সারা বাংলা

এ যেন মাঠের ‘গায়ে হলুদ’

মাদারীপুরের বিস্তৃত ফসলের মাঠে এখন হলুদের ছড়াছড়ি। যেন ফসলের মাঠের ‘গায়ে হলুদ’। সরিষার হলুদ ফুলে ছেয়ে আছে মাঠের পর মাঠ।

এই হলুদ শোভা সহজেই দৃষ্টি কাড়ছে মানুষের। মাঠের পাশ দিয়ে যেতে ক্ষণিকের জন্য চোখ আটকে যাচ্ছে।

মাদারীপুর জেলায় এ বছর আবাদ করা হয়েছে স্থানীয় জাতের পাশাপাশি বেশ কিছু উন্নত জাতের সরিষা। মাঠের পর মাঠ এখন এই সরিষার ফুলে ছেয়ে আছে। সরিষা ক্ষেতের পরিচর্যা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা।

মাদারীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এ বছর সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৪ হাজার ৫৯৫ হেক্টর জমি। এ পর্যন্ত আবাদ হয়েছে ১৩ হাজার ৫৮০ হেক্টরে। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে স্থানীয় জাতের পাশাপাশি কৃষকরা এ বছর উন্নত জাতের বারি সরিষা-১৪, বারি সরিষা-১৫, বারি সরিষা-৯, বারি সরিষা-৪, বিনা-৪, বিনা-১১, টরি-৭, এসএম-৭৫ সহ বিভিন্ন জাতের সরিষা আবাদ করে লাভের মুখ দেখছেন।

ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে নিম্নাঞ্চলে সরিষার আবাদে কিছুটা বিলম্ব হওয়ায় এখনও সরিষার আবাদ অব্যাহত আছে বলে জানা গেছে। কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে সরিষা চাষে লাভবান হবেন কৃষকরা। অনুকুল আবহাওয়া ও কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণের মধ্যে দিয়ে সরিষা আবাদে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন মাদারীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। প্রকৃত কৃষকদের মধ্যে বিনা মূল্যে সার,বীজ ও কীটনাশকের ব্যবস্থা করা হলে সরিষা চাষে কৃষকরা আরো বেশি আগ্রহী হবেন বলে কৃষকরা জানান।

মাদারীপুর সদর উপজেলার ধুরাইল ইউনিয়নের চাষার গ্রামের কৃষক মোক্তার হোসেন জানান, ৬৩ শতাংশের ৪ বিঘা জমিতে সরিষা আবাদে তার খরচ হয়েছে ৪০ থেকে ৪২ হাজার টাকা। ভালভাবে সরিষা ঘরে তুলতে পারলে তিনি ৯০ থেকে ৯৫ হাজার টাকারও বেশি পাওয়ার আশা করছেন। ক্ষেতে তার সরিষা খুবই ভাল দেখাচ্ছে।

একই উপজেলার আরেক কৃষক দেলোয়ার হোসেন দেড় একর জমিতে সরিষা আবাদ করেছেন। তার খরচ হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। জানালেন, অন্যান্য বছরের চেয়ে এ বছর সরিষার ফলন ভাল। কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে তিনি লাভবান হবেন।

সদর উপজেলার মোঃ আলমগীর হোসেন মাতুব্বর জানান, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে তিনি সরিষা চাষ করেছেন। এবারের সরিষা চাষ বিগত পাঁচ বছরের চেয়েও ভালো হয়েছে।

মাদারীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জিএসএম গফুর বলেন, ‘মাদারীপুর জেলা সরিষা আবাদে সমৃদ্ধ।এ জেলায় ১৪ হাজার ৫৯৫ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে অদ্যাবধি ১৩ হাজার ৫৮০ হেক্টরের আবাদ হয়েছে। আমরা আশা করছি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে।

তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন স্থানীয় জাতের পাশাপশি বারি সরিষা-১৪ জাত এটি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে উদ্ভাবিত। এটির ফলনও আশাব্যঞ্জক। এ কারণে এর এরিয়া বাড়ানোর জন্য আমরা  চেষ্টা করছি। এ যাবৎ প্রায় ৭০ভাগ জমিতে বারি সরিষা-১৪ জাতের আবাদ হচ্ছে এবং কৃষকরা এতে লাভবান হবেন। এছাড়া বিনা সরিষা-৯ জাতের আবাদ আমাদের এলাকায় শুরু হয়েছে। আমরা কৃষকদেকে এই সরিষা আবাদে উদ্বুদ্ধকরণসহ বিশেষত অধিক ফলনশীল জাত বপনের পরামর্শ দিচ্ছি। আশাকরি মাদারীপুর জেলা সরিষা আবাদের মাধ্যমে  তেল ফসলে সমৃদ্ধ হতে পারবে।’

 

মাদারীপুর/বেলাল/টিপু