সারা বাংলা

হাঁসের খামারে স্বাবলম্বী ছাত্রলীগ নেতা

রফিকুল ইসলাম ইফতি। নরসিংদীর পলাশ উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের ইছাখালি গ্রামের তার বাড়ি। দীর্ঘদিন ধরে গজারিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।

অনেকে যেখানে রাজনৈতিক পরিচয়ে অবৈধভাবে কাড়ি কাড়ি টাকা কামানোতে ব্যস্ত, সে সময়ে রফিকুল ইসলাম ইফতি ভাবেন, কীভাবে সৎ উপায়ে স্বাবলম্বী হওয়া যায়। সে ভাবনা থেকেই পৈতৃক সম্পত্তিতে গড়েছেন হাঁসের খামার। এই খামার থেকে প্রতি মাসে আয় করছেন লক্ষাধিক টাকা। খামারে কাজের সুযোগ করে দিয়েছেন এলাকার বেশকিছু বেকার যুবককে।

রফিকুল ইসলাম ইফতির হাঁসের খামারে গিয়ে দেখা যায়, খামার পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। এ সময় আলাপকালে ইফতি জানান, দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল ছিলেন না তিনি। বছরখানেক আগে পৈতৃক জমিতে একটি হাঁসের খামার করার চিন্তা করেন। প্রথমে নারায়ণগঞ্জ থেকে মাত্র ৬০০ হাঁসের বাচ্চা এনে ছোট আকারের খামার গড়ে তোলেন। এতে লাভ হওয়ায় ধীরে ধীরে খামারের পরিধি বাড়ান। বর্তমানে তার খামারে ২ হাজারের বেশি হাঁস আছে। এর মধ্যে ডিমপাড়া হাঁস আছে প্রায় ১ হাজার।

প্রতিদিন হাঁসের ডিম বিক্রি করে তার আয় হচ্ছে ৮ থেকে ৯ হাজার টাকা। এছাড়া, মাংসের জন্য এক একটি হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়। হাঁসের ডিম বিক্রির জন্য তাকে চিন্তা করতে হচ্ছে না। প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে বিভিন্ন পাইকার এসে রফিকুলের খামার থেকেই হাঁসের ডিম কিনে নিচ্ছেন।

রফিকুল ইসলাম ইফতি এ প্রতিবেদককে বলেন, একটা সময় নিজের হাতখরচের জন্য মায়ের কাছ থেকে টাকা চেয়ে নিতে হতো। কিন্তু এখন হাঁসের খামার দিয়ে আমি অনেক সচ্ছল। এখন মায়ের কাছে টাকা চাইতে হয় না, বরং প্রতি মাসে ভালো অঙ্কের টাকা মায়ের হাতে তুলে দিতে পারছি। এর থেকে বেশি আনন্দ আর হতে পারে না।

তিনি বলেন, আমার কখনো ইচ্ছা ছিল না যে, সরকারি কিংবা কোনো প্রাইভেট ফার্মে চাকরি করব। সব সময় চিন্তা ছিল, নিজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে কিছু লোকের কর্মসংস্থান করার। আমি মনে করি, লেখাপড়া শিখে চাকরির আশায় বসে না থেকে অল্প খরচে হাঁসের খামার গড়ে তুলে সহজেই স্বনির্ভর হওয়া যায়।

রফিকুল ইসলাম ইফতি মনে করেন, লেখাপড়ার পাশাপাশি হাঁস পালন তেমন কষ্টের কাজ নয়। হাঁসের রোগবালাই কম হয়। খামারে ঝামেলা অনেক কম, লাভ বেশি। বাজারে হাঁসের মাংস ও ডিমের অনেক চাহিদা। খামারের পাশে পুকুর ও বিল থাকায় হাঁসকে বাইরের খাবার দিতে হচ্ছে। দিনের অধিকাংশ সময় হাঁসগুলো পুকুর ও বিলে থাকে। সেখানে শামুক, পোকামাকড় খেয়ে হাঁসের খাবারের চাহিদা পূরণ হচ্ছে।

রফিকুল ইসলাম ইফতির সফলতা দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছেন এলাকার আরো অনেক বেকার যুবক। অল্প পুঁজিতে লাভ বেশি হওয়ায় হাঁস পালনে আগ্রহী তারা।

রফিকুলের হাঁসের খামারে কাজ করা শ্রমিকরা বলেন, আমরা পলাশের একটি মিলে চাকরি করতাম। ওখানে যে বেতন পেতাম তা দিয়ে আমাদের সংসার চলত না। এখন রফিকুল ভাইয়ের খামারে চাকরি করে যে বেতন পাচ্ছি তা দিয়ে আমাদের সংসার ভালোভাবেই চলছে।

ছাত্রলীগ নেতার এমন উদ্যোগের প্রশংসা করে পলাশ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ জাবেদ হোসেন বলেন, অনেক নেতাকর্মী রাজনৈতিক পরিচয়ে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি করেন। অথচ ছাত্রলীগ নেতা রফিকুল ইসলাম ইফতি সে পথ অবলম্বন না করে হাঁসের খামার করেছেন। এটি সত্যিই প্রশংসনীয়। দেশের বেকার যুবকদের উচিত ইফতির দৃষ্টান্ত অনুসরণ করা।

 

নরসিংদী/গাজী হানিফ মাহমুদ/রফিক