সারা বাংলা

টাঙ্গাইল লকডাউন

করোনাভাইরাস (কোভিট-১৯) সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে আজ (৭ এপ্রিল) মঙ্গলবার বিকেল চারটা থেকে টাঙ্গাইল জেলাকে লকডাউন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন।

লকডাউন চলাকালে জেলা ও উপজেলাগুলোর সব সীমান্তবর্তী প্রবেশ পথসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে বিশেষ চেকপোস্ট বসানো হবে।

একইসঙ্গে টাঙ্গাইল পৌর এলাকার চারপাশে চেকপোস্ট বসানো হবে। যাতে শহরে বা জেলায় গণপরিবহনসহ কোনো ব্যক্তি প্রবেশ করতে না পারে। আবার কেউ যেন বাইরেও যেতে না পারে।

মঙ্গলবার (৭ মার্চ) দুপরের দিকে জেলা সার্কিট হাউজে এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

জেলা প্রশাসক মো. শহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে আয়োজিত সভায় অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন- জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান খান ফারুক, টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনের সাংসদ মো. ছানোয়ার হোসেন, সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি লে. কর্নেল মোহাম্মদ সোহেল রানা, পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায়, সিভিল সার্জন ডা. মো. ওয়াহীদুজ্জামান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মোশারফ হোসেন খান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শহীদ উল্লাহ, পৌর মেয়র জামিলুর রহমান মিরন, টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবে সভাপতি জাফর আহমেদ প্রমুখ।

সভা শেষে জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘জেলায় করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে আজ জেলা সার্কিট হাউজে বিভিন্ন প্রশাসনিক প্রধানদের সাথে নিয়ে জরুরি বৈঠক করা হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমরা আজ ৭ এপ্রিল মঙ্গলবার বিকেল ৪টা থেকে টাঙ্গাইল জেলাকে লকডাউন করে দিচ্ছি।

‘অন‌্যান‌্য জেলার সাথে টাঙ্গাইলের যে কানেক্টিং পয়েন্ট, আমরা সেখানে চেকপোস্ট বসিয়ে লক করে দেবো। শুধুমাত্র রোগী, অ‌্যাম্বুলেন্স, জরুরি সেবা ছাড়া কোনো লোক আসা যাওয়া করতে পারবে না। কোনো গাড়ি আসা যাওয়া করতে পারবে না। অন্য সব জেলার সাথে আমাদের যোগাযোগ ডিসকানেক্ট হয়ে যাবে।”

তিনি আরও বলেন, ‘‘আপনারা জানেন, দক্ষিণে আমাদের গাজীপুর ও উত্তরে জামালপুর জেলা ইতোমধ্যেই করোনা ইফেক্টেড।  আমরা টাঙ্গাইলবাসী মাঝখানে পড়ে আছি। সেজন্য জেলাবাসীর নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা এই ব্যবস্থা নিয়েছি। এছাড়াও জেলার ইন্টারনাল যানবাহনগুলোও বন্ধ করে দিচ্ছি।

‘হাটগুলো সংক্ষিপ্ত সময় কোলা থাকবে। শুধুমাত্র নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান ছাড়া অন্য দোকানগুলো যেন বন্ধ থাকে সে ব‌্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে বিকেল ৫টার পর ফার্মেসি ছাড়া অন্য দোকানও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আইনশৃংঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে মিলে আমরাও তদারকি করব।”

তিনি বলেন, ‘টাঙ্গাইল রাজধানীর সাথে উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার। যেহেতু টাঙ্গাইলের উপর দিয়েই উত্তরবঙ্গে যাতায়াত করতে হয়, তাই ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু হাইওয়ে বন্ধ থাকবে না। শুধু হাইওয়ে থেকে টাঙ্গাইল শহরে ঢোকার প্রবেশ পথ বন্ধ থাকবে।’

সভা শেষে শহরের ব্যস্ততম পার্কবাজার পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক ও অন্যান্যরা। এসময় বাজারে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে পার্শ্ববর্তী ঈদগাহ ময়দানে কাঁচা বাজার স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যবস্থা নেবে বলেও জানান জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল ইসলাম।

এর আগে গতকাল সোমবার (৬ এপ্রিল) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সভাপতি অ‌্যাডভোকেট জাফর আহমেদ তার ব্যক্তিগত প্রোফাইলে একটি স্ট্যাটাস দেন।

‘টাঙ্গাইলের ডিসি এসপিকে বলছি’ শিরোনামের সেই স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন- ‘‘টাঙ্গাইল জেলায় এখন পর্যন্ত করোনা পজেটিভ ও সনাক্ত না হওয়ায় আল্লাহর রহমতে আমরা ভালো আছি। এ অবস্থায় টাঙ্গাইল শহরসহ জেলাবাসীদের রক্ষার জন্য টাঙ্গাইলের জনবান্ধব জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল ইসলাম ও দক্ষ পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় বিপিএমকে টাঙ্গাইল শহরবাসীর পক্ষ থেকে বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি, এখনই শহরের সব প্রবেশ মুখ বন্ধ করে দেওয়া হোক। যাতে কেউ জরুরি প্রয়োজন ছাড়া শহরে প্রবেশ করতে না পারে ও শহর থেকে বের হতে না পারে।

‘সেজন্য সব প্রবেশ মুখে পুলিশ সেনাবাহিনী ও র‌্যাবের সমন্বয়ে ২৪ ঘণ্টার চেকপোস্ট স্থাপন করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। একইসঙ্গে শহরের প্রধান প্রধান কাঁচা বাজারগুলোতে সামাজিক দূরত্ব লঙ্ঘণ করে প্রতিনিয়তই মানুষের ভিড় লক্ষ‌্য করা যাচ্ছে। প্রয়োজনীয় কিছু যানবাহন ছাড়াও লোকজন বিভিন্ন মোড়ে আড্ডা দিচ্ছে ও চলাফেলা করছে। তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানাচ্ছি।

‘সব উপজেলা পর্যায়েও একই ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দাবি জানাচ্ছি। যাতে করে আপনাদের সুযোগ্য নেতৃত্বে টাঙ্গাইলের ৪০ লক্ষ মানুষ সুরক্ষা পেতে পারে।” 

প্রেসক্লাব সভাপতির এমন আহ্বানের পর আজ মঙ্গলবার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে টাঙ্গাইল লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো।

শাহরিয়ার সিফাত/সনি