সারা বাংলা

কুড়িখাই গ্রামে এখন উৎসবের আমেজ

শুরু হয়েছে চারশ বছরের ঐতিহ্যবাহী কুড়িখাই মেলা। কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীর কুড়িখাই গ্রামজুড়ে এখন উৎসবের আমেজ। উৎসবের ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছে আশপাশের গ্রামেও।

এ দিনটির জন্য সারা বছর অপেক্ষা করেন স্থানীয়রা। শুধু কটিয়াদী নয় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকেও লোকজন এখানে আসেন।

মেলা উপলক্ষে গ্রামের জামাইদের দাওয়াত দিয়ে আদর-আপ্যায়ন করা এখানকার রীতি। সেই সুবাদে বাবার বাড়িতে নাইওরে আসে গ্রামের মেয়েরাও।

প্রতিবছর মাঘ মাসের শেষ সোমবার থেকে কুড়িখাই গ্রামে শুরু হয় এ মেলা। এবারো শুরু হয়েছে। চলবে আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। কুড়িখাই গ্রামের নামে পরিচিত এ মেলাটি জেলার সবচেয়ে বড় গ্রামীণ মেলা। ইসলাম ধর্ম প্রচারক শাহ শামসুদ্দিন বুখারির (রহঃ) মাজারের ওরসকে ঘিরে বসে এ আয়োজন। মুসলমানদের উৎসব হলেও সময়ের বিবর্তনে এ মেলা এখন সার্বজনীন উৎসব ও ঐতিহ্যে রূপ নিয়েছে।

মেলার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ মাছ। বড় বড় বিভিন্ন জাতের মাছ উঠেছে মেলায়। চড়া দামে বিক্রিও হচ্ছে এসব। কুড়িখাই গ্রামের দাওয়াতি জামাইরা এসব মাছের মূলক্রেতা। মেলা থেকে মাছ কিনে শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে যাওয়া এখানকার পুরনো রীতি। আবার নিজ বাড়িতে ফেরার সময়ও শ্বশুড়বাড়ির লোকজন হাজার হাজার টাকার মাছ কিনে দিয়ে দেন জামাইকে। শত শত বছর ধরে চলে আসছে কুড়িখাই গ্রামের এ ঐতিহ্য।

মেলায় মাছ বিক্রি করতে আসা মো. রফিক মিয়া বলেন, ‘প্রতিবছরই এ মেলায় সবচেয়ে বড় মাছগুলো নিয়ে আসি। এ মেলায় ধনী-গরীব সবাই মাছ কিনতে আসে। তাই সবার চাহিদা মত মাছই এখানে আমরা বিক্রি করে থাকি। এবছর অনেক বড় বড় রুই, কাতল, বোয়াল, চিতলসহ নানা জাতের মাছ নিয়ে এসেছি। সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা দামের মাছ এনেছি বিক্রি করতে। আশাকরি মেলার প্রতিদিনই ভালদামে মাছ বিক্রি করতে পারব।’

কুড়িখাই গ্রামের জামাই ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘প্রতিবছরই আমাকে এ এলাকার মানুষ এবং শ্বশুড়বাড়ির লোকজন দাওয়াত দেন। এটি এখানকার রীতি। আর আমারও খুব ভাল লাগে এখানকার মানুষের আন্তরিকতায়। তাই পরিবার-পরিজন নিয়ে ছুটে এসেছি কুড়িখাই মেলায়। এখন মাছ বাজারে এসেছি, ইচ্ছে আছে বেশ কিছু বড় মাছ কিনে শ্বশুড়বাড়ি নিয়ে যাব।’

প্রচলিত আছে, শাহ শামসুদ্দিন বুখারি (রহঃ) তিনজন সঙ্গী নিয়ে কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদী উপজেলার মুমুরদিয়া ইউনিয়নের কুড়িখাই এলাকায় ইসলাম ধর্ম প্রচার শুরু করেন। তার মৃত্যুর পর ভক্তরা মাজারকে ঘিরেই কুড়িখাই মেলার প্রবর্তন করেন। মেলা কমিটির লোকজন জানিয়েছেন, প্রায় চারশ বছর ধরে কুড়িখাই মেলাটি হচ্ছে।

কুড়িখাই গ্রামের এক থেকে দেড় কিলোমিটার এলাকায় মেলা উপলক্ষে বসেছে বিভিন্ন দোকানপাট। কাঠের আসবাবপত্র, শিশুদের খেলনা, মেয়েদের সাজগোছের জিনিস থেকে শুরু করে মুড়ি, মিষ্টি, খৈসহ এমন কিছু নেই যা মেলায় উঠেনি। মেলায় শিশুদের জন্যও রাখা হয়েছে পুতুলনাচ, সার্কাস, মোটরসাইকেল রেস নাগরদোলাসহ আরো বেশকিছু আয়োজন।

মেলা আয়োজক কমিটি’র সভাপতি ও কটিয়াদি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আকতারুন নেছা বলেন, ‘মেলার সার্বিক বিষয়ে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে। তাছাড়া কোনভাবেই মেলায় আগত দর্শনার্থীরা যেন দুর্ভোগের শিকার না হন সে ব্যাপারেও আমরা লক্ষ্য রাখছি। আশা করছি মেলার সাতদিন সবাই বেশ আনন্দের সাথেই উপভোগ করবেন। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে এ মেলা।

মাজার প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় ধর্মীয় অনুষ্ঠান। তাছাড়া মেলার দোকান বরাদ্দ থেকে যে আয় হয়, তা মাজার ও মসজিদের উন্নয়ন কাজে ব্যয় করা হয়। কিশোরগঞ্জ/টিপু