সারা বাংলা

‘কলমা পড়ে নে, এনকাউন্টারে দেবো’ (ভিডিও)

মধ্যরাতে বাসা থেকে তুলে নিয়ে কুড়িগ্রামের সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা নির্যাতন চালান। এ সময় তাকে বিবস্ত্র করে ভিডিও করার পাশাপাশি ক্রসফায়ারে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়।

জামিনের পর আরিফুল ইসলাম গুরুতর আহত অবস্থায় কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তাকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. সুজাউদ্দৌলা জামিন দেন।

হাসপাতালে ভর্তি অবস্থায় গণমাধ্যমকে নিজের উপর চালানো নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন আরিফুল।

আরিফুল বলেন, ‘‘শুক্রবার মধ্যরাতে বাসার দরজা ভেঙে আমাকে প্রথমে আঘাত করেন আরডিসি। উনি আমাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন এবং টেনে-হেঁচড়ে বের করে নিয়ে আসেন। সঙ্গে সঙ্গে আমার হাত এবং চোখ বেঁধে ফেলেন। এরপর এনকাউন্টার দেয়ার কথা বলে আমাকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যান।’’

তিনি বলেন, ‘‘আমি অনেক আকুতি-মিনতি করি এবং আমার আল্লাহর কসম দেই; সন্তানদের কসম দেই এবং প্রাণভিক্ষা চাই। এরপরও তারা ক্ষান্ত হচ্ছিলেন না। আমাকে বার বার বলছিলেন, ‘কলমা পড়ে নে’।’’

এ সময় তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন কর্মকর্তারা। গাড়িতে করে কোনো এক জায়গা থেকে ঘুরিয়ে তাকে আবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আনা হয় বলে জানান আরিফুল।

আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘‘সেখানে কোনোরকমে হাত দিয়ে চোখের বাঁধন আলগা করে দেখি- আমি ডিসি অফিসে। এরপর আবার শক্ত করে চোখ বেঁধে একটি রুমে নিয়ে গিয়ে আরডিসির নেতৃত্বে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ এবং নির্যাতন করা হয়।

‘‘আরডিসি নিজেই আমাকে মার দেন। বিবস্ত্র করে আমার ভিডিও ধারণ করা হয়। এরপর আমার কাছ থেকে চারটি সিগনেচার নেওয়া হয় চোখ বাঁধা অবস্থায়। কিসের সিগনেচার নিয়েছে সেটা আমি এখনো পর্যন্ত জানি না।’’

এরপর তাড়াহুড়ো করে তাকে কারাগারে নেওয়া হয়। নির্যাতনের চিহ্ন তার সারা শরীরে রয়েছে বলে জানান আরিফুল।

জামিনের আবেদন করেছেন কিনা- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আরিফুল ইসলাম জানান, হাসপাতালে আসার পূর্ব পর্যন্ত যা হয়েছে, সব তার অমতে হয়েছে। তাকে ফোর্স করে করা হয়েছে।

আরিফুল ইসলামের পরিবারের সদস্যরা জানান, শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমার নেতৃত্বে কয়েকজন শহরের চড়ুয়াপাড়ার বাসা থেকে আরিফুলকে ধরে নিয়ে যায়। পরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়ে তার বাসা থেকে আধা বোতল মদ ও দেড়শত গ্রাম গাঁজা উদ্ধারের দায়ে এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

বাদশা সৈকত/বকুল