সারা বাংলা

আদালতে সিরিয়াল ধর্ষক রানার লোমহর্ষক বর্ণনা

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত জসিম উদ্দিন রানা ছিলেন সিরিয়াল ধর্ষক। তিনি অর্ধশত ধর্ষণ আর পাতানো স্ত্রীকে হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দিলেন আদালতে।

নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট কাউসার আলমের আদালতে মঙ্গলবার ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় রানা। এসময় তার স্বীকারোক্তিতে উঠে আসে কিশোরীদের প্রেমের ফাঁদে ফেলা, পাতানো বিয়ে আর দ্বিতীয় স্ত্রী হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা। বিষয়টি নিশ্চিত  করেছেন মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ ।  

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ভোলাব তদন্ত কেন্দ্রের এসআই আবুল কালাম আজাদ জানান, একটি বেসরকারি কোম্পানির কর্মরত জসিমউদ্দিন রানা ছিলেন কাঞ্চন পৌরসভার কাঞ্চন দক্ষিণ বাজার এলাকার মনির মাস্টারের বাড়ির ভাড়াটিয়া। গত বৃহস্পতিবার রাতে তার স্ত্রী সুরভী আক্তার(১৯) কে শ্বাসরোধে হত্যা করে রানা পালিয়ে যায়।

পুলিশ সোমবার রাতে রানার নিজবাড়ি বরগুনার পাথরঘাটার থানাধীন পদ্মা করমজাতলা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে। 

আবুল কালাম আজাদ জানান, মঙ্গলবার ( ১০ মার্চ ) বিকেলে আটক রানা নারায়ণগঞ্জ আদালতের বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট কাউসার আলমের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।

স্বীকারোক্তিতে রানা জানায়, ১৫ বছর বয়স থেকেই তার বিকৃত যৌন লালসা ছিল। সে স্কুল জীবন থেকেই বিভিন্ন কিশোরীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ করতো। এ কারণে এলাকা ছাড়া হয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে বেড়াতো রানা। সে যেখানেই যেতো সে এলাকার বিবাহিত বিধবা বিপত্নীক অথবা কিশোরীদের কথার মায়াজালে ফেলে ধর্ষণ করতো।

গত ২০১৬ সালে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার নোনদা এলাকার এক মেয়ে প্রেমের টানে তার কাছে ছুটে এলে সে তাকে ঘরে তোলে। পরে নকল কাজী দিয়ে বিয়ের নাটক করে তার সাথে সংসার শুরু করে। সে দাম্পত্যে এক কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। গত বছর তাকে ফেলে পালিয়ে সাভার চলে আসে রানা। সেখানে মোবাইলে প্রেমের সম্পর্কের জেরে মাদারীপুরের সদর থানাধীন চরমুগুরিয়া এলাকার দেলোয়ার হোসেনের মেয়ে সুরভী আক্তার তার কাছে ছুটে আসে। আবারো নকল কাজী দিয়ে বিয়ে করে সংসার শুরু করে রানা। এই বিয়ের ব্যাপারটি রানার কয়েকজন প্রেমিকা টের পেয়ে যাওয়ায় সে  দুই মাস আগে রূপগঞ্জে চলে আসে। এখানে চাকরি নিয়ে কাঞ্চন বাজারের মনির মাস্টারের বাড়িতে ভাড়ায় বসবাস শুরু করে।

সুরভি নকল বিয়ে ও বহুনারীর সাথে অনৈতিক সম্পর্কের বিষয়টি টের পেয়ে তাকে আসল কাবিন করতে চাপ দেয়। অন্যথায় তার পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলার হুমকি দেয় সুরভী। এতে ঘাবড়ে গিয়ে রানা স্ত্রী সুরভীকে  বৃহস্পতিবার  রাতে বাড়িতে পোলাও মাংস রান্নার করার জন্য অনুরোধ  করে। পরে রাতে খাবারের পর  কোকাকোলার সাথে নেশাজাত ট্যাবলেট খাইয়ে সুরভীকে অচেতন করে রাতেই সুরভির গলায় ওড়না পেঁচিয়ে তাকে হত্যা করে। পরে লাশ ঘরে রেখে  বাইরে থেকে তালাবদ্ধ করে বরগুনায় পালিয়ে যায়। সুরভী মারা গেছে সেই খবর আবার শ্বশুর দেলোয়ার হোসেনকে মোবাইলে জানায়। এ ঘটনায় সুরভীর বাবা বাদী হয়ে রূপগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এদিকে সোমবার সন্ধ্যার দিকে পুলিশ আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় বরগুনার পাথরঘাটার থানাধীন পদ্মা করমজাতলা এলাকার তার নিজ বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে ।

আবুল কালাম আজাদ জানান, পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে স্বীকার করেছে  গত চার বছরে সে ৪৮ জন নারীর সাথে শাররিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে। তাদের মধ্যে কাউকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে, কাউকে  আবার টাকার প্রলোভন দেখিয়ে।  আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে দ্বিতীয় স্ত্রীকে খুনের বর্ণনা দিয়েছেন।  তার দুই স্ত্রীর কোনটিরই কাবিননামা নেই। মূলত দ্বিতীয় স্ত্রী  তার একাধিক নারীর সাথে অনৈতিক সম্পর্কের কথা জেনে যাওয়া এবং বিয়ের কাবিন করার জন্য চাপ দেয়ার কারণেই তাকে হত্যা করেছে সে তা স্বীকার করেছে।

এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মাহামুদুল হাসান বলেন, ‘স্ত্রীকে হত্যার দায় স্বীকার করে  আসামি জসিম উদ্দিন রানা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছেন। ঘাতক রানার অন্যান্য অপকর্মগুলো আমরা তদন্ত করে দেখছি।’

 

নারায়ণগঞ্জ/রাকিব/টিপু