সারা বাংলা

কবরস্থান ভাড়া নিয়ে বালুর ব্যবসা

ইসলাম ধর্মের বিধান অনুযায়ী কোন মুসলিম মৃত্যুবরণ করলে তাকে কবরস্থ বা দাফন করতে হয়। আর এই কবরকেই বলা হয়  ‘শেষ ঠিকানা’। এমন এক স্পর্শকাতর স্থান ভাড়া নিয়ে বালুর ব্যবসা চালাচ্ছেন খুলনার একটি প্রতিষ্ঠান, সেই ভাড়ার চুক্তিও তারা করেছেন স্থানীয় মসজিদ কমিটির সঙ্গে।

আলোচিত এ ঘটনা খুলনা শহরতলীর লবণচরা-মাথাভাঙ্গা মৌজার পুটিমারী গ্রামের।

স্থানীয় বাসিন্দা আলহাজ্ব আব্দুর রউফের দান করা ‘হাবিবিয়া’ নামক এই কবরখানায় এখন চলছে জমজমাট বালুর ব্যবসা। যেখান থেকে স্কেভেটর মেশিন দিয়ে কেটে প্রতিদিন অসংখ্য ট্রাকে করে শতশত ফুট বালু কেনাবেচা চলছে।

এতে আগের কবর রক্ষণাবেক্ষণ ও নতুন কবর দেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হলেও প্রভাবশালীদের ভয়ে স্থানীয়রা এ বিষয়ে কোন কিছু বলার সাহস পাচ্ছেন না। তবে চরম ক্ষোভ ও চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে অনেক দিন ধরে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কবরখানাজুড়েই তৈরি করা হয়েছে বিশাল আকৃতির বালুর বেড। যেখানে বিভিন্ন স্থান থেকে বালু এনে বড় ধরনের স্তুপ করা হয়েছে। সেখান থেকে বিশাল স্কেভেটর দিয়ে ট্রাকে বালু তোলা হচ্ছে। আর বালুর সঙ্গে থাকা পানিতে এক কোনে থাকা কবরগুলো যেন ভেসে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এমনকি কবরখানার ভিত্তিপ্রস্তর বা নাম ফলকটিও ট্রাকের ধাক্কায় অনেকটা ভেঙ্গে গেছে। বালুর বেডের ম্যানেজার পরিচয়দানকারী আব্দুর রহমানকে কবরখানা থেকে বালু কাটার বিষয়টি দেখভাল করতে দেখা যায়। এ সময় স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এসএম আব্দুর রউফ নামে এক ব্যক্তি বটিয়াঘাটার মাথাভাঙ্গা মৌজার পুটিমারিতে কবরখানার জন্য এক বিঘা জমি দান করেন। ২০১২ সালের ১২ এপ্রিল খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক আনুষ্ঠানিকভাবে ‘হাবিবিয়া কবরস্থান’ নামে এ কবরখানার ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। বর্তমান সময় পর্যন্ত এখানে ২০-২৫ জনের লাশ দাফন করা হয়েছে।  কবরখানা পরিচালনার জন্য একটি কমিটি রয়েছে। কিন্তু কবরখানা কমিটিকে পাশ কাটিয়ে স্থানীয় পুটিমারি বায়তুল মুকাদ্দাস জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি সেকেন্দার আলী শেখ ও সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ হাওলাদার ময়না হাবিবিয়া কবরস্থানের জমি প্রভাবশালী ভূমি ব্যবসায়ী ‘রূপসা স্টোন এন্ড স্যান্ট সাপ্লাই’ নামক প্রতিষ্ঠানের সত্বাধিকারী শেখ আবেদ আলীর কাছে মাসিক ২ হাজার টাকা হিসেবে ৫ বছরের জন্য ভাড়া দেন। কবরখানাটি মসজিদের না হলেও মসজিদ কমিটি কবরখানাটি ভাড়া দেওয়ায় হতবাক হন কবরখানা কমিটি। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে নীরব থাকেন তারাও। ফলে গত তিন বছর ধরেই সেখানে এই ব্যবসা অব্যাহত রয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা এসএম বাদশা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কবরখানার জমিটি ডোবা থাকায় সেটি ভরাট করে তারা ছেড়ে দেবে, সেভাবেই জানতাম। কিন্তু তাদের ব্যবসার কারণে বালুর পানিতে কবরগুলো ডুবে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। কবরও দিতে সমস্যা হচ্ছে। এছাড়া ভাড়ার টাকাও মসজিদের ফান্ডে জমা হয়নি।

কবরস্থান পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ বলেন, মসজিদ কমিটি কবরখানা ভাড়া দিয়েছে। ভাড়ার টাকা নিয়েও দুর্নীতি হয়েছে। যে কারণে গত সপ্তাহে বালুর কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখন কবরখানার জমি ছেড়ে দিয়ে সীমানা দেয়াল করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বিষয়টি স্বীকার করেন মসজিদ কমিটির সভাপতি সেকেন্দার আলী শেখ। তিনি বলেন, কবরখানা ভরাট করার জন্যই ভাড়া দেওয়া হয়েছিল। সেখানে দু’ আড়াই বছর তারা ব্যবসা করছে। এক বছরের ভাড়ার টাকা পরিশোধ করেছে। আরো টাকা পাওনা রয়েছে। তবে, এখন বললে তারা জমি ছেড়ে দেবে বলেও জানান তিনি।

এদিকে, খবরখানার জমি স্ট্যাম্পে চুক্তি করে ভাড়া নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন সাবেক ফুড কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী শেখ আবেদ আলী। এমনকি তার প্রতিষ্ঠানের নাম ‘রূপসা স্টোন এন্ড সেন্ট সাপ্লাই’ নয় বলেও জানান তিনি। তার প্রতিষ্ঠানের নাম ‘রূপসা রানস লিমিটেড’ উল্লেখ করে এ প্রতিবেদককে তিনি বলেন, মূলত: তার নিজস্ব ২৭ শতক এবং কবরখানার বাকি অংশ জমি ভাড়া নিয়েছেন হিরক নামে এক ব্যক্তি। তিনিই সেখানে বালুর ব্যবসা করছেন। ভাড়া শেষ হলে কবরখানা ভরাট করে দেয়ার কথা রয়েছে, উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন কবরখানার নতুন কমিটি যদি ভাড়া দিতে না চায়, তাহলে তারা ছেড়ে দেবে।  তিনি কবরখানা ভাড়া নেননি এবং স্ট্যাম্পে কোন স্বাক্ষরও করেননি বলে দাবি করলেও কবরখানা কমিটির সভাপতি সেকেন্দার আলী শেখ ওই আবেদ আলীর সঙ্গেই চুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। খুলনা/মুহাম্মদ নূরুজ্জামান/সাজেদ