সারা বাংলা

মায়ের সঙ্গে আর কোনো দিন স্কুলে যাবে না আতিফুর!

রোববার সকাল ৮টা। বাবা আর ভাইয়ের সঙ্গে নাস্তা খেয়ে মাকে নিয়ে স্কুলের জন‌্য তৈরি আতিফুর। বাবা কর্মস্থল চট্টগ্রাম কোর্ট বিল্ডিং-এর উদ্দেশ্যে বিদায় দিয়েছেন। এরপর মা আর ভাইয়ের সঙ্গে স্কুলে যাচ্ছিল আতিফুর।

পথিমধ‌্যে পাথরঘাটা ব্রিক ফিল্ড এলাকায় গ্যাস লাইনের বিস্ফোরণে দেয়াল চাপা পড়ে মর্মান্তিকভাবে নিহত হন তার মা ফারজানা এবং ১০ বছর বয়সি ভাই আতিকুর। তবে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায় পাঁচ বছর বয়সি ছোট্ট আতিফুর রহমান।

ভাগ‌্যের নির্মম পরিণতিতে স্কুলে না গিয়ে যেতে হলো চট্টগ্রাম মেডিক‌্যাল কলেজে। ছোট্ট শিশু আতিফুর এখনো বুঝতেই পারছে না তার মা এবং বড় ভাই মারা গেছে। আর কোনো দিন মায়ের সঙ্গে সে আর স্কুলে যাবে না।

চট্টগ্রাম মেডি‌ক‌্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে ছোট সন্তানকে কোলে নিয়ে স্ত্রীর লাশের অপেক্ষা করছিলেন অ‌্যাডভোকেট আতাউর। ফারজানার স্বামী অ‌্যাডভোকেট আতাউর রহমান রাইজিংবিডিকে জানান, সকালে সন্তানদের আদর করে নিজের কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে বের হয়ে যাই। আমার স্ত্রী দুই সন্তানকে নিয়ে স্কুলে যাওয়ার পথেই এই দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। খবর পেয়ে দ্রুত ছুটে আসি হাসপাতালে।

বাবার কোলে অসহায় শিশুসন্তানটি তাকিয়ে আছে ফ্যালফ্যাল করে। সন্তান কোলে স্ত্রী ফারজানার জন্য আতাউরের নিরব কান্না উপস্থিত সবার চোখেই জল এনে দিয়েছে। স্ত্রীর লাশের অপেক্ষা করতে করতে এক পর্যায়ে জ্ঞান হারান আতাউর। পরে তার কাছ থেকে আর কোন তথ্য জানা সম্ভব হয়নি।

এদিকে পাথরঘাটার নিহত সাতজনের প্রত্যেকের পরিবারকে এক লাখ টাকা করে অনুদান দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। এছাড়া আহতদের প্রত্যেক্ষে চিকিৎসার জন্য ২০ হাজার টাকা করে দেয়া হবে বলে মেয়র জানান।

অপরদিকে নিহতদের লাশ পরিবহন ও দাফন কাফনের খরচ বাবদ প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে সহায়তা দেয়ার কথা জানিয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার নওফেলের ছোট ভাই সালেহীন। উপমন্ত্রীর পক্ষ থেকে এই সহায়তা দেয়া হবে বলে তিনি জানান।

এদিকে পাথরঘাটায় গ্যাস লাইন বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত নারী ও শিশুসহ সর্বমোট সাতজন নিহত এবং নয়জন আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

 

চট্টগ্রাম/রেজাউল/বুলাকী