সারা বাংলা

সূর্যমুখী চাষে, কৃষক হাসে

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রথমবারের মতো সূর্যমুখী ফুলের চাষ শুরু করেছেন কৃষকরা। প্রথম বছরেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকাসহ সদর উপজেলার বুধল, মজলিশপুর ও মাছিহাতা ইউনিয়নের ৮০ বিঘা জমিতে ৮০ জন কৃষক সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন।

ইতোমধ্যেই সূর্যমুখী গাছে ফুল ধরতে শুরু করেছে। প্রতিদিন শহরসহ আশপাশ এলাকা থেকে সৌন্দর্য পিয়াসুরা দল বেঁধে আসেন এই সূর্যমুখী ফুলের বাগান দেখতে। অনেকেই বাগানে শখ করে ছবি তোলেন।

সদর উপজেলার বুধল ইউনিয়নের সুতিয়ারা ও চান্দিয়ারা গ্রামে এবং মজলিশপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে দেখা গেছে সূর্যমুখী ফুল চাষ করে চাষীরা বেশ সন্তুষ্ট।

তারা জানান, বুধল ও মজলিশপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে সূর্যমুখীর চাষ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে গাছে ফুল এসেছে। চারিদিকে হলুদ রঙের ফুলের অপরূপ দৃশ‌্য। ফুলে ফুলে মধু সংগ্রহে ব‌্যস্ত মৌমাছির দল।

সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকাসহ সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রথমবারের মতো সূর্যমুখীর চাষ করা হয়েছে। মোট ৮০ বিঘা জমিতে ৮০ জন কৃষক হাইসান-৩৩ জাতের সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন। কৃষি অফিস কৃষকদেরকে বিনামূল্যে সূর্যমুখীর বীজ ও সার দেয়া হয়েছে।

সদর উপজেলার বুধল ইউনিয়নের সুতিয়ারা গ্রামের সূর্যমুখী ফুলের চাষী আহসান উল্লাহ জানান, আগে তিনি তার জমিতে বিভিন্ন ধরনের সবজির চাষ করতেন। এ বছর কৃষি অফিসারের পরামর্শে তিনি প্রথমবারের মতো সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন।

তিনি বলেন, ‘কৃষি অফিস থেকে আমাদের বিনামূল্যে সূর্যমুখীর বীজ ও সার দেয়া হয়েছে। আশাকরি সূর্যমুখী চাষে সফলতা আসবে। লাভবান হতে পারব।’

একই ইউনিয়নের চান্দিয়ারা গ্রামের কৃষক নূরু মিয়া জানান, আগে তিনি জমিতে সবজি চাষ করতেন। কৃষি অফিসারের পরামর্শে এ বছরই জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন। কৃষি অফিস থেকে তাকে বিনামূল্যে সবকিছুই দেয়া হয়েছে। কৃষি অফিস থেকে সব সময় খবরা-খবর রাখা ও তদারকি করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘প্রতিদিনই শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন গ্রাম থেকে লোকজন আসে সূর্যমুখী ফুলের বাগান দেখতে। সূর্যমুখী চাষে লাভবান হতে পারব বলে আশা রাখি।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া উপজেলা কৃষি অফিসার মুনসী তোফায়েল হোসেন বলেন, ‘‘আগে কখনো সদর উপজেলার কোনো কৃষক সূর্যমুখী ফুলের চাষ করতেন না। মুজিববর্ষ উপলক্ষ‌্যে প্রথমবারের মতো এ বছর সরকারের রাজস্ব খাতের অর্থায়নে পৌর এলাকাসহ সদর উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের ৮০ বিঘা জমিতে ৮০ জন কৃষক হাইসান-৩৩ জাতের সূর্যমুখী চাষ করেছেন।

‘সূর্যমুখী চাষের ৯০ থেকে ১০৫ দিনের মধ্যেই কৃষকরা বীজ ঘরে তুলতে পারবেন। প্রতি বিঘা জমিতে ছয় থেকে সাড়ে ছয় মণ সূর্যমুখী ফুলের বীজ পাওয়া যাবে। বিঘা প্রতি কৃষকরা ১০/১১ হাজার টাকার বীজ বিক্রি করতে পারবেন। কৃষকদেরকে স্বাবলম্বী করতেই সূর্যমুখী ফুল চাষে উৎসাহিত করা হয়েছে। যদি সফল হওয়া যায় আগামীতে সূর্যমুখীর চাষ অনেক বাড়বে।”

তিনি জানান, ফেনীর সোনাগাজীতে সূর্যমুখী ফুল থেকে তেল তৈরির কারখানা (কোম্পানি) আছে। তাদের সাথে আমাদের চুক্তি হয়েছে। আমাদের উৎপাদিত সূর্যমুখী ফুলের বীজ তারা কিনবে। কৃষকদের কাছ থেকেই কোম্পানি সরাসরি বীজ কিনবে। কৃষি অফিস মাধ্যম হিসেবে কাজ করবে।

সদর ইউএনও পঙ্কজ বড়ুয়া বলেন, ‘এই প্রথমবারের মতো ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চাষীরা সূর্যমুখী ফুলের চাষ শুরু করেছেন। আমরা উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে চাষীদেরকে বিভিন্ন ধরনের সহায়তা করে আসছি।’

 

মাইনুদ্দীন রুবেল/সনি