সারা বাংলা

বরিশালের হাসপাতালগুলোতে রোগী কমছে

করোনাভাইরাসের কারণে বরিশালের হাসপাতালগুলোতে কমছে সাধারণ রোগীর সংখ্যা। গুরুতর অসুস্থ্য হওয়া ছাড়া কেউই আসছেন না হাসপাতালে। আবার যারা ভর্তি হচ্ছেন তাদের মধ্যে অনেকেই পুরোপুরি সুস্থ না হয়ে স্বেচ্ছায় হাসপাতাল ত্যাগ করছেন। এমনকি চিকিৎসকদের প্রাইভেট চেম্বারেও রোগীর উপস্থিতি কম।

সবমিলিয়ে বরিশালবাসীর মধ্যে সচেতনা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করছেন চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্টরা।

অন্যদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে হোম কোয়ারেন্টাইনে বাড়ছে প্রবাসীদের ভিড়। মঙ্গলবার (২৪ মার্চ) পর্যন্ত বরিশাল বিভাগে ২ হাজার ২৩৪ জন প্রবাসীকে হোম কোয়ারেন্টাইনের আওতায় আনা হয়েছে।

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের তথ্য মতে, প্রতিদিনই এ হাসপাতালের বহিঃবিভাগ ও আন্তঃবিভাগে রোগীর সংখ্যা কমে আসছে। আবার যারা ভর্তি হয়েছে তাদের মধ্যে অনেকেই পুরোপুরি সুস্থ্য না হয়েই নিজ ইচ্ছায় হাসপাতাল ত্যাগ করেছে।

গত এক সপ্তাহে বরিশাল বিভাগের অন্যতম চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠান শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে পুরোপুরি সুস্থ্য না হয়েই নিজ ইচ্ছায় হাসপাতাল ত্যাগ করেছেন ৫৮১ জন।

গত ১৬ মার্চ এই হাসপাতালে আন্তঃবিভাগে চিকিৎসাধীন ছিলেন ১৫৮৯ জন। তাদের মধ্যে স্বেচ্ছায় হাসপাতাল ত্যাগ করেছেন ৬৫ জন। ১৭ মার্চ এখানে চিকিৎসাধীন ছিলেন ১৬১৪, স্বেচ্ছায় হাসপাতাল ছেড়েছে ৮৩। একইভাবে ১৮ মার্চ ভর্তি থাকা ১৫৩৮ জন রোগীর মধ্যে স্বেচ্ছায় হাসপাতাল ছেড়েছে ৯২। ১৯ মার্চ রোগী কমে ভর্তি ছিলেন ১৫০৬ জন। আর ওইদিন স্বেচ্ছায় হাসপাতাল ত্যাগ করেছেন ৭৮ জন। ২০ মার্চ চিকিৎসাধীন ১১৯০ রোগীর মধ্যে স্বেচ্ছায় হাসপাতাল ত্যাগ করেছেন ৭০ জন। ২১ মার্চ ১১৯৩ রোগীর মধ্যে স্বেচ্ছায় হাসপাতাল ত্যাগ করেছেন ৭০ জন। ২২ মার্চ ভর্তি রোগীর সংখ্যা হাজারের নিচে  নেমে দাঁড়ায় ৯৮৪ জনে। ওইদিন স্বেচ্ছায় হাসপাতাল ছেড়েছে করেছেন ৫০ জন। ২৩ মার্চ এ হাসপাতাল ভর্তি থাকা ৮৫৭ রোগীর মধ্যে বেলা ১২টা পর্যন্ত স্বেচ্ছায় হাসপাতাল ত্যাগ করেছে ৩৯ জন। এছাড়া ২৪ মার্চ এ হাসপাতাল ভর্তি থাকা ৬৫৭ রোগীর মধ্যে বেলা ১২টা পর্যন্ত স্বেচ্ছায় হাসপাতাল ত্যাগ করেছেন ৭৩ জন।

একই ভাবে হাসপাতালে বহিঃবিভাগে গত ১৬ মার্চের আগে চিকিৎসকদের পরামর্শ নিতে আসতেন ১২শ থেকে ১৫শ রোগী। আর ১৬ মার্চের পর এর সংখ্যা কমে গড়ে প্রতিদিন দাঁড়িয়েছে ২শ থেকে ৫শতে। আর মঙ্গলবার (২৪ মার্চ) এ সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ২১০ জনে এসে ঠেকেছে।

অপরদিকে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও একই চিত্র। পাশাপাশি চিকিৎসকদের প্রাইভেট চেম্বারেও অনেকটা রোগীশূন্য। একারণে কোনো কোনো চেম্বারে এখন চিকিৎসক বসেন না।

এ ব্যাপারে হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকির হোসেন জানান, করোনা সম্পর্কে বরিশালের মানুষ অনেক সচেতন হয়েছেন। এ হাসপাতালের ইনডোরে আগে গড়ে প্রতিদিন রোগী থাকতো ১৮শ থেকে ২ হাজার। আর মঙ্গলবার সেখানে মাত্র ৬৫৭ জনে পৌঁছেছে। ফলে এখনো ৩৪৭ শয্যা ফাঁকা রয়েছে। যা হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা।

একই মন্তব্য করে মঙ্গলবার (২৪ মার্চ) দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস জানান, বরিশালের মানুষ অনেক সচেতন হয়েছে।

তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে বরিশাল বিভাগে ২ হাজার ২৩৪ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। যার মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন ২৩৮ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে আনা হয়েছে। এর মধ্যে বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকায় ১৪ জন, বরিশাল জেলায় ৪৭৮, পটুয়াখালীতে ৬০৭, ভোলায় ৩২২, পিরোজপুরে ৩৪২, বরগুনায় ৩০০ ও ঝালকাঠিতে ১৭১ জন।

 

বরিশাল/জে.খান স্বপন/এসএম