সারা বাংলা

ফেইসবুক মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিলো সন্তান

তরুণ প্রজন্মের ফেইসবুকে আসক্তি শফিকুলের জীবনে আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। মা সুফিয়া খাতুনের শূন্য বুকে ফিরে এসেছে অনাবিল শান্তি। কিশোরগঞ্জের ধুলিহর গ্রামের কৃষক শহীদ মিয়ার বাড়িতে এখন চাঁদ রাতের আনন্দ। এর কারণ দীর্ঘ দশ বছর পর হারিয়ে যাওয়া সন্তানের ফিরে আসা। আর বিষয়টি সম্ভব হয়েছে ফেইসবুকে আপলোড করা একটি ভিডিও বার্তার কারণে।

মাত্র সাত বছর বয়সে হারিয়ে গিয়েছিল শফিকুল ইসলাম। এরপর অনেক খুঁজেও তাকে পাওয়া যায়নি। নাড়ি ছেড়া ধন হারিয়ে পাগলপ্রায় হয়েছিলেন সুফিয়া খাতুন। কোনো সান্ত্বনাই তার জন্য যথেষ্ট ছিল না। সন্তানহারা বেদনার অপার শোক নেমে এসেছিল বাবা শহীদ মিয়ার জীবনে। মৃত্যুর আগে সন্তানকে ফিরে পাওয়াই ছিল একমাত্র প্রার্থনা। সৃষ্টিকর্তা সেই প্রার্থনায় সাড়া দিয়েছেন।

শহীদ মিয়া রাইজিংবিডিকে আবেগাপ্লুত কণ্ঠে জানান, ছেলেকে খুঁজতে দেশের এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে যাইনি। এমন একটি দিন নেই আমি আর শফিকের মা ওর কথা মনে করে কাঁদিনি। ফেইসবুক সম্পর্কে আমাদের কোনো ধারণা নেই। কিন্তু লোকমুখে শুনে আমি ভিডিও দেখেই বুঝতে পারি- এই আমার হারিয়ে যাওয়া ছেলে।’

জানা যায়, গত ২৫ জানুয়ারি মৌলভীবাজার জেলার শ্রীগাঁও গ্রামের সমাজকর্মী শেখ জসীম শফিককে নিয়ে একটি ভিডিও বার্তা ফেইসবুকে আপলোড করেন। সেখানে বিস্তারিত তুলে ধরে ছেলেটির প্রকৃত বাবা-মায়ের সন্ধান চান তিনি। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। এই ভিডিও’র মাধ্যমেই শফিকের খোঁজ পান তার বাবা-মা।

পরে গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশের সহযোগিতায় শফিককে ফিরিয়ে আনে তার পরিবার।

দশ বছর আগে শ্রীমঙ্গলের পুরানগাঁওয়ের কাবুল মিয়া রাজধানী ঢাকায় শফিককে কুড়িয়ে পেয়েছিলেন। শফিক বাবা-মায়ের নাম, বাড়ির পুরো ঠিকানা বলতে পারেনি। ফলে তিনি শফিককে নিজ বাড়িতে নিয়ে যান। সন্তানতুল্য বিবেচনায় লালন-পালন করতে থাকেন। বাড়িতে তার আট মেয়ে ও দুই ছেলের সঙ্গেই বেড়ে উঠতে থাকে শফিক।

সুফিয়া খাতুন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘একজন মা-ই জানেন সন্তান হারানোর বেদনা। আমি বুকে পাথর চাপা দিয়ে ছিলাম। আজ সেই পাথর সরে গিয়ে শান্তির নিঃশ্বাস নিচ্ছি। দোয়া করি সেই মানুষটির জন্য যিনি আমার সন্তানকে নিজের সন্তানের মতো দশ বছর আগলে রেখেছেন।’

শফিকুল রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘ছোটবেলায় ভুল করে ঢাকার বাসে উঠে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। বাস থেকে নেমে কিছুই চিনতে পারছিলাম না। পালক বাবা কাবুল মিয়া আমাকে নিজ সন্তানের মতো স্নেহ দিয়ে মানুষ করেছেন। বাবা-মাকে ফিরে পেয়ে ভালো লাগছে। কিন্তু পালক বাবার জন্যও খারাপ লাগছে। পাশাপাশি জসীম ভাইয়ের কাছেও আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। তিনি আমাকে নিয়ে ফেইসবুকে লাইভ না করলে হয়তো আমি কোনোদিনই বাবা-মাকে ফিরে পেতাম না।’

 

কিশোরগঞ্জ/তারা