সারা বাংলা

রাজাকার-মুক্তিযোদ্ধা বিতর্কে উত্তাল পাথরঘাটা

সরকারের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রকাশিত রাজাকারদের তালিকায় বরগুনার পাথরঘাটার একাধিক মুক্তিযোদ্ধার নাম এসেছে। অপরদিকে বাদ পড়েছে এলাকার কুখ্যাত সব রাজাকারদের নাম। এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা।

তাদের দাবি, রাজাকারদের দোসররা এখনো সক্রিয়, সরকারের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা স্বাধীনতা বিরোধীরাই এই বিতর্কিত কাজের সাথে জড়িত।

তালিকা থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের নাম বাদ দিয়ে প্রকৃত রাজাকারদের তালিকাভুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ।

মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা প্রয়াত মজিবুল হকের নাম রাজাকারদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় বরগুনার পাথরঘাটায় প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছেন স্থানীয় সাধারণ মানুষ, মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগ।

সকালে পাথরঘাটা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন শেষে প্রতিবাদ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগ ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।

এসময় বক্তব্যে প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, মজিবুল হক, আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। শুধু তাই নন, তিনি ছিলেন দক্ষিণাঞ্চলের বঙ্গবন্ধুর অন্যতম ঘনিষ্ঠ সহচর ও আমৃত্যু নিবেদিতপ্রাণ একজন আওয়ামী লীগ নেতা। বঙ্গবন্ধুর আস্থাভাজন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরম শ্রদ্ধেয় এই ব্যক্তিকে ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল। অথচ, তাঁর নাম এসেছে রাজাকারদের তালিকায়। শুধু তিনি নন, তালিকায় খলিলুর রহমান মানিক, আমজাদ হোসেনসহ আরও ৪ জন মুক্তিযোদ্ধার নামও এসেছে। এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা।

তাদের দাবি, যত দ্রুত সম্ভব মজিবুল হকসহ অন্য মুক্তিযোদ্ধাদের নাম প্রত্যাহার করে প্রকৃত রাজাকারদের তালিকা প্রকাশ করা হোক।

পরিবার মর্মাহত:

প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা মজিবুল হকের সহধর্মিনী নূর জাহান বেগম ও ছেলে শাহিন মিয়া এ ঘটনায় অত্যন্ত মর্মাহত হয়েছেন। পরিবারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পাঠানো হয়েছে। ওই স্মারকলিপিতে ছেলে শাহীন তাঁর বাবার নাম প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েন।

শাহীন বলেন, ‘আমার বাবা প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আমৃত্যু আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর আওয়ামী লীগের চরম দুর্দিনে তিনি পাথরঘাটা আওয়ামী লীগের হাল ধরে রেখেছিলেন।’

স্ত্রী নূরজাহান বেগম বলেন, ‘আমার স্বামীকে বঙ্গবন্ধু খুব ভালোবাসতেন, ডেকে বলতেন, মজিবর তোমার কী দরকার আমাকে বলো, কাঁধে হাত দিয়ে হাঁটতেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার স্বামীর চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। তিনি আমার স্বামীর পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতেন। আমি এ ঘটনায় খুবই মর্মাহত, দুঃখিত। এই তালিকা কারা করেছে, আমি জানতে চাই। আমার স্বামীর নাম তালিকা থেকে প্রত্যাখ্যান করে তাঁকে মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার দাবি জানাই।’

প্রকাশ হয়নি কুখ্যাত রাজাকারদের নাম:

প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, ‘বর্তমান সাংসদের বাবা খলিলুর রহমান তৎকালীন বরগুনা মহকুমার রাজাকারদের কমান্ডার ছিলেন। তার নেতৃত্বে এ অঞ্চলে অসংখ্য বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে হত্যা, লুণ্ঠন চালিয়েছে সহযোগীরা। মুক্তিযোদ্ধা মনি মণ্ডল বলেন, ‘বর্তমান সাংসদের বাবা খলিলুর রহমানের নেতৃত্বে আমার বাড়িতে হামলা চালিয়ে অগ্নি সংযোগ ও লুণ্ঠন চালানো হয়। এছাড়া কাকচিড়ার কনক হত্যাকাণ্ডসহ বরগুনার বিভিন্ন এলাকায় এই বাহিনী হত্যাযজ্ঞ লুণ্ঠন চালিয়েছে। অথচ, অজ্ঞাত কারণে খলিলুর রহমানের নাম তালিকায় নেই, আছে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা মজিবুল হকের নাম। আমরা প্রকৃত রাজাকারদের তালিকা প্রকাশের দাবি জানাই।’

শহীদ মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান মিয়ার ছেলে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রিপন বলেন, ‘রাজাকারদের অনেকে খোদ সরকারে ঘাপটি মেরে থাকায় এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এ অঞ্চলের কুখ্যাত রাজাকার ছিলেন বর্তমান সাংসদের বাবা খলিলুর রহমান। এছাড়াও আহের উদ্দীন তালুকদার, আজিজ মাস্টারসহ অনেকেরই নাম নেই এই তালিকায়।’

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাবির হোসেন বলেন, ‘বর্তমান সাংসদের বাবা খলিলুর রহমান একজন কুখ্যাত রাজাকার ছিলেন। এ নিয়ে আমরা চরম বিব্রত। তালিকায় কেন তার নাম নেই, অথচ মুক্তিযোদ্ধাদের নাম, এ নিয়ে আমরা প্রশ্নের সম্মুখীন। মানুষের মুখ তো আটকে রাখার উপায় নেই। আমরা প্রকৃত রাজাকারদের নামের তালিকা প্রকাশের দাবি জানাই।’ বরগুনা/রুদ্র রুহান/মাহি