সারা বাংলা

সামনে শুধুই অন্ধকার

তেত্রিশ বছর আগের কথা। অভাবে সংসার চলছিল না ঠিকমতো। উপায় না পেয়ে চাকরির খোঁজে ঘর ছেড়েছিলেন আব্দুস সাত্তার প্যাদা।

চাকিরও পেয়েছিলেন। এরপর কেটেছে প্রায় তিনযুগ। অথচ এতদিন পর পরিবারের কাছে লাশ হয়ে ফিরলেন সাত্তার। শুক্রবার রাতে তার মরদেহ গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর তিতকাটা গ্রামে পৌঁছালে রাতেই দাফন সম্পন্ন হয়।

সাত্তারের পরিবারে সম্পদ বলতে তার বড় ছেলে রাজমিস্ত্রী শ্রমিক কাজে নিয়োজিত ইমরান প্যাদা, ছোট ছেলে নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া হুমায়ন প্যাদা, বড় মেয়ে স্বামী পরিত্যক্তা পিয়ারা আর এক মেয়ে গৃহিনী ফেরদৌসি বেগম।

স্ত্রী রওশন আরা বেগম বলেন, অর্থাভাবে আজ থেকে অন্তত ৩৩ বছর পূর্বে ১৯৮৬ সালে নিজ বাড়ি-ঘর ফেলে চাকরির খোঁজে এলাকা ত্যাগ করে তিনি (আব্দুস সাত্তার প্যাদা)। ভাগ্যক্রমে খুলনার প্লাটিনাম জুট মিলে হেসিয়ান তাঁতের শ্রমিক হিসাবে চাকরি জুটিয়ে নেন। স্ত্রীসহ পাঁচ সদস্যের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তিনি। নামমাত্র বেতনের কিছু অংশ রেখে বাকিটা পরিবারের কাছে পাঠিয়ে দিতেন। পাঠানো ওই টাকায় সন্তানদের লেখাপড়া ও দৈনন্দিন চাহিদা পূরণ করা হতো।

তিনি বলেন, বড় ছেলে ইমরান মাদরাসা থেকে এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে এখন রাজমিস্ত্রির কাজ করছে। ছোট ছেলে হুমায়ুন মাদরাসায় নবম শ্রেণিতে পড়ছে। বসতভিটা ছাড়া কিছু নাই।

কান্নাজড়ি কণ্ঠে রওশন আরা বলেন, ‘জীবিকার তাগিদে ভিক্ষা ছাড়া সকল কাজ করেছে পরিবারের সদস্যরা। তেত্রিশ বছর আগে কাজের জন্য বাড়ি ছাড়ল, অথচ লাশ হয়ে ফিরবে এটা ভাগ্যের নির্মমনিয়তি।’

ছেলে ইমরান বলেন, ‘বাবা ১১ মাস ধরে বেতন পাচ্ছিল না। এ অবস্থায় মা গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ৩০ হাজার টাকা লোন নেন চলতি বছরের মার্চ মাসে। এখন এই টাকার কিস্তি পরিশোধ কীভাবে হবে তাও অনিশ্চিত।’

প্রসঙ্গত, খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ব আটটি পাটকলের শ্রমিকেরা ১১ দফা দাবিতে গত মঙ্গলবার থেকে আমরণ অনশন শুরু করেন। অনশন চলাকালে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে সাত্তার প্যাদা অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে খুলনা মেডিক‌্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। পটুয়াখালী/বিলাস/সাইফ