সারা বাংলা

জামালপুরে পুলিশের সাথে কী হয়েছে যৌনকর্মীদের!

জামালপুরে রাণীগঞ্জ পতিতাপল্লীতে মাদকবিরোধী ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান চলাকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়েছে যৌনকর্মীরা।

হালিম নামে এক মাদক ব্যবসায়ীকে আটকের পর মাদক ব্যবসায়ী ও পতিতা সর্দারনী কবিতার নেতৃত্বে এই হামলা চালানো হয়েছে। এসময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে ও গাড়ি ভাংচুর করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ফাঁকা গুলিবর্ষণ এবং যৌনকর্মীদের লাঠিচার্জ করে। লাঠিচার্জে পতিতা সর্দারনী কবিতা, ডলি, রজু, ঝানু, বিলকিস, নাসিমা, জুঁইসহ ১০/১২ জন আহত হয়েছে।

পুলিশ ও আনসার বাহিনী নিয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু আব্দুল্লাহ খানের নেতৃত্বে মাদকবিরোধী অভিযান চলাকালে সোমবার এ ঘটনা ঘটে।

এদিকে যৌনকর্মীদের দাবি, তল্লাশির নামে তাদেরকে বেধড়ক মারধর করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এ সময় ৭ রাউন্ড ফাঁকা গুলিও করা হয়।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দাবি, যৌনকর্মীরা মাদকবিরোধী অভিযানে হামলা ও পুলিশের একটি মাইক্রোবাস ভাংচুর করেছে। তবে কোনো গোলাগুলির ঘটনা ঘটেনি।

মাদকবিরোধী অভিযানে হালিম (৪০) ও আলম নামে দুজন মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়। আলমের বিরুদ্ধে কোনো তথ্যপ্রমাণ না থাকায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু আব্দুল্লাহ খান জানান, ভ্রাম্যমাণ আদালতে হালিমকে ৩ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানা অনাদায়ে আরও ১৫ দিনের কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন। দণ্ডপ্রাপ্ত হালিম শহরের মুসলিমাবাদের মকবুল হোসেন ড্রাইভারের ছেলে। তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।

অভিযান চলাকালে কোন প্রকার গুলি বর্ষনের ঘটনা ঘটেনি বলেও জানান তিনি।

এ ঘটনার পরপরই জামালপুর প্রেসক্লাবে এসে অভিযোগ করেন মারধরের শিকার যৌনকর্মীরা। তারা বলেন, ‘আমরা রাস্তায় এলে আমাদের মারধর করা হয়। টেনেহিচঁড়ে জামাকাপড় ছিঁড়ে ফেলা হয়। কিল, ঘুষি, বন্দুকের নল দিয়ে আঘাত করা হয়। এ সময় যৌনপল্লীর ৩ নম্বর বাড়ির রজু, ৪ নম্বর বাড়ির জানু ও বিলকিস, ৫ নম্বর বাড়ির নাসিমা, ৮ নম্বর বাড়ির জুঁই ও ৯ নম্বর বাড়ির কবিতা আহত হন।’

যৌনকর্মী কবিতা বলেন, ‘মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ইনস্পেক্টর হুমায়ূনসহ পুলিশের লোকজন মদের কাউন্টারে বসে কাউন্টার মালিকের সাথে কথাবার্তা বলে। ইন্সপেক্টর হুমায়ূন আমাদের কাছে প্রতিজনের কাছে মাসে ২০ হাজার টাকা চায়। আমরা টাকা দিতে না রাজি দেইখা তখন সে বলে, টাকা যখন দিবিই না তালে তগো সাথে পরে বুঝমুনি তগো কিভাবে শায়েস্তা করা লাগে। তগোরে মাদক ব্যবসায়ী বানাইয়া আমরা চালান করমু। আর কিভাবে এখানে থাকস, সেইডাও আমরা দেখমু।’

কবিতা বলেন, ‘আমাদের কথা, আমরা নিজেরাই কইরা খাইতে পারতাছি না, আমরা তাগো টেকা দিমু কিভাবে? আমগর টেকা দেওনের কোনো রাস্তা নাই। একটাই রাস্তা আছে, হয় আমগরে যে ৭টা গুলি করছিল যেভাবে, হেইভাবেই মাইরা ফালাক একবারে, আর নয় কি করব কইরে দেইক। আমরা হামলা করব ক্যা? আমার চিল্লাচিল্লি করছি, যহন আমগরে মারতাছে।’

যৌনকর্মী শিল্পী কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমরা নিজের শরীল বিক্রি কইরে খাই। মাদক বিক্রি করি না। তারপরেও পুলিশ বলতাছে আমরা মাদক ব্যবসা করি। পুলিশ যখনই ধরে তহনই বলে এত টেকা দেও, এত দেকা দেও। আমরা টেকা দিমু কইত্তে? আবগারির হুমায়ূন স্যারই তো কাউন্টারে আসে। কাউন্টারের মালিক শিশিরের সাথে কবিতার ঝগড়া। হের লাইগ্যা হুমায়ূন স্যার টেকা চাইছে। দুইডে ভাতের লাইগ্যা আমরা ইনু থাকি। এহন আমগরেই পেট চলে না, তাগো টেকা দিমু কিবেই?’

শিউলি বলেন, ‘সবাই দৌড়াদৌড়ি করতাছে আর বলতাছে ব্লক পরছে, রেট পরছে। আমরা বাইরাইছি। দেহি আসলেই গাড়ি ঢুকছে। ওদের কাজ ওরা করব, আমগো কী। আমরা তো মাদক ব্যবসা করি না, দেহ বিক্রি করি। ওরা বলতাছে আমরাও নাকি মাদক ব্যবসা করি। এজন্য আমগরে মারে।’

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক মো. হুমায়ূন কবীর ভূঁইয়া বলেন, ‘পতিতাদের কাছে টাকা দাবির অভিযোগ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। অভিযান চলাকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়েছে পতিতারা। ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে তারা একটি মাইক্রোবাস ভাংচুর করেছে। মাদক বিরোধী অভিযানে পতিতাদের হামলা ও গাড়ি ভাংচুরের ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।’

সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. সালেমুজ্জামান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি যৌনকর্মীদের সাথে এ বিষয়ে কথাবার্তা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় মামলা দেওয়া হলে মামলা নেওয়া হবে।’ সেলিম আব্বাস/টিপু