দের।

নবান্ন উৎসবের মতো গ্রামবাংলার অন‌্যান‌্য ঐতিহ‌্য হারিয়ে যাওয়ার বিষয়ে পাবনার চাটমোহরের লেখক ও নাট্যকার আসাদুজ্জামান দুলাল বলেন, আসলে এখন পারিবারিক বন্ধনটা আর আগের মতো নেই। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের প্রতি আত্মিক টান কমে যাচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে সংস্কৃতিতে। পিঠা-পুলি খাওয়ার ঐতিহ‌্য হারিয়ে যাচ্ছে। সংস্কৃতি পাল্টে যাওয়ার কারণে এখন আর নবান্ন উৎসব আগের মতো দেখা যায় না। নবান্নের উৎসব এখন মেকি আনুষ্ঠানিতকতার মধ‌্যে সীমাবদ্ধ।

 

পাবনা/শাহীন রহমান/রফিক