সারা বাংলা

সাব-রেজিস্ট্রার অভাবে দুর্ভোগে ২ উপজেলাবাসী

গেল ২৯ ডিসেম্বর মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার বদলি হয়েছেন। অন‌্যদিকে, মুজিবনগরে সাব-রেজিস্ট্রার নাই এক বছর ধরে। আর ১৪ ডিসেম্বর জেলা রেজিস্ট্রার অবসরে গেছেন। এ পদটিও শূন্য হয়ে পড়েছে।

শুধুমাত্র সদর উপজেলায় রয়েছেন একজন সাব-রেজিস্ট্রার। তিনি সদর ও মুজিবনগর উপজেলা অফিস সামলাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন।

এদিকে, শূন্য পদের ফলে গাংনী উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সকল কার্যক্রম রয়েছে স্থবির অবস্থায়।

এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন জমি কেনাবেচনা ও জরুরি কাজে দলিল উত্তোলন করতে আসা লোকজন। বেকার সময় পার করছেন দলিল লেখক ও তাদের সহকারীরা মিলে দুই শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী।

অতিরিক্ত দায়িত্ব কিংবা শূন্য পদ পূরণ না হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন এখানকার মানুষগুলো। শূন্যপদ পূরণ সাপেক্ষে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের কার্যক্রম স্বাভাবিক করতে এখন মন্ত্রণালয়ের দয়ার দিকে চেয়ে আছেন এলাকার হাজারো ভুক্তভোগী মানুষ।

গাংনী উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস সুত্রে জানা গেছে, ভৌগলিক দিক থেকে গাংনী উপজেলা মেহেরপুর জেলার অর্ধেক। জেলার জনসংখ্যা অর্ধেকের চেয়ে এখানে বেশি। ফলে জমি কেনাবেচনার পরিমাণও অনেক। প্রতি মাসে দেড় থেকে দুই হাজার দলিল রেজিস্ট্রি হয়ে থাকে। সর্বশেষ সাব রেজিস্ট্রার ২৯ ডিসেম্বর বদলি অবস্থায় নয় হাজার ৯৭৪ দলিল ভলিউম রেজিস্ট্রির প্রক্রিয়াধীন ছিল। ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার ভলিউম হয়েছে। কিন্তু সাব-রেজিস্ট্রারের স্বাক্ষরের অভাবে সেগুলো মলিকদের দিতে পারছে না। একইভাবে আরো ছয় হাজার ৯৭৪ দলিল ভলিউম রেজিস্ট্রিারে অন্তর্ভূক্ত হচ্ছে। সব মিলিয়ে প্রায় ১০ হাজার দলিল হাতে পাওয়ার অপেক্ষায় দিন গুণছেন দলিল মালিকরা। 

জমির ক্রেতা পূর্ব মালসাদহ গ্রামের মুক্তার হোসেন বলেন, ‘আমি এক প্রবাসীর কাছ থেকে দেড় বিঘা জমি কিনে রেজিস্ট্রির দিনক্ষণ ঠিক করি। এখন সেই প্রবাসী আবারো বিদেশ চলে যাচ্ছেন। এখন জমি রেজিস্ট্রি না হলে আমার জমির মালিকানা অনিশ্চিত। এ অবস্থায় আমার দুশ্চিন্তার সীমা নেই।’

গাংনী উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘রেজিস্ট্রি কার্যক্রম বন্ধ থাকায় আমরা ৭০ জন মহুরী ও ১৫০ জন সহকারী বেকার সময় কাটাচ্ছি। অপরদিকে, ডিসেম্বর মাসে আমাদের সনদ নবায়ন হয়নি। জেলা রেজিস্ট্রিার না থাকায় আমাদের দুর্ভোগের কথা বলার জায়গাও নেই।’

গাংনী সাব রেজিস্ট্রি অফিসের টিসি মহরার আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘প্রতিদিনই দলিল নিতে এসে ফিরে যাচ্ছেন দলিল মালিকরা। সাব-রেজিস্ট্রার না থাকায় আমাদের সকল কাজ স্থবির হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন মানুষের নানা মন্তব্য ও গালমন্দও শুনতে হচ্ছে।’

এদিকে, মুজিবনগর ও সদর উপজেলা অফিস সামলাচ্ছেন সাব-রেজিস্ট্রার শফিকুল ইসলাম। সদর উপজেলার দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি প্রতি বুধবার তিনি মুজিবনগরে জমি রেজিস্ট্রি করেন। এতে সদর ও মুজিবনগর উপজেলার মানুষও ভোগান্তিতে রয়েছেন। সময় মতো দলিল রেজিস্ট্রি ও দলিলের নকল না পেয়ে জরুরি কাজ আটকে যাচ্ছে অনেকের।

মুজিবনগর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের স্থায়ী কার্যক্রম শুরু হয়েছে ২০১৩ সাল থেকে। এখানে প্রতি সপ্তাহে ৬০-৭০ দলিল রেজিস্ট্রি হয়। ২০১৫ সাল থেকে সাব-রেজিস্ট্রার সাদিকুল ইসলাম তালুকদার ২০১৮ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। তারপর থেকেই এ পদটি ফাঁকা।

সাব-রেজিস্ট্রার পদায়ন ও বদলি হয় আইন ও বিচার মন্ত্রণালয় থেকে। তাই এ সমস্যা সমাধানে মন্ত্রণালয়ের সুনজর ছাড়া ভোগান্তি লাঘব সম্ভব নয় বলে মনে করেন সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সংশ্লিষ্ঠরা।

মেহেরপুর জেলা প্রশাসক আতাউল গনি জানান, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করছি, এলাকার মানুষের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে দ্রুত শূন্য পদে সাব-রেজিস্ট্রার নিয়োগ হবে।

 

মহাসিন/বুলাকী