সারা বাংলা

রাজশাহী চিড়িয়াখানার চার হরিণ কুকুরের পেটে

রাজশাহীর শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানায় চারটি হরিণকে খেয়ে ফেলেছে পাঁচ কুকুর।

শুক্রবার (৩ এপ্রিল) ভোরে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে তড়িঘড়ি করে সকালেই হরিণগুলোর দেহের অবশিষ্টাংশ মাটিচাপা দেওয়া হয়েছে। হরিণের শেড থেকে কুকুর পাঁচটিকে বের করে দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে বিকেলে চিড়িয়াখানায় গিয়ে সুপারভাইজার শরিফুল ইসলামকে পাওয়া যায়। তিনি ঘটনার কিছুই জানেন না বলে দাবি করেন।

পরে হরিণের শেডের পাশে মধু নামের একজন পশুর পরিচর্যকারীকে পাওয়া যায়। হরিণের শেডে কুকুর ঢুকেছিল কোন দিক দিয়ে, তা জানতে চাইলে তিনি পূর্ব দিকের বেড়ার অংশ দেখিয়ে দেন। মধু দাবি করেন, তার কোনো দোষ নেই।

মধুর স্বীকারোক্তির পর সুপারভাইজার শরিফুল ইসলামও বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি জানান, চিড়িয়াখানায় গত তিন মাসে হরিণের ১৫টি বাচ্চা জন্ম নিয়েছে। নেড়ি কুকুরের দল ঢোকার সময় শেডে হরিণ ছিল ৭৫টি। কুকুরে খাওয়ার পর এখন ৭১টি হরিণ আছে। কুকুরের পেটে যাওয়া চার হরিণের তিনটিই বাচ্চা। অপরটি তাদের মা। হরিণগুলোর দেহের অবশিষ্টাংশ শেডের ভেতরেই মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়েছে। জায়গাটি এখনো উঁচু হয়ে আছে।

চিড়িয়াখানায় বেশকিছু জমি নিয়ে হরিণের শেড করা হয়েছে। এর ভেতর টিন দিয়ে দুটি ঘর করা নির্মাণ করা হয়েছে। হরিণগুলো সেখানে পানি ও খাবার খায়। ছায়ায় বিশ্রাম করে। বাকি অংশটুকু হরিণের বিচরণের জন্য ফাঁকা রাখা আছে। চারপাশে আছে লোহা এবং কাঁটাতারের বেড়া। বিকেলে সবগুলো হরিণ ফাঁকা এক জায়গায় বসে ছিল। হরিণগুলোর চোখে-মুখে আতঙ্কের ছাপ দেখা গেছে।

বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চিড়িয়াখানার তত্ত্বাবধায়ক মাহবুব হোসেনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, শেডের ভেতরে কিছু দিন আগে মাটি ফেলা হয়েছে। এ কারণে কিছু অংশ বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। বেড়ার ফাঁক দিয়েই কুকুরগুলো শেডে ঢুকেছে।

বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য তিনি চিড়িয়াখানার ভেটেরিনারি সার্জন ডা. ফরহাদ উদ্দীনের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। তবে কয়েক দফা ফোন করা হলেও ভেটেরিনারি সার্জন ডা. ফরহাদ উদ্দীনের ফোনটি ব্যস্ত পাওয়া যায়।

শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা পরিচালনা করে রাজশাহী সিটি করপোরেশন। যোগাযোগ করা হলে চিড়িয়াখানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সমর কুমার পাল বিষয়টি স্বীকার করে বলেছেন, এটি দুর্ঘটনা। খুব দুঃখজনক বিষয়টি।

তিনি বলেন, রাত ২টা পর্যন্ত চিড়িয়াখানার পুকুরে সংস্কারকাজ চলছিল। লোকজন ছিল। তখন পর্যন্ত কুকুর ঢোকেনি। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে শহরের হোটেলগুলো বন্ধ থাকায় কুকুরের খাবার সংকট তৈরি হয়েছে। তাই পাঁচটি নেড়ি কুকুর চিড়িয়াখানায় ঢুকে পড়ে। বেড়া থাকলেও কুকুরগুলো হরিণের শেডে ঢুকে পড়ে আক্রমণ করে চারটি হরিণ খেয়ে ফেলে।

সমর কুমার পাল বলেন, আমরা ধারণা করছি, ক্ষুধার্ত কুকুরগুলো প্রথমে বাচ্চাগুলোকে আক্রমণ করেছিল। তাকে বাঁচাতে গিয়েছিল মা হরিণটি। তখন মাসহ হরিণের বাচ্চাগুলোকে আক্রমণ করেছে পাঁচ কুকুর। ভোরে চিড়িয়াখানার কর্মীরা দেখেন হরিণের শেডে পাঁচটি কুকুর। চারটি হরিণের ক্ষতবিক্ষত দেহও পড়ে ছিল। পরে কুকুরগুলোকে বের করে দেওয়া হয়। হরিণগুলোর দেহের অবশিষ্টাংশ মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়েছে।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জানান, এ ঘটনায় চিড়িয়াখানার তত্ত্বাবধায়ককে একটি লিখিত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। দু-একদিনের মধ্যেই তিনি প্রতিবেদন দেবেন। এরপর এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি হবে, নাকি অন্য কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। রাজশাহী/তানজিমুল/রফিক