সারা বাংলা

কানাডা থেকে ফিরে ভিআইপিদের সংস্পর্শে শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান

রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোকবুল হোসেন করোনায় বিপর্যস্ত কানাডা থেকে দেশে ফিরেছেন গত ১১ মার্চ।

এরপর ১৫ মার্চ থেকে শিক্ষাবোর্ডে অফিস শুরু করেন।

এমন কী তিনি সিটি মেয়রসহ রাজশাহীতে ভিআইপি ব্যক্তিদের সঙ্গে নিবিড় সংস্পর্শে এসে অংশ নিয়েছেন নানা অনুষ্ঠানেও। শতাধিক ব্যক্তির সঙ্গে খেয়েছেন প্রীতিভোজও।

স্বাস্থ্যবিধি না মেনে অধ্যাপক মোকবুল নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এনিয়ে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. গোপেন্দ্রনাথ।

দুই সপ্তাহের কানাডা সফর শেষে দেশে ফেরার পর করোনা পরিস্থিতিতে নিয়মানুযায়ী আগামী ২৫ মার্চ পর্যন্ত অধ্যাপক মোকবুলের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার কথা। কিন্তু কিছুতেই হোম কোয়ারেন্টাইনের বাধ্যবাধকতা মানছেন না বোর্ড চেয়ারম্যান। স্বাধীনভাবে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন তিনি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিকে কানাডা সফরে যান শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোকবুল হোসেন। সফর শেষে দেশে ফেরেন ১১ মার্চ রাতে। রাজশাহীতে ফিরে ১৫ মার্চ থেকে শিক্ষাবোর্ডের নিজ দফতরে বসতে শুরু করেন তিনি। ১৬ মার্চ রাজশাহী শিক্ষাবোর্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশ নেন।  

 

ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। অতিথি ছিলেন শিক্ষাবোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান তানবিরুল আলম, রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক হবিবুর রহমান, রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডি‌ক‌্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. এসআর তরফদার।

পরদিন ১৭ মার্চ রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে কেককাটা, ম্যুরাল উদ্বোধন, আলোচনাসভা ও প্রীতিভোজেও অংশ নেন ড. মোকবুল। ওই অনুষ্ঠানেও প্রধান অতিথি ছিলেন সিটি মেয়র লিটন। অতিথি ছিলেন শিক্ষাবোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান তানবিরুল আলম, আবুল হায়াত, বোর্ড সচিব ড. মোয়াজ্জেম হোসেন, রাসিকের প্যানেল মেয়র শরিফুল ইসলাম বাবু ও চার ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ কয়েকশ মানুষ।

করোনা ঝুঁকির পর হোম কোয়ারেন্টাইন না মানার বিষয়ে অধ্যাপক মোকবুল হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি বিষয়টি নিয়ে খুবই বিব্রত। আমি স্বাস্থ্যবিধি মেনেই চলছি।’

বোর্ডে অফিস করা এবং রাসিক মেয়রের সঙ্গে প্রোগ্রামে অংশ নেয়ার ছবির কথা জানালে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ছিল, তাই গিয়েছিলাম। এ ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হবার কিছু নেই।’

আপনি কানাডা থেকে ফেরার পর জনসমাগমমূলক অনুষ্ঠানে আসতে পারেন কী না- এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। এরপর আর কোন কথা বলতে রাজি হন নি তিনি।

এদিকে শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান কোয়ারেন্টাইন না মানার বিষয়টি জানাজানি হলে ক্ষোভ জানিয়েছেন তাদের সংস্পর্শে আসা একাধিক ব্যক্তি এবং সাধারণ মানুষ। এ ব্যাপারে রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক হবিবুর রহমান বলেন, ‘সকলের উচিত দায়িত্বশীল আচরণ করা। কেউ যদি না করেন সেটি দুঃখজনক।’

তবে এ ব্যাপারে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক হামিদুল হক শনিবার সন্ধ্যায় বলেন, ‘শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান কোয়ারেন্টাইন মানছেন না বলে আমরা অভিযোগ পেয়েছি। এরপরই তাকে কড়া ভাষায় নিয়ম মেনে চলার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তিনি বাকি সময় কোয়ারেন্টাইন মেনে চলবেন বলে আমাদের নিশ্চিত করেছেন।’

এ বিষয়ে ডা. গোপেন্দ্রনাথ বলেন,  শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান যেটি করেছেন, তা একেবারে উচিত নয়। কারণ তার সংস্পর্শে যেসব ব্যক্তিরা এসেছেন, তারাও এখন এক ধরনের শঙ্কার মধ্যে পড়ে গেলেন। তার সাথে যোগাযোগ হয়েছে। তিনি এখন থেকে সব নিয়ম মেনে চলবেন বলে জানিয়েছেন।’

 

রাজশাহী/তানজিমুল/বুলাকী