সারা বাংলা

সেপটিক ট্যাংকের ওপর জীবন কাটছে বৃদ্ধ রাহেলার

অশীতিপর বৃদ্ধ রাহেলা বেওয়ার জীবন কাটছে ল্যাট্রিনের সেপটিক ট্যাংকের ওপর নির্মাণ করা টিনের ঝুপড়ি ঘরে।

সেই ঘরের চাল ঠিক নেই। ঠিক নেই পাশের বেড়াও। চালের নিচের কোনো অংশ আবার ফাঁকা। যেন রোদ, বৃষ্টি আর ঝড়কে সাদরে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য ঘটা করে এই আয়োজন। ঘরের ভিতরে নেই শোবার চকি বা কোনো পাটাতন। সেপটিক ট্যাংকের ঢালাই করা অংশের ওপর কোনোরকম বিছানা পেতেছেন রাহেলা বেওয়া। রাতে ইঁদুর আর পোকামাকরের সঙ্গে পালা করে ঘুমান তিনি।

বলছিলাম জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার জামুহালি গ্রামের ৯৩ বছর বয়সের নি:সঙ্গ বিধবা রাহেলা বেওয়ার কথা। বয়সের ভারে ন্যুয়ে পড়েছেন তিনি। ঠিকমতো হাঁটাচলা করতে পারেন না। গুছিয়ে কোনো কথা বলতেও পারেন না। এই বয়সে যেখানে নাতি-পুতিদের নিয়ে আনন্দে আল্লাহকে ডেকে দিন পার করার কথা সেখানে তাকে এখনো জীবন সংগ্রামের কথা ভেবে দিন পার করতে হয়। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে ল্যাট্রিনের সেপটিক ট্যাংকের ওপর তার জীবন থমকে গেছে।

রাহেলা বেওয়ার স্বামী মাক্কেছ আলী মারা গেছেন অনেক আগে। একমাত্র কন্যা সন্তানের বিয়ে দিয়েছেন তিনি। সেই মেয়েরও আয় অবস্থা তেমন সঙ্গতিপূর্ণ না হওয়াতে তিনি মায়ের দেখাশোনা করতে পারেন না। সেই থেকে সহায় সম্বলহীন রাহেলার জীবন কাটে অযত্ন আর অবহেলায়। বেঁচে থাকার মত এক শতক জায়গাও নেই তার। মোশাররফ নামের গ্রাম সম্পর্কের এক ভাই দয়া পরবশ হয়ে তাকে ঠাঁই দিয়েছেন এখানে। যার অন্য পাশে গরু লালন পালন করেন তিনি। আর বিধবা ভাতার বিনিময়ে খাবারের দায়িত্ব নিয়েছেন চাচাতো ভাইয়ের মেয়ে রেশমা বেগম।

গ্রামের ইউপি সদস্যের করে দেওয়া বিধবা ভাতাই এখন তার বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। নিজস্ব জায়গা না থাকায় সরকারি অনুদানে বাড়ি পাওয়ার সুযোগও জোটেনি তার কপালে।  

বৃদ্ধ রাহেলা বেওয়া বলেন, ‘আমার কেউ নেই বাবা। আমি একা থাকি এখানে। সবসময় গন্ধ লাগে। পাশেই গরু থাকে। সেখান থেকেও কটু গন্ধ আসে। খুবই কষ্ট। আল্লাহ আমার মরণ দেয় না। মরে গেলে এই কষ্ট থেকে আমার মুক্তি মিলবে।’

তিন বেলা অন্নের জোগান দেওয়া ভাইঝি রেশমা বেগম বলেন, ‘তাকে দেখাশুনা বা খোঁজ খবর নেওয়ার মত আপন কেউ নেই। বাড়ির বাহিরে ল্যাট্রিনের সেপটিক ট্যাংকের ওপর অস্থায়ীভাবে টিনের বেড়া দিয়ে তাকে রাখা হয়েছে। সহায় সম্বল বলতে তার কিছুই নেই। একমাত্র মেয়ের বিয়েও হয়েছে হতদরিদ্র পরিবারে। তিন বেলা খাওয়াসহ আমরা তার দেখাশুনা করি। বয়সের কারণে সবকিছু গুছিয়ে বলতেও পারে না।’

ওই গ্রামের আজিজুল হক বলেন, ‘বৃদ্ধ রাহেলা বেওয়াকে সহযোগিতার কেউ নেই। জায়গা না থাকায় সরকারিভাবে বাড়ি পাওয়ারও সুযোগ নেই তার। এই মুহূর্তে জনপ্রতিনিধি অথবা বিত্তবানদের কৃপা দৃষ্টিই পারে তার দুর্বিসহ জীবনের অবসান ঘটাতে।’

ক্ষেতলাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরাফাত রহমান রহমান জানান, জামুহালি গ্রামের ৯৩ বছর বয়সের বিধবা রাহেলা বেওয়া ল্যাট্রিনের সেপটিক ট্যাংকের ওপর নির্মাণ করা টিনের ঝুপড়ি ঘরে দুর্বিসহ জীবন যাপন করছেন—এই বিষয়টি জেনেছি। এ বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। সরকারিভাবে দুই শতক জায়গা পেলে রাহেলা বেগমের বাড়ি করে দেওয়া হবে। 

 

জয়পুরহাট/বুলাকী