ময়মনসিংহের কবি মুশাররফ করিম শনিবার রাত ১০টায় মারা গেছেন, তাঁর মৃত্যুর খবর জানাজানির পর সংস্কৃতি অঙ্গনের লোকজন একে অন্যকে ফোনে ও সামাজিক মাধ্যমে নানা স্মৃতি তুলে ধরে শোক প্রকাশ করছেন।
ষাটের আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম ছাত্রনেতা, ষাটের অন্যতম কবি, স্বাধীনতা-উত্তর কাব্যান্দোলনের পথিকৃৎ, ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদের প্রতিষ্ঠাকালীন সভপতি এবং অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি ও কথাসাহিত্যিক মুশাররাফ করিম।
পরবর্তীতে এই কবি জাতীয়বাদী চিন্তাধারায় উদ্বুদ্ধ হলেও তিনি ছিলেন সব দল ও মতাদর্শের মানুষের প্রিয় ব্যক্তিত্ব।
রোববার বাদ জোহর ময়মনসিংহের চরপাড়া জামিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে জানাজা শেষে তাঁর লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। তার আগে বেলা ১২ টা থেকে সাড়ে বারোটা পর্যন্ত তাঁর মরদেহ ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদ আঙিনায় রাখা হয় শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্য।
মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। তিনি স্ত্রী ও এক মেয়ে রেখে গেছেন।
কবি মুশাররফ করিম দৈনিক দিনকাল পত্রিকার মফস্বল সম্পাদক ছিলেন। ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদেরও প্রতিষ্ঠাতা তিনি।
এ ছাড়া কবি মুশাররফ করিম অধুনালুপ্ত দৈনিক দেশসহ বিভিন্ন সংবাদপত্রে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি নেত্রকোনার বিরিশিরি কালচারাল একাডেমিরও পরিচালক ছিলেন। তিনি জাতীয় প্রেস ক্লাবের স্থায়ী সদস্য ছিলেন।
শিশুসাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ২০০৩ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। এ ছাড়া জিয়া স্মৃতি পুরস্কার, জিয়া স্মৃতি পদক, কালচক্র স্বাধীনতা পদক, পূরবী স্বাধীনতা পদক, ময়মনসিংহ প্রেসক্লাব পদক, জিয়া মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড (১৯৯৭), রূপালী তারার মেলা শিশু পুরস্কার, জিসাস সাহিত্য পুরস্কার, স্বদেশ-সমাজ সাহিত্য পুরস্কার, অগ্নিসেনা সাহিত্য পদক, ব্রহ্মপুত্র সাহিত্য পুরস্কার, সময় নৃত্যকলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি সাইফুল আলম ও সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন এক বিবৃতিতে কবি মুশাররাফ করিমের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তাঁরা শোকাহত পরিবারের সদস্যদের প্রতিও গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।
জেলার অত্যন্ত সফল সাহিত্য সংগঠন ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদ, সেই সংগঠন গত কয়েক দশক ধরে সাহিত্য বিষয়ক পাঠচক্র ‘বীক্ষণ’ পরিচালনা করে সারাদেশে অনন্য নজির তৈরি করেছে। সেটির অন্যতম কারিগর ও প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি ছিলেন কবি মুশাররফ করিম। সেই সাহিত্য সংসদের প্রতিষ্ঠার সময় সহ-সভাপতি ছিলেন কবি শামসুল ফয়েজ, তিনি বলেন, ‘মঞ্জু ভাই (কবি মুশাররফ করিমের ডাক নাম) অনেক যুবককে, অনেক ছাত্র-ছাত্রীকে সাহিত্য ও সাংবাদিকতায় এনেছেন, শহরে তার অনেক ভক্ত। তার মৃত্যুতে সেইসব কবি, সাহিত্যিক ও ভক্ত ভেঙ্গে পড়েছেন।’
ঢাকা/সাজেদ