সারা বাংলা

গভীর রাতে গোপালগঞ্জ থেকে সেনাবাহিনীর পলায়ন

১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর গোপালগঞ্জে এক অভূতপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা হয়। সূর্য উঠার সাথে সাথে বিভিন্ন এলাকা থেকে দলে দলে বিভক্ত হয়ে মুক্তিযোদ্ধারা শহরে প্রবেশ করতে থাকে।

চারদিক থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমন বলয় রচিত হলে মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত লগ্নে মিত্রদেশ ভারত প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধাদের সরকারকে স্বীকৃতি দেয়ায় এখানকার পাক হানাদার বাহিনীর মনোবল ভেঙ্গে পড়ে।

গভীর রাতে মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমন করবে এমন সংবাদ পেয়ে সেনাবাহিনী ৬ ডিসেম্বর গভীর রাতে গোপালগঞ্জ সদর থানা উপজেলা পরিষদ (বর্তমানে) সংলগ্ন জয় বাংলা পুকুর পাড়ের মিনি ক্যান্টনমেন্ট ছেড়ে পালিয়ে যায়। মেজর সেলিমের অধীনে পাক হানাদার বাহিনীর একটি দল ঢাকায় যায়। অন্য একটি দল চলে যায় ভাটিয়াপাড়ার ওয়ারলেস্ ক্যাম্পে।

আজ গোপালগঞ্জ মুক্ত দিবস। ৭ ডিসেম্বর ভোরে স্বাধীন বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা উত্তোলন করে মুক্তিযোদ্ধারা, আর সেই সাথে মুক্ত হয় গোপালগঞ্জ শহর ও এর আশপাশ এলাকা। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে জনতাও মিলিত হয় বিজয় উল্লাসে।

গোপালগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয় ২৭ মার্চ থেকেই। মুসলিম লীগ নেতাদের সহযোগিতায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ৩০ এপ্রিল শহরে প্রবেশ করে। তারা প্রথমে শহরের ব্যাংক পাড়ায় বঙ্গবন্ধুর বাড়ি বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়) পুড়িয়ে দেয়। এরপর পাকিস্তানি সেনারা ১০/১২টি দলে বিভক্ত হয়ে শহরের হিন্দু অধ্যুষিত স্বর্ণপট্টি, সাহাপাড়া, সিকদারপাড়া, চৌরঙ্গী এবং বাজার রোডে লুটপাট করে আগুন দিয়ে প্রায় হাজার ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। মেতে ওঠে হত্যা আর নারী ধর্ষণে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাক হানাদাররা মিনি ক্যান্টনমেন্টে মুক্তিকামী সাধারণ মানুষকে ধরে নিয়ে হত্যা করে গণ-কবর দেয়।

হানাদার মুক্ত দিবস উপলক্ষে আজ গোপালগঞ্জে নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন কর্মসূচী। উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন জয় বাংলা পুকুর পাড়ের বদ্ধভূমিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন, র‌্যালি ও আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে দিনটি উদযাপিত হচ্ছে। এছাড়া সামাজিক সংগঠন বিডি ক্লিনও একটি র‌্যালির আয়োজন করেছে। গোপালগঞ্জ/ বাদল সাহা/টিপু