সারা বাংলা

শুঁটকি মাছ সংরক্ষণে উদ্যোগ নেই

মৎস্য ভাণ্ডার খ্যাত দেশের সর্ববৃহৎ বিল চলনবিলে প্রতি বছর প্রায় একশ কোটি টাকার শুঁটকি উৎপাদন হয়। কিন্তু উৎপাদিত শুঁটকি সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের কোনো  ব্যবস্থা না থাকায় প্রতি বছর এই অঞ্চলে কোটি কোটি টাকার শুঁটকি মাছ নষ্ট হয়। ফলে প্রতি বছর ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছে স্থানীয় মৎস্যজীবী ও শুঁটকি  উৎপাদনকারীরা।

মৎস্যজীবী ও শুঁটকি ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উদাসীনতার কারণে গত ৪৮ বছরেও এ অঞ্চলের মৎস্য রক্ষণাগার ও প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেনি। এ অঞ্চলের নদ-নদী, খাল-বিল, পুকুর-ডোবা ও জলাশয় প্রভাবশালী ও অমৎস্যজীবীদের দখলে চলে গেছে। নাটোরের বড়াইগ্রাম, গুরুদাসপুর ও সিংড়া উপজেলা, পাবনার চাটমোহর,  সিরাজগঞ্জ জেলার তাডাশ, রায়গঞ্জ, উল্লাপাড়া এলাকার বৃহৎ জলাভূমি অঞ্চল নিয়ে চলনবিল এলাকা গঠিত হয়েছে। ভৌগোলিক কারণেই এ অঞ্চলে ব্যাপক হারে মৎস্যজীবীদের বসতি গড়ে উঠেছে। তারা সারা বছর এসব এলাকার জলাশয় থেকে মৎস্য শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে। বর্তমান চলনবিলে চাহিদার তুলনায় অনেক কম মাছ উৎপাদন হলেও প্রয়োজনীয় চাহিদা মিটিয়ে উদ্ধৃত্ত মাছ রোদে শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি করা হয়।

পুটি, টেংরা, কাটা বাতাসি ও চাঁদা মাছ এ ক্ষেত্রে ব্যবহার হচ্ছে বেশি। এজন্য এ অঞ্চলের বড় বড় জলাশয়ের ধারে গড়ে উঠেছে শুঁটকি তৈরির শত শত চাতাল। স্থানীয় মৎস্যজীবীদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণের অভাবে এ শুঁটকি মাছ খুব একটা স্বাস্থ্য সম্মতভাবে সংরক্ষণ করা হয় না। স্বাদে ও পুষ্টিমানের গুণ বিচারে বাজারে শুঁটকি মাছের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বর্ষা ও শীত মৌসুমে শুঁটকির উৎপাদন বেশি হয়।

এ সময় বাজারে প্রচুর পরিমাণে শুঁটকি মাছ সরবরাহ হওয়ায় দাম কম থাকে। মাছ সংরক্ষণ করা হলে বছরের অন্যান্য সময় এর চাহিদার সঙ্গে সঙ্গে দামও বেড়ে যায়। কিন্তু সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের উন্নত ব্যবস্থা এ অঞ্চলের কোথাও না থাকায় পুরনো মান্ধাতার আমলের পদ্ধতিতে খোলা মাঠে রোদে শুকিয়ে এরা কিছুটা সংরক্ষণ করতে পারলেও বেশির ভাগ শুঁটকি পচে নষ্ট হয়ে যায়।

কিন্তু যদি এ অঞ্চলে উৎপাদিত এই শুঁটকি মাছ সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের ব্যবস্থা সরকারিভাবে থাকতো তাহলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কম হতো।

চলনবিলের মহিষলুটি এলাকার মৎস্যজীবী আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, প্রতি বছর প্রায় লাখ লাখ টাকা মূল্যের শুঁটকি মাছ নষ্ট হয়ে থাকে। এতে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির শিকার হন।

নাটোর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, শুঁটকি তেমন বেশি নষ্ট হয় না। উৎপাদনের পর পরই এ অঞ্চল থেকে শুঁটকি রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁওসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলে যায়। মৎস্যজীবী ও শুঁটকি উৎপাদনকারীদের ঘরে বেশি দিন রাখা হয় না। তৈরির সময় লবণ ছাড়া অন্য কোনো মেডিসিনও মেশানো হয় না ফলে এ শুঁটকি স্বাস্থ্যসম্মত।

 

নাটোর/আরিফুল/সাইফ