সারা বাংলা

একটি সেতুর অভাবে …

ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) উপজেলা কার্যালয়ে বার বার যোগাযোগ করে ক্লান্ত। দেড় বছর আগে স্থানীয় সংসদ সদস‌্য দিয়েছেন ডিও লেটার। তারপরও হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার ইয়ালা গ্রামের খালের ওপর একটি সেতু নির্মাণ হয়নি।

খালের ওপর সেতু না থাকায় দুটি স্কুলের সহস‌্রাধিক ছাত্রছাত্রীকে বাঁশের সাঁকোর ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। তিন গ্রামের কয়েক হাজার মানুষকে পোহাতে হচ্ছে ভোগান্তি।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হবিগঞ্জের হাওর অধ্যুষিত বানিয়াচং উপজেলার মক্রমপুর ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী গ্রাম ইয়ালা। গ্রামের পাশেই ইয়ালা খাল। খালের একদিকে ৫০ বছরের পুরনো ইয়ালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। অপরদিকে ২৫ বছরের পুরনো ইয়ালা উচ্চ বিদ্যালয়। প্রাথমিক বিদ‌্যালয়ে পড়ে প্রায় ৮০০ শিক্ষার্থী। উচ্চ বিদ‌্যালয়ে প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থী। এটি মক্রমপুর ইউনিয়নের একমাত্র উচ্চ বিদ‌্যালয়। এ বিদ‌্যালয়ের পাশে একটি মসজিদ ও বাজার।

খালের ওপরে থাকা বাঁশের সাঁকো দিয়ে ইয়ালা, সুলতানপুর ও কঢ়ুয়ার আব্দা গ্রামের ১৫ হাজার লোকজন যাতায়াত করে। সাঁকোর উভয় দিকে আছে সড়ক। কিন্তু সেতু না থাকায় ওই রাস্তার সুফল পাচ্ছেন না এলাকাবাসী।

ইয়ালা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল ওয়াহিদ বলেন, আমার স্কুলের শিক্ষার্থীদেরকে বাঁশের সাঁকো দিয়ে স্কুলে আসতে হয়। এতে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। হাওর এলাকার শিশুরা সাঁতার জানলেও অনেকেই পানিতে পড়ে গিয়ে জামা ও বই নষ্ট করে ফেলে। এখানে ব্রিজ নির্মাণ করা হলে শুধু শিক্ষার্থীরাই নয়, সাধারণ মানুষও উপকৃত হবে।

ইয়ালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রামেন্দ্র চন্দ দাশ বলেন, বর্ষকালে খালের ওপর বাঁশের সাঁকো দিয়ে শিশুরা বিপদজনক অবস্থায় চলাচল করে। জরুরি ভিত্তিতে এখানে ব্রিজ না হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

ইয়ালা গ্রামের ইউপি মেম্বার শাহ মো. নুরুল হক বলেন, এখানে ব্রিজের বিশেষ প্রয়োজন। শুধু স্কুল আর মসজিদ নয়, বাজারে যেতেও এই রাস্তা ব্যবহার করতে হয়। আমরা এ ব্যাপারে বার বার উপজেলা এলজিইডি অফিসে গেলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।

মক্রমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল আহাদ বলেন, আমি বার বার এলজিইডি অফিসে যোগাযোগ করেছি। একাধিকবার ইঞ্জিনিয়ারকে নিয়ে এসেছি। আমাদের এমপি অ‌্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খান ২০১৮ সালের ২৯ মার্চ একটি ডিও লেটার দিয়েছেন এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলীকে। তিনি ডিও লেটারে বলেছেন, সিলেট বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ১৫ মিটার দৈর্ঘ্য আর ৫ মিটার প্রস্থের একটি ব্রিজ নির্মাণ করার জন্য। কিন্তু রহস্যজনক কারণে এখানে ব্রিজ হচ্ছে না। গুরুত্ব বিবেচনায় এখানে ব্রিজ নির্মাণের পাশাপাশি উভয় দিকের সড়ক পাকা করা জরুরি।

হবিগঞ্জ এলজিইডির জ‌্যেষ্ঠ নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল বাছির বলেন, আমি এখানে নতুন এসেছি। তবে আমরা বেশকিছু ব্রিজের তালিকা তৈরি করেছি সম্ভাব্যতা যাছাই করার জন্য। এই ব্রিজটিও তালিকায় অন্তর্ভুক্তির চেষ্টা করব।

এ ব্যাপারে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে ছোট একটি ব্রিজের জন্য শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি মেনে নেয়া যায় না। এ ব্যাপারে উন্নয়ন সমন্বয় সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

 

হবিগঞ্জ/মো. মামুন চৌধুরী/রফিক