সারা বাংলা

বিদ্যুতের মিরপুর জোনাল অফিস গ্রাহক সেবায় দৃষ্টান্ত

সেবা নিয়ে গ্রাহকের দোরগোড়ায় এখন কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার পাশাপাশি করছে সাধারণ মানুষকে সচেতন। বিদ্যুতের সঠিক ব্যবহার, দুর্ঘটনা রোধ, মুজিববর্ষ সম্পর্কে বা বর্তমান সরকারের সাফল্য নিয়ে হাজির হচ্ছেন গ্রাহকের উঠানে। করছেন উঠান বৈঠক। এ কার্যক্রমের ফলে সাধারণ মানুষ পল্লী বিদ্যুতের সেবা পাচ্ছে সহজে। গ্রাহকরা তাদের সুবিধা অসুবিধা বলতে পারছেন কর্মকর্তাদের। বর্তমানে নেই পূর্বের ন্যায় অভিযোগও।

কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতায় কুষ্টিয়ার মিরপুর জোনাল অফিসে দুর্নীতি, ঘুষ, গ্রাহক হয়রানি এক সময়ের নিত্য দিনের ঘটনা ছিল। সেই সঙ্গে ছিল লোডশেডিং আর বিলের ভোগান্তি।

এক সময়ের এত অনিয়ম আর অভিযোগের গ্লানি নিয়েও ঘুরে দাঁড়িয়েছে পল্লী বিদ্যুতের এই অফিসটি। বর্তমানে গ্রাহক সেবা এবং নিরাপত্তা তাদের মূল লক্ষ্য। গ্রাহকদের সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন কর্মকর্তারা।

মিরপুর জোনাল অফিসের দেয়া তথ্যমতে, চলতি বছরের জুন মাস অবদি উপজেলায় ১ হাজার ৪৫৩ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার বিদ্যুতের লাইন চালু রয়েছে। ৩৩/১১ কেভি একটি উপকেন্দ্রের মাধ্যমে ১৭০টি গ্রামের ৮৫ হাজার ৬৭ জন গ্রাহককে বিদ্যুতের সংযোগ দেয়া হয়েছে।

উপজেলার সদরপুর ইউনিয়নের গ্রাহক বেলাল হোসেন জানান, মিরপুর পল্লী বিদ্যুত অফিস কয়েক বছর আগে যেমন ছিল, তার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। লাইন নিতে গেলে পদে পদে টাকা দিতে হতো। মাঝে মাঝেই ভুয়া বিল চলে আসতো। এখন আর তেমনটা নেই।

আরেক গ্রাহক হাবিবুর রহমান জানান, ‘‘শুনেছিলাম নতুন মিটার নিতে গেলে বিদ্যুতের অফিসে এক/দেড় বছর ঘোরা লাগে, টাকা বেশি দিতে হয়। কিন্তু আমি কিছু দিন আগে একটা মিটার নিয়েছি। অনলাইনে আবেদন করি। কয়েক দিনের মধ্যেই আমি মিটার পেয়েছি।’’

স্কুল শিক্ষার্থী সোহাগ বলে, ‘‘রাতে লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণায় ঠিকমতো পড়তে পারতাম না। এখন বিদ্যুতের লোডশেডিং নেই বললেই চলে।’’

কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মিরপুর জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার এনামুল হক বলেন, ‘‘আমি ২০১৮ সালে মিরপুর জোনাল অফিসে ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে যোগ দেয়ার পর থেকে এই অফিস শতভাগ দুর্নীতিমুক্ত করার চেষ্টা করছি। বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, ভিশন, গ্রাহক সেবা, গ্রাহকের সুবিধা-অসুবিধা, পল্লী বিদ্যুতের সঠিক কর্মকাণ্ড সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছি। আমরা গ্রাহকের বাড়ি গিয়ে উঠান বৈঠক পরিচালনা করছি।’’

তিনি বলেন, ‘‘এ বছর জুন মাস থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত উপজেলায় প্রায় ১৫০টি উঠান বৈঠকের মাধ্যমে গ্রাহকদের সচেতন করছি। ‘আলোর ফেরিওয়ালা’ কর্মসূচির মাধ্যমে উপজেলার প্রায় প্রতিটি গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করেছি। গ্রাহকদের হয়রানি রোধে আমরা ‘ওয়ান পয়েন্ট’ নামের সেবার মাধ্যমে সেবা দিচ্ছি। একই স্থানে গ্রাহকরা সকল সেবা পাবে।’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘মিরপুর উপজেলায় বিদ্যুতের ঘাটতি না থাকায় লোডশেডিং নেই। আর যদি রক্ষণাবেক্ষণ ও বিদ্যুত লাইনের পাশে গাছের ডালপালা পরিষ্কার করতে হয়, তাহলে মাইকিং করে এবং মিরপুর জোনাল অফিসের নামে ফেসবুক পেজের মাধ্যমে গ্রাহকদের অবহিত করছি।’’

তিনি বলেন, ‘‘উঠান বৈঠকে গ্রাহকদের ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে। তারা তাদের অসুবিধার কথা সরাসরি জানাচ্ছে। আমরা তাৎক্ষণিক সমাধানের ব্যবস্থা করি।  এই উঠান বৈঠকে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে গ্রাহকদের সচেতন করছি।’’ 

তিনি বর্তমান অফিসের চিত্র তুলে ধরে বলেন, ঘুষ, দুর্নীতি, দালাল মুক্ত, শতভাগ গ্রাহক হয়রানি রোধ এবং সেবা নিশ্চিত করতে পুরো অফিস সিসি ক্যামেরার আওতায় রয়েছে। গ্রাহকদের জন্য রয়েছে অভিযোগ বক্সও।

বিগত বছর যেখানে মিরপুর জোনাল অফিসের গ্রাহকদের কাছে বকেয়া মাস ছিল ১ দশমিক ২০ শতাংশ, বর্তমানে রয়েছে মাত্র দশমিক ৮৮ শতাংশ; যা কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুতের বিগত বছরের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। বিগত বছরের তুলনায় সিস্টেম লস কমেছে ১ দশমিক ২০ শতাংশ।

কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) হারুনর রশিদ জানান, কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুত সমিতির আওতায় ৬টি উপজেলায় ৪ লাখ ৬২ হাজার ৪৭৫ জন গ্রাহক বিদ্যুতের সুবিধা পাচ্ছে। তাদের আওতাভুক্ত ৯৩৯টি গ্রামের মধ্যে ৯০০ গ্রামে শতভাগ বিদ্যুতের সেবা নিশ্চিত করা হয়েছে। বাকিগুলো খুব শিগগিরই করা হবে।

তিনি আরো জানান, গ্রাহক এখন ঘরে বসে পল্লী বিদ্যুতের সেবা পাচ্ছে। অনলাইনে আবেদন, টাকা জমা দিতে পারছে। মোবাইলে বিলও পরিশোধ করছে। ডিজিটাল বিলিং সিস্টেমের মাধ্যমে বিলে ভুলও কমে গেছে। কুষ্টিয়া/কাঞ্চন/বকুল